জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত উপভোগের মানসিকতা থাকতে হবে! 

প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মিল-অমিল ঘটে বলেই জীবন অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ওঠে।

রাজু আহমেদ।  প্রাবন্ধিক। |

সময় খারাপ যাচ্ছে? যেতে দিন। সে সময় ফুরিয়ে গেলেই ভালো সময় আসবে। খারাপ সময়, প্রতিকূলতার সময় কিংবা  দুঃখের সময় ধীরে ধীরে খাটো হয়। ধৈর্য রাখতে হবে। আশাবাদী মানুষগুলোর দুঃসময় দীর্ঘ মেয়াদের হয় না। বুক চিতিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে সে জয়ী হয়। রাত্রি ঘনালে তবেই ভোরের আলো নিকটবর্তী হয়। সুতরাং অসময়েও শোকর করা উচিত। আরও বেশি আশা বাঁচিয়ে রাখা উচিত। আঁধারভেদী আলোর রেখা পুবাকাশে উঠলো বলে। জীবনের ঝড়-ঝাপটা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। মহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মানুষ দুঃখ-সুখের সমুদ্র পাড়ি দিয়েই পূর্ণতার ঘাটে তরণী ভেড়ায়। 

 

অতিরিক্ত বিচলিত স্বভাবের মানুষ অল্পতেই হাউকাউ বাঁধিয়ে চলে। তাদের হাপিত্যেশ সুসময়কে দূরবর্তী করে। দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যারা না গেছে তারা কখনোই সুসময়ের মূল্য বুঝবে না এবং মূল্যায়ণ করতে পারবে না। চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে, ভাগ্য আনুকুল্যে থাকছে না কিংবা ব্যর্থতার পারদ বেড়ে যাচ্ছে বলে যারা অল্পতেই মুষড়ে পড়ে তারা সফলতার গল্প লিখতে পারে না। জীবনের পদে পদে যার সীমাহীন অভিযোগ সে কখনোই নিজের অবস্থা ও অবস্থানে সন্তুষ্ট হবে না। তিক্ত হলেও সত্য, অকৃতজ্ঞ মানুষদেরকে স্রষ্টাও অপছন্দের তালিকায় রাখেন। 

 

যা প্রত্যাশা করছেন তার সবকিছু যদি জুটে যায় তবে জীবন পানসে হয়ে উঠবে। প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মিল-অমিল ঘটে বলেই জীবন অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ওঠে। যে মহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মানুষ এখানে আছে সেখানে কীসে কার কল্যাণ কিংবা কে, কীভাবে পরীক্ষিত হবে তা পবিত্র সত্ত্বার ইচ্ছাধীন। মানুষ চেষ্টার অতিরিক্ত কোন সাধ্য রাখে না। তিনিই রব যিনি কষ্টের পরে  প্রশান্তি প্রদান করেন। সুতরাং অল্পে হতাশ হলে, জীবন নিয়ে বিকল্প চিন্তা করলে তবে একজীবন শোকে শোকে যাবে আর ঘাটে ঘাটে দুঃখ বাড়বে। 

 

জীবনেও ঋতু পরিবর্তনের মত বৈচিত্র ঘটে। সুখ-দুঃখ, প্রশান্তি-কষ্ট খুব পাশাপাশি থাকে। আমরা চেষ্টা করতে পারি কিন্তু নিজেদের সন্তুষ্ট করার পূর্ণতম শক্তি-সাধ্য রাখি না। কেবল আমি-ই আমার দুঃখ-সুখের একমাত্র কারণ নই। আরও অনেকগুলো অনুষঙ্গ আমার সাথে জড়িয়ে থাকে এবং অনেকগুলো অনুঘটক জীবনকে প্রভাবিত করে। সুতরাং সব অনুষঙ্গ যখন সরলরেখায় মিলিত হয় তখন জীবনকে আমরা যেভাবে চাই, জীবনও আমাদের কাছে সেভাবে ধরা দেয়। আকাশকুসুম কল্পনার বাইরেও নিরেট বাস্তবতা আছে। সে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে তবেই আমাদের পথ চলতে হয়, স্বপ্ন দেখতে হয়। 

 

জীবনে আঁধার আসে বলে আমরা আলোর প্রত্যাশী হতে শিখি। দুঃখ শেষে যে সুখের দিন আসে সেটার আবেদন অন্যরকম মূল্যবান থাকে। ভালো কাজ, সত্য কথা কিংবা বিশ্বাস-ভরসা অটুট রাখার মাধ্যমেই সুখের সড়ক প্রশস্ত হয়। অল্পে তুষ্ট যে আত্মা সে সাধারণের মাঝেও প্রশান্তি অনুভব করে। সীমাবদ্ধতার মাঝেও মানিয়ে নিতে পারে! যে নিজের ভুল দেখে না, সব দোষ অন্যের দিকে ঠেলে সে এলেবেলে সময়ের ঘাড়ে চাপে। ত্যাগের মহান আদর্শে নিজেকে রঞ্জিত করতে না পারলে মহৎপ্রাণের ধারক হওয়া যায় না। জীবন যখন যেভাবে আসবে তখন তাকে সেভাবেই বরণ করতে হবে। 

 

সমস্যা থাকতেই পারে তবে তা সমাধান করে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। যে হাল ছেড়ে দেয় সে হারিয়ে যায়, পথ হারায়ে ফেলে। জীবন কাউকে জোর করে কিছু দিতে যায় না। জীবনের এই যে দুঃখ তার অনেকগুলির পিছনে দুঃখী নিজেই প্রকটভাবে দায়ী। আবার জীবনের সুখ-ছন্দে সে নিজেই আপনা কড়চার রচিয়তা। অতীতে যা ফেলে এসেছি, বর্তমানে যা ছেড়ে যাচ্ছি কিংবা আঁকড়ে থাকছি সেগুলোর যোজন-বিয়োজনের ফলাফলের গোটাটাই ব্যক্তি! স্রষ্টার কোন অবিচার নাই তবে কর্মফলের অনেকখানি জীবদ্দশায় ফিরে ফিরে আসে! আমরা কপালের দোষ যতখানি দেই, কর্মের দোষ অতখানি দিতে শিখিনি কিংবা দিতে চাই না। তাইতো জীবন আমাদের হাতে ধরে ধরে বাস্তবতা শেখায়!

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন