“৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থানের মহানায়ক ছিলেন শহীদ কর্ণেল আবু তাহের আর খলনায়ক ছিলেন জিয়া”- যুক্তরাজ্য জাসদের ভার্চুয়াল সভায় শিরিন আকতার এমপি

৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানের ৪৫ বছর পুর্তি উপলক্ষে গত ৮ই নভেম্বর (রবিবার ) যুক্তরাজ্য জাসদ আয়োজিত লন্ডনে এক ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সাধারন সম্পাদক, নব্বইয়ের গনঅভ্যুত্থানের সংগ্রামী নেত্রী এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভানেত্রী শিরিন আকতার এমপি তাঁর বক্তব্যে এ কথা বলেন ।তিনি  ৭ই নভেম্বরের সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানের সকল শহীদ এবং অভ্যুত্থানের মহানায়ক কর্ণেল আবু তাহেরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৯৭৫ সালে কিছুসংখ্যক বিপদগামী সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়া এবং পরবর্তিতে তিন জাতীয় নেতাকে জেলে হত্যা করার পর কিছু সংখ্যক উচ্চ বিলাসী সেনা কর্মকর্তারা যখন রাষ্ট ক্ষমতা দখল করার জন্য একে অন্যের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল এবং দেশ ও জনগনকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন দেশ এবং জনগনকে এই  অরাজকতা থেকে মুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক সৈনিক, সেনাবাহিনীর ভিতরের ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্হা’ এবং জাসদ নেতা কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বে ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান সংঘঠিত হয়েছিল। পরবর্তিতে জিয়ার বিশ্বাসঘাতকতার কারনে সেটা ব্যর্থ হয়েছিল। এর পরবর্তিতে ৭ই নভেম্বরের মহানায়ক কর্ণেল তাহেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে একটি প্রহসনের বিচারে ফাঁসি দিয়ে জিয়া হত্যা করেছিল, যা কিছুদিন আগে হাইকোর্টের রায়ে ‘ঠান্ডা মাথায় হত্যা’ হিসাবে প্রমানিত হয়েছিল এবং এই রায়ে কর্ণেল তাহেরকে একজন দেশপ্রেমিক হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল। তিনি আরও বলেন, শহীদ কর্ণেল আবু তাহের ছিলেন সিপাহী জনতার অভ্যুত্থালের মহানায়ক এবং জিয়াউর রহমান ছিলেন খলনায়ক। 
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক শিরীন আকতার এমপি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ৭ই নভেম্বরের সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা ও শহীদ কর্ণেল আবু তাহেরের আত্মবলিদানের মহান ইতিহাসকে ধারন করে জাসদ ঔপনিবেশিক রাষ্ট কাঠামো, পাকিস্হানপন্হার  রাজনীতি,জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা মোকাবেলা করার পাশাপাশি সমানতালে দুর্নীতি ও বৈষম্যের অবসানে সুশাসন ও সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে সংগ্রামের পথে অবিচল আছে।
যুক্তরাজ্য জাসদের উক্ত ভার্চুয়াল সভায় আরও অংশগ্রহন করেন জাসদ স্হায়ী কমিটির সদস্য, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং শহীদ কর্ণেল আবু তাহেরের অনুজ ও ঘনিষ্ট সহচর অধ্যাপক ডক্টর আনোয়ার হোসেন। এছাড়া অংশগ্রহন করেন জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সহ সভাপতি এবং সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি, সাবেক ছাত্রনেতা জননেতা লোকমান আহমদ। 
জাসদ স্হায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডঃ আনোয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতীয় গনতান্ত্রিক বিপ্লব (মুক্তিযুদ্ধ) হয়েছিল, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমরা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করতে পারিনি । এই প্রসঙ্গে তিনি কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি সেটা হতো তবে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে জাসদের ও দরকার হতোনা এবং ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানেরও প্রয়োজন পড়তোনা। অধ্যাপক ডঃ আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, যতই দিন যাচ্ছে ৭ই নভেম্বরের মহানায়ক শহীদ কর্ণেল আবু তাহের একজন মহান বিপ্লবী হিসাবে সুপ্রতিষ্ট হচ্ছেন। আজ বর্তমান প্রজন্মের তরুন-যুবকরা বিপ্লবী কর্ণেল তাহেরকে বিপ্লবের প্রতিক হিসাবে গ্রহন করছে।
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি এবং সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদ তাঁর বক্তব্যে ৭ই নভেম্বরের মহানায়ক কর্ণেল তাহের এবং জাসদের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান ছিল অবৈধ ক্ষমতা দখলও সংবিধান লংঘন, হত্যা-ক্যু- ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অবসানে একটি ঐতিহাসিক মহান ঘটনা। তিনি ৭ই নভেম্বরের সকল ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে জাসদের ৯ দফার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অসাম্প্রদায়িক, সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে জাতিয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।
উক্ত ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য জাসদের সভাপতি বীর মুক্তিযুদ্ধা এডভোকেট হারুনুর রশীদ। তিনি প্রথমেই ৭ই নভেম্বরের মহানায়ক শহীদ কর্ণেল আবু তাহের এবং জাসদের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর স্বগতিক বক্তব্য পেশ করেন। পরে যুক্তরাজ্য জাসদের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আবুল মনসুর লিলুর সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল সভায় অন্যান্য যারা বক্তব্য রাখেন তারা হলেন যথাক্রমে, জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সহ সম্পাদক এবং সিলেট জেলা জাসদের সাধারন সম্পাদক কিবরিয়া চৌধুরী, সিলেট জেলা জাসদের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমদ মুক্তা, সিলেট মহানগর জাসদের সাধারন সম্পাদক গিয়াস আহমদ, যুক্তরাজ্য জাসদের সাবেক সাধারন সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহজাহান, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সালেহ আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহজাহান মিয়া, দপ্তর সম্পাদক সাবুল সামসুজ্জামান, প্রচার যোগাযোগ সম্পাদক এমরান আহমদ, যুক্তরাজ্য জাসদ ও নারীজোট নেত্রী রেহানা বেগম এবং সভায় অংশগ্রহন করেন যুক্তরাজ্য জাসদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা বিলকিস মনসুর ।
অতিথি বক্তা হিসাবে আরও যারা বক্তব্য রাখেন তারা হলেন, যুক্তরাজ্য ন্যাপের সভাপতি আব্দুল আজিজ, যুক্তরাজ্য প্রগ্রেসিভ ফোরামের আহবায়ক ডাঃ মুখলিছুর রহমান মুকুল, যুক্তরাজ্য বাসদ নেতা গয়াছুর রহমান গয়াস, যুক্তরাজ্য ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সাধারন সম্পাদক জামাল খাঁন প্রমুখ। সভাপতি হারুনুর রশীদের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে ভার্চুয়াল সভার সমাপ্তি হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন