করোনা পরীক্ষা না করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরুর দিন (২ মে) জাতীয় সংসদে প্রবেশে বাঁধা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকী।
রোববার (৫ মে) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তাকে সংসদে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় স্পিকার ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া মোবাইলে মেসেজ দিয়ে বা ফোন করে করোনা পরীক্ষার বিষয়টি জানানোর দায়িত্ব ছিল যাদের, তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান তিনি।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, গত ২ মে আমি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। ওই দিন আমি সংসদ এলাকায় এসেছিলাম, তখন দ্বাররক্ষীরা বলেন, প্রবেশ করতে গেলে কোভিটের সার্টিফিকেট দিতে হবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- আমাকে জানানোই হয়নি সংসদে প্রবেশ করতে হলে কোভিটের সার্টিফিকেট লাগবে।
‘এতে আমি মনে করি ব্যক্তি লতিফ সিদ্দিকীকে নয়, আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কেননা আমি সংসদে অংশ নিতে পারিনি এবং আপনার নেতৃত্বে যে কমিটি আছে সে কমিটিতে আমি অংশ নিতে পারিনি। তাই আমার দাবি, এই দায়িত্বে যারা আছেন তারা যথারীতি এই দায়িত্ব পালন করেননি।’ বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাবেক এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এই আদেশ কে বা কারা জারি করলেন? সংসদ সচিবালয় বা স্পিকার আদেশ তো দেবেন, তবে যাদের ওপর এই আদেশ প্রতিপালনের দায়িত্ব তারা যথারীতি সেই বিষয়টি যাদের ওপর বর্তাবে তাদের সঠিকভাবে জ্ঞাত করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করেনি।
তিনি স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, আমি তন্য তন্য করে আমার সেলফোন খুঁজে দেখেছি, আমার সেলফোনে কোনো বার্তা যায়নি। কোনো বার্তা গেলো না, স্পিকারের দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি গেলো না, তারপরও সংসদে প্রবেশ থেকে আমাকে বিরত রাখা হলো, আমার অধীকার ভঙ্গ হয়েছে। তবে আমি বিচার চাই না, ভবিষ্যতে এ রকম অপমানজনক ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে আপনার মাধ্যমে সংসদে যারা রাষ্ট্র কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত বা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন, এটাই প্রত্যাশা করছি।
স্পিকারকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, এই সংসদে সংসদ কর্মকর্তারা যে পরিমাণ দায়িত্বে অবহেলা করেন, যে ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা জড়িত সেখানেই যদি এ ধরনের গাফিলতি হয়, তাহলে রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব যাদের হাতে তারা কী পরিমাণ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে আপনি একটু বিবেচনা করে দেখবেন।
বিজ্ঞাপন
লতিফ সিদ্দিকী এসময় বলেন, এখন যান্ত্রিক যুগ, আমি যে ফোন বা সিম ব্যবহার করি, সেই কোম্পনিতে পরীক্ষা করলে জানতে পারবেন মেসেজটি আমার সেলফোনে এসেছিল কি না। যদি এসে থাকে তাহলে আমি সংসদে ক্ষমতা প্রার্থনা করবো।
এরপর তিনি পরিবেশ নিয়ে সারা পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের দেশের পরিবেশ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। টাঙ্গাইলে পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে শিশা বের করার একটি কারখানার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কারখানার আশপাশের বাড়ির টিন পুড়ে যাচ্ছে, গাছপালা পুড়ে যাচ্ছে। শস্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের এই কারখানা করার অনুমোদন দেওয়ায় তিনি এটাকে লজ্জার ও দুঃখের বলে উল্লেখ করেন। পরিবেশ দূষণের এই মারাত্মক বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে সমাধান দেওয়ার অনুরোধ জানান লতিফ সিদ্দিকী।
পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী লতিফ সিদ্দিকীর উদ্দেশে বলেন, আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি বিষয়টি আমরা সে দিনই জেনেছি, আপনার প্রবেশের ক্ষেত্রে কোভিট সার্টিফিকেট দেখতে চাওয়া হয়েছিল এবং সেটা না থাকার কারণে আপনি ভেতরে আসতে পারেননি। বিষয়টি খোঁজ করার পরে সংসদ সচিবালয় থেকে আমাকে অবহিত করা হয়েছে গত ২৫ এপ্রিল বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে সব সংসদ সদস্য বরাবর একটি বার্তা বা মেসেজ পাঠানো হয়েছিল কোভিট পরীক্ষা করার বিষয়ে।
‘সেখানে যে সিস্টেম তাতে দেখা গেছে সব এমপির মোবাইলে তা সেন্ট হয়েছে। কিন্তু আপনি বলেছেন, আপনার সেলফোনে এ ধরনের কোনো মেসেজ আপনি পাননি। আমার মনে হয় আপনাদের (এমপিদের) যে মোবাইল নম্বর আমাদের সংসদ সচিবালয়ে আছে সেটা পুনরায় চেক করতে হবে, ঠিক জায়গায় মেসেজটি প্রেরণ করা হচ্ছে কি না যেন তা নিশ্চিত হয়।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন