বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:- নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২১ মে মঙ্গলবার। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তফসিল ঘোষণার পর থেকে সকাল সন্ধা ও মধ্য রাত পর্যন্ত হাটে-মাঠে, লিপলেট, পোষ্টার, ব্যানার, মাইকিং প্রচারণা সহ প্রার্থীদের শোডাউন দেখা যায়। প্রচার প্রচারনা জমজমাট হলেও নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোটের কোন আমেজ নেই।
এ নির্বাচনের পরিবেশ নানা সমীকরণে ঘুরপাক খাচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ও চায়ের দোকানে প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদ নিয়ে চলছে আলোচনা। ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটাররা বলেন, সৎ, নিষ্ঠাবান ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে আমরা বিজয়ী করতে অপেক্ষায় বসে আছি। তারা আরো বলেন, চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী মাঠে থাকলেও আলোচনায় রয়েছেন ৫ প্রার্থী। তারা প্রত্যেকেই চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য দৌড়ে রয়েছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে দ্বি-মুখী লড়াই ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধী দুজন প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আভাস মিলছে।
চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৮ জন। এর মধ্যে আওয়ামীলীগেরই রয়েছেন ৫ জন প্রার্থী। এতে আওয়ামী লীগের মুখোমুখি আওয়ামী লীগই। তবে, ক্ষমতাসীন দলের শক্তিশালী ৩ প্রার্থীর সঙ্গে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু (চিংড়ি) মার্কা নিয়ে।
বিএনপি’র একটি গ্রুপ নির্বাচন বয়কটের প্রচারণায় মাঠে থাকলেও আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী ৩ প্রার্থীকে একাই নাজেহাল অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু (চিংড়ি) মার্কা। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও মুল লড়াই হবে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের মধ্যেই। আওয়ামীলীগের কাছে থেকে পদ ছিনিয়ে নিতে আধা- জল খেয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপির নেতা কর্মীরা। আওয়ামীলীগের যে প্রার্থীই পাস করেন না কেন, মুল লড়াই হবে কিন্তু চিংড়ির সাথেই। এমন আলোচনা নবীগঞ্জের হাট- বাজার সহ সর্বত্র চলছে।
মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফুকে (চিংড়ি) টপকাতে পাল্লা দিয়ে ভোটারদের কাছে দৌড়াচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম (ঘোড়া)। বিশাল ভোট ব্যাংক না থাকলেও উপজেলা জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামেই আওয়ামীলীগ ছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু ভোটার সহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সাথে তার সু-সম্পর্ক রয়েছে। এবং দলের তৃনমূল নেতাকর্মীর সাথেও রয়েছে তার সম্পর্ক। এর পূর্বে ৮নং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
ইমদাদুর রহমান মুকুল (হেলিকপ্টার প্রতীক) দীর্ঘদিন ধরে গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতিও তিনি। ইউপি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করছেন তিনি। দিনারপুর পরগনার ৩টি ইউনিয়নে প্রায় ৬৪ হাজার ৫শ ভোটার রয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের তৃনমূল নেতাকর্মীর মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছেন তিনি।
এডভোটেক সুলতান মাহমুদ (মোটরসাইকেল প্রতীক) শেষ মুহুর্তে নির্বাচন জমিয়ে তুলেছেন তিনি! উপজেলার সামাজিক ও ক্রীড়া অঙ্গনের প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে তার রয়েছে সরব উপস্থিতি। এছাড়া তরুণ ভোটারদের মধ্যেও তুমুল জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। বিশেষ করে ছাত্রলীগ র্কর্মীদের কাছে তার রয়েছে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।
এদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদেও একই অবস্থা। বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গতি গোবিন্দ দাশের (মাইক) সঙ্গে লড়ছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সাইফুল জাহান চৌধুরী (তালা) সহ একই দলের ৪ প্রার্থী। এ পদেও আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি’র আব্দুল আলীম ইয়াছিনী (টিয়া পাখি)। বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের সঙ্গে তার সখ্যতা কাজে লাগাতে পারলে চমক দেখাতে পারেন তিনিও।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগমের (হাঁস), তার সাথে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ছাইফা রহমান কাকলী (ফুটবল)।
চেয়ারম্যান পদে আরও মাঠে রয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর উদ্দিন বুলবুল (দোয়াত-কলম), জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন চৌধুরী (আনারস), মোস্তফা কামাল (কাপ-পিরিচ) ও জাপা নেতা ও বিশিষ্ট সালিশ বিচারক শাহ আবুল খায়ের (কৈ মাছ)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরও মাঠে রয়েছেন, জাপা নেতা মুরাদ আহমদ (চশমা), যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামীলীগ নেতা অনর উদ্দিন জাহিদ (উড়ো জাহাজ), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সালমান আহমদ (বৈদ্যুতিক বাল্ব), মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান (বই), হেলাল চৌধুরী (আইসক্রিম) ও রুবেল তালুকদার (টিউবওয়েল)।
এদিকে, নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের সকল ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জিলুফা সুলতানা বলেছেন, নবীগঞ্জে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সকল প্রার্থীর জন্য আইন সমান থাকবে। নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ। নির্বাচনে কোনো ধরনের বল প্রয়োগ-বিশৃংখলা-অনিয়ম ও জালিয়াতি বরদাশত করা হবে না। আইন হাতে তুলে নিলে কাউকে ছাড় দেওয়া জাবে না। আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চাই।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন বলেন, ভোট হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। কোন ভোটারকে কেউ কেন্দ্রে আসতে বাধা দিলে তাকে কঠোর হাতে দমন করবে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোটের দিন পুরো উপজেলায় নিরাপত্তার চাঁদরে মোড়ানো থাকবে। কেউ বিশৃংখলা সুষ্টির চেষ্টা করলে হাসপাতাল অথবা কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা। এখানে ১১৬টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ লক্ষ ৬০ হাজার। তফশীল অনুযায়ী ২১ মে (সোমবার) নবীগঞ্জসহ দেশের ১৫৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন