ভারতে লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট হচ্ছে। সোমবার (১৩ মে) পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর এবং বীরভূমে ভোট হচ্ছে। চতুর্থ দফায় এসব রাজ্যে মোট ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ১৭ জন। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ৭১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৯ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২৮২ জন।
পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর কেন্দ্র থেকে সাবেক কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী কংগ্রেস প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরী এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান, কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র, আসানসোল কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা, বীরভূম কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী শতাব্দী রায়, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ লড়াই করছেন।
বহরমপুর কেন্দ্রটি বরাবরই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। ১৯৯৯ সালে থেকে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়ে আসছেন কংগ্রেস প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরী। এবার তার প্রধান প্রতিপক্ষ এই প্রথম নির্বাচনী ময়দানে লড়াই করতে যাওয়া তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে বিজেপির ড. নির্মল কুমার সাহাও।
রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার এবং তৃণমূলের প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারী। নির্বাচনের আগেই বিজেপির বিধায়ক পদ ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছিলেন মুকুটমণি। এবার ওই কেন্দ্রে তাকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল এবং সিপিআইএম প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন অলোকেশ দাস।
বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রটি গঠন হওয়ার পর থেকেই প্রতিটি নির্বাচনে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটছে। গত তিনবারের নির্বাচনে সিপিআইএম, তৃণমূল এবং বিজেপি একবার করে নির্বাচনী লড়াইয়ে বাজিমাত করেছে। এবারের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে, বিজেপির প্রার্থী দিলীপ ঘোষ এবং সিপিআইএম প্রার্থী সুকৃতি ঘোষাল।
বর্ধমান-পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ডা: শর্মিলা সরকার, বিজেপির অসীম সরকার এবং সিপিআইএম প্রার্থী হয়েছেন নীরব খাঁ। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী মহুয়া মৈত্র। ২০১৯ সালেও এই কেন্দ্র থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন মহুয়া। গত বছরের শেষদিকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও সে সময় দল তার পাশেই ছিল। ফলে ফের সুবক্তা এবং দাপুটে মহুয়াকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি প্রার্থী রাজমাতা অমৃতা রায়। নির্বাচনের ঠিক আগে গত ২০ মার্চ বিজেপিতে যোগদান করেই টিকিট পান অমৃতা। এই কেন্দ্রে সিপিআইএম-এর প্রার্থী এস.এম সাদি। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে ছিল।
আসানসোল কেন্দ্রেটি ঝাড়খন্ড সীমান্ত কাছে হওয়ায় বহু হিন্দিভাষী মানুষের বসবাস যারা মূলত বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। পরবর্তীকালে দল পরিবর্তন করে তৃণমূলে যোগ দেন এবং তৃণমূলের মন্ত্রী হন তিনি। পরে এই কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয় এবং জয়ী হয় তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। চতুর্থ দফার নির্বাচনে আসানসোল কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন হিন্দি ফিল্মে ‘বিহারী বাবু’ বলে পরিচিত শত্রুঘ্ন সিনহা, বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্রজিৎ সিং আলুওয়ালিয়া, সিপিআইএম প্রার্থী জাহানারা খান।
নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পুরো পশ্চিমবঙ্গের ৮ কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন কেন্দ্রিক যে কোনো অস্থিরতা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকছে কুইক রেসপন্স টিম, ফ্লাইং স্কোয়াড, ভিডিও সার্ভেলেন্স টিম এবং স্ট্যাটিক সার্ভেলেন্স টিমের সদস্যরা।
ভোট শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায়। কোনো রকম বিরতি ছাড়াই ভোট চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ভোট নেওয়া হচ্ছে ইভিএমএ।
ভোট শুরু হতেই বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের নারায়নপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬-১৭ বিজেপির এজেন্টদের ঢুকতে বাঁধা দেওয়া হয়। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে অন্তর্গত বেলডাঙ্গায় মির্জাপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮৫ এবং ৮৬ নম্বর বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
আসানসোল দক্ষিণের বিধানসভায় অন্তর্গত রানীগঞ্জে নতুন এগরায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির কর্মীকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে। পূর্ব বর্ধমানে একই চিত্র। বিজেপির এজেন্টকে হুমকি দিয়ে বুথে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ
উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যেই জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। এদিন সকাল থেকে ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের আলাদা ভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়া জেলার কিছু কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। স্বভাবতই আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে বিএসএফকে। তাই চতুর্থ দফার ভোটকে সামনে রেখে সীমান্তে নাশকতা ঠেকাতে কড়া নজর রাখার পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সম্পূর্ণ সিল করার নির্দেশ দিয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
মোট ৭ দফায় পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি লোকসভা আসনে ভোট নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই তৃতীয় দফার ভোট শেষ হয়েছে। পঞ্চম দফার ভোট হবে আগামী ২০ মে, ষষ্ঠ দফা ২৬ মে এবং সপ্তম ও শেষ দফার ভোট হবে আগামী ১ জুন। ভোট গণনা হবে আগামী ৪ জুন।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন