জার্মানির দলীয় রাজনীতি এতকাল যথেষ্ট তর্ক-বিতর্ক ও সংঘাতের মুখ দেখলেও সহিংসতার কবল থেকে সার্বিকভাবে মুক্ত ছিল। কিন্তু কয়েকটি সাম্প্রতিক ঘটনা জার্মান রাজনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে আগামী জুন মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় প্রার্থী ও নেতারা অভূতপূর্ব আক্রোশের শিকার হওয়ায় দেশজুড়ে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে পূর্বের ড্রেসডেন শহরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিদায়ী প্রতিনিধি মাটিয়াস একের ওপর নৃশংস হামলার পর দল-মত-নির্বিশেষে নিন্দার ঝড় দেখা যাচ্ছে।
রবিবার সন্ধ্যায় হাজার হাজার মানুষ এই হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। ড্রেসডেন শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রায় তিন হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের এসপিডি দলের নেতা মাটিয়াস একে শুক্রবার রাতে নির্বাচনি পোস্টার লাগানোর সময়ে চার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তার ওপর হামলা চালায়। চরম আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর অস্ত্রোপচার করাতে হয়।
শোলজসহ একাধিক জার্মান রাজনীতিক তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। শোলজ এমন হিংসাত্মক ঘটনাকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেন।
এদিকে স্থানীয় সময় রবিবার ভোরে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। পুলিশ সূত্র অনুযায়ী, হামলার কথা স্বীকার করলেও সে এর কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু বলেনি।
স্যাক্সনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরমিন শুস্টার জানিয়েছেন, বাকি তিন হামলাকারীর সন্ধান চলছে। তাদের বয়স ১৭ থেকে ২০ বলে অনুমান করা হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলের কাছেই সবুজ দলের এক কর্মীও পোস্টার লাগানোর সময় আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। একের ওপর হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলাকারীরা সম্ভবত চরম দক্ষিণপন্থী শিবিরের অংশ।
গত দুই সপ্তাহে জার্মানিতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর হামলা বা তাঁদের বিরুদ্ধে বৈরি আচরণের একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
জার্মানির পশ্চিমে এসেন শহরে দুই নেতা প্রচারের সময়ে গালিগালাজের মুখে পড়েছিলেন। সবুজ দলের এক নেতা পূর্বের এক শহরে বিক্ষোভকারীদের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দুই হাজার ৭৯০টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। ২০২১ সালে সেই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮০৬। চলতি বছর সেই সংখ্যা আরো অনেক বেড়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার চলতি সপ্তাহে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক জরুরি বৈঠক ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।
জার্মানির এসপিডি দলের নেতা সাসকিয়া এসকেন শুক্রবারের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে গণ্য না করার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর মতে, কোনো শূন্যতার মাঝে এমন সহিংসতার ইচ্ছা জন্মায়নি। তিনি বিশেষ করে গণতন্ত্রের প্রতি চরম দক্ষিণপন্থী দল ও সেই শিবিরের কট্টরপন্থীদের ঘৃণাকে এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেন। সাংবিধানিক রাষ্ট্র হিসেবে তিনি এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের অঙ্গীকার করেন। সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন