গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে। আসামি পক্ষের আবেদনে আজ বৃহস্পতিবার (২ মে) ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আরাফাত হোসেন শুনানি পিছিয়ে ২ জুন করে নতুন তারিখ দেন।
এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানোর জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। শুননিতে তিনি বলেন, এ মামলা এবং আদেশর প্রত্যায়িত অনুলিপি তাঁরা পাননি।
পেলে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হবে। অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানো হোক।
তখন বিচারক বলেন, মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করতে না পারা শুনানি পেছানোর যৌক্তিক কারণ হতে পারে না। শুনানির প্রস্তুতি নেই বলে সময় চাইলে সেটা মঞ্জুর করা যেতে পারে।
এসময় আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রস্তুতির জন্য শুনানি পেছানোর আরজি জানালে আদালত শুনানি পিছিয়ে আদেশ দেন।
ইউনূসসহ এ মামলার আসামিরা যে শর্তে জামিনে ছিলেন। সে সব শর্তেই তাদের জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, “আমরা এখনো এ মামলার প্রত্যায়িত অনুলিপি পাইনি।
তাছাড়া মামলাটি ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ অদালত থেকে এ আদালতে স্থানান্তরের আদেশের প্রত্যায়িত অনুলিপিও আমরা পাইনি। পেলে মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করা হবে। এসব কারণ উল্লেখ করে সময় চেয়ে আবেদন করেছিলাম। আদালত ২ জুন শুনানির তারিখ রেখেছেন। আর আগের শর্তেই আসামিদের জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন আদালত।
”
আজ বৃহস্পতিবার (২ মে) অভিযোগ গঠনের শুনানিতে অংশ নিতে বেলা সোয়া ১১টায় বিশেষ জজ আদালত-৪ এ হাজির হন ড. ইউনূস। তিনি ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন, গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম এবং গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান।
গত ২ এপ্রিল এ মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে শুনানির জন্য বিশেষ জজ আদালত-৪ এ পাঠিয়ে দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।
গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। কমিশনের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ২০২৩ সালের ৩০ মে এই মামলা দায়ের করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধভাবে স্থানান্তর করছেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।
এজাহারে বলা হয়, ইউনূস ও নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খোলা হয়। তবে ব্যাংকে হিসাব খোলা হয় এক দিন আগেই। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট চুক্তি হয় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল।
সেটেলমেন্ট চুক্তিতেও ৮ মে ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। ‘ভুয়া’ সেটেলমেন্ট চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকমের ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় স্থানান্তর করা হয় ২০২২ সালের ১০ মে।
পরে ২২ জুন অনুষ্ঠিত ১০৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।
অন্যদিকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামীয় ডাচ বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাব থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়।
কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের পূর্বেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামান, মাইনুল ইসলাম ও ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে ৩ কোটি টাকা করে স্থানান্তর করা হয়।
একইভাবে আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে ৪ কোটি টাকা ও দি সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে ৫ কোটি টাকা এবং আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ ও আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ হিসাবে ৬ কোটি স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না।
দুদকের রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেটেলমেন্ট চুক্তির শর্ত লঙ্ঘণ করে ‘অসৎ উদ্দেশে জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে উক্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
এটি দণ্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, যে কারণে আসামি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন