কারো অকল্যাণ চাইলে, কাউকে বদদোয়া করলে কিংবা কারো ক্ষতি কামনা করলে সেটা যদি অহেতুক-অযৌক্তিক হয় তবে তা ........
রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক। |
কায়মনোবাক্যে অন্যের অমঙ্গল চাচ্ছেন? কারো উন্নতি-প্রগতি আপনার চক্ষুশূল? কাউকে ভালো থাকতে দেখলে মন খারাপ হয়? অপরের ভালো চাকুরি সহ্য হয় না? বন্ধু-সহকর্মীর অর্থ-কড়ি আছে এমন খবর শুনলে কিংবা দেখলে দুর্ভাবনায় ঘুম দূরীভূত হয়? প্রতিবেশীর সুখ দেখলে অন্তরে অশান্তি অনুভব করেন? নিজের কল্যাণ কামনা ভুলে গিয়ে অন্যের অকল্যাণ কামনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন?
নিজের উন্নতির চেষ্টা না করে পরের উন্নতিতে বাঁধা সৃষ্টি করেন? এতো এতো চেষ্টার পরেও মনোষ্কামনা পূর্ণ হয় না? অপরের চরম পরিণতি দেখে আপনি পুলক অনুভব করবেন- এমন আশায় দিন গণনা করছেন অথচ আপনার চাওয়ামত কিছুই হচ্ছে না। বরং যাদের ক্ষতি কামনা করছেন তারা উন্নতির পানে তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, দিন বদলের নিয়ত স্লোগানে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে এবং আপনার মানসিক যন্ত্রণা দিন দিন বেড়েই চলছে। যদি ঘটনা এমন হয় তবে নিশ্চিতভাবে জানুন, দুনিয়ার শৃঙ্খল, ঐশ্বরিক রীতিনীতি সঠিক পথেই এগুচ্ছে।
কারো অকল্যাণ চাইলে, কাউকে বদদোয়া করলে কিংবা কারো ক্ষতি কামনা করলে সেটা যদি অহেতুক-অযৌক্তিক হয় তবে তা প্রার্থিত ব্যক্তির দিকেই প্রত্যাবর্তণ করে এবং যার অমঙ্গল কামনা করা হয় সেটা তার কল্যাণের ওসিলা হয়! হিংসা কিংবা অহংকারের বশবর্তী হয়ে কিংবা মানসিক দীনতা পোষণ করে কারো ক্ষতি চাইলে ক্ষতি তো হয়-ই না বরং তা তার উপকারে বদলে যায়। যার অশান্তি কামনা করছেন, তিনি যদি অশান্তির কোন কাজ না করেন তবে তার জন্য আপনার চাওয়া উল্টো ফলাবর্তে বদলে যায়। কখনো কখনো কোন ব্যক্তির নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতায় উন্নতি-অগ্রগতির পরম শিখরে পৌঁছাতে না পারলেও অপরের কুদৃষ্টি এবং অসৎ প্রার্থণায় তাকে ঐশ্বরিকভাবে পুরস্কৃত করা হয়।
কেউ যখন কারো মঙ্গল প্রার্থণা করে, অপরের উন্নতি-অগ্রগতিতে খুশি হয় কিংবা কেউ সুখে থাকলে তা তাকে আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করায় তখন অন্যদের যতখানি মঙ্গল নিশ্চিত হয়, তারও অনুরূপ কল্যাণ অর্জিত হয়। অপরের জন্য কল্যাণকামী কখনোই অকল্যাণে পতিত হয় না। আপনি আপনার আশেপাশে দেখবেন, যারা প্রকৃতার্থে মানুষ তারা নিজের অর্জনের মতই অন্যদের অর্জনকে সম্মান জানায়। কারো দক্ষতার প্রশংসা করতে কখনোই কৃপণতা করে না। কারো প্রাপ্তিকে খাটো করে দেখে না। কেউ সুখে থাকলে তাদেরকে শুভকামনা জানাতে এগিয়ে যায়। কেউ বিপদে পড়লে তার পাশে দাঁড়ায়। নিজের জন্য যা মঙ্গলময় মনে করে অন্যকেও অনুরূপ পরামর্শ দেয়। তাদের মুখের অভিব্যাক্তি এবং মনের বিশ্বাস দু’রকমের হয় না। যারা অন্যের অগ্রগতি-উন্নতি দেখে বিচলিত হয় না তারা নিঃসন্দেহে মহৎপ্রাণা সহজ-সরল মানুষ। ভেতরের বিশ্বাস এবং বাহিরের প্রকাশে যারা পর্দা রাখে না তাদেরকে কোথাও ঠেকে থাকতে হয় না। ঠকতে হয় কি-না সে বিতর্ক অন্যদিন!
স্থায়ীভাবে ও সমাজের চোখে সফল মানুষদেরকে যারা সহ্য করতে পারে তাদের ব্যর্থতাও সাময়িক সময়ের জন্য। তারা সফল হবেই। যারা অপরের জন্য গোপনে প্রার্থণা করেছে তাদের জন্যেও গোপনে কেউ না কেউ প্রার্থণা করে। যদি প্রার্থণা নাও করে তবে তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের নামে ও কর্মে যে প্রশংসা হয় সেটাই তাদের জন্য সর্বোত্তম দোয়া। তাছাড়াও যিনি দুনিয়ার রব তিনি অবিচারকে প্রশ্রয় দেন না বরং সর্বত্রই ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন। যিনি কাউকে ঠকায়নি তাকে তিনি এমনভাবে জিতিয়ে দেন যা বিজয়ীর আশাতেও ছিল না। কেউ যদি কৃতজ্ঞ থাকে, কেউ যদি বিনীত হয় এবং অন্যের অধিকার-প্রাপ্য কুক্ষিগত না করে তবে তার প্রাপ্য প্রাপ্তির হিসেবে জমা হবেই।
নিজের উপকার করতে চাইলৈ কারো অনুপস্থিতিতে তার নামে নিন্দার বদলে প্রশংসা করুন, সমালোচনার অভ্যাস চিরতরে বন্ধ করুন। কারো উপকার করতে চাইলে তাকে গোপনে সাহায্য করুন। সাহায্য কেবল অর্থ দিয়ে নয় বরং মানসিক সাপোর্ট দিয়ে, ভালো পরামর্শ দিয়ে কিংবা বিশ্বাস অটুট রেখেও করা যায় এবং এটাই উপকারের উত্তমরূপ। কারো অকল্যাণ কামনার বদলে তার কল্যাণ কামনা করলে সেটার রেশ ব্যক্তিজীবনে আদর্শিক প্রভাব ফেলবে। যে মানুষ সৎ চিন্তা করতে পারে, স্বার্থপরের চেয়ে পরার্থপর হতে পারে তার জীবনটা আর দশটা সাধারণ জীবনের থেকে অনন্য রকমের অসাধারণ হয়। অহেতুক কাউকে গালি দিয়ে, কারো নামে দুর্নাম রটালে তিনি যদি তার জন্য অনুপযুক্ত হন তবে তা গালিদাতার দিকেই ফিরে আসবে এবং ঘিরে ধরবে! কারো জন্য অমঙ্গলের ফাঁদপাতার পরিণামও অনুরূপ। ভেতরে একটি সুন্দর মনকে লালন করতে পারলে সমগ্র দুনিয়াটা সুন্দর হয়ে উঠবে। সেই শুভের প্রত্যাশায়- আজ এবং আগামী।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন