ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার ৩৭.৫৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৫০ শতাংশ কিংবা এর বেশি ভোট পড়েছে মাত্র ১৯টি উপজেলায়। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ইসির নানা উদ্যোগের পরও এই ধাপে ভোটের হার বাড়ানো যায়নি।
গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে প্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ফলাফল বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান পদে ১৫৩টি উপজেলায় নির্বাচনে ভোটের হার প্রথম ধাপের চেয়ে ১.৩৯ শতাংশ বেশি।
৭৭টি উপজেলায় ভোটের হার ৪০ শতাংশেরও কম। ১৯টি উপজেলায় ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়েছে। ভোটের হার ৩০ শতাংশেরও কম ২৫টি উপজেলায়। সর্বোচ্চ ৭৪.৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে।
অন্যদিকে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে রাজশাহীর বাগমারায়, ১৭.৯৮ শতাংশ।
গত মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছিলেন ভোটের হার ৩০ শতাংশের ওপরে হতে পারে। তবে এই হার আশাব্যঞ্জক নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। গতকাল ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার প্রথম ধাপের চেয়ে সামান্য বেশি।
’
প্রথম ধাপের পর চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির করুণ চিত্রের পেছনে আবহাওয়া এবং বিএনপির ভোট বর্জনকে একাধিকবার দায়ী করেছেন ইসির কর্মকর্তারা। গত ৮ মে প্রথম ধাপে ভোটের হার ছিল ৩৬.১৮ শতাংশ। ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ছিল গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি। আর ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭.৬৯ শতাংশ হারে ভোট পড়ার তথ্য জানিয়েছিল ইসি। ফলে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পর পর দুই ধাপেই যে হারে ভোটে পড়েছে তা গত দেড় দশকের সর্বনিম্ন।
পার্বত্য জেলায় ভোট বেশি, সমতলে কম
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিভাগের দুই নির্বাচনী অঞ্চলের অধীনে ২৯ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই বিভাগের পার্বত্য জেলার অধীন উপজেলাগুলোতে ভোটের হার বেশি। আর সমতল জেলাগুলোতে ভোটের হার খুব কম।
পার্বত্য তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের উপজেলাগুলোতে ভোটের হার ছিল গড়ে ৬৬ শতাংশ। এসব জেলার আটটি উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের হার সর্বনিম্ন কাপ্তাইয়ে, ৪২.৬৮ শতাংশ।
এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার উপজেলাগুলোতে ভোটের হার সবচেয়ে কম, ২৮.৭৪ শতাংশ। এর মধ্যে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় ভোটের হার সর্বনিম্ন, ১৮.৪২ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভোটের হার নোয়াখালীর চাটখিলে, ৩৪.১২ শতাংশ।
মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় প্রার্থী, তবু ভোট কম
দ্বিতীয় ধাপের ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অন্তত ১৭ জন স্বজন। এঁদের মধ্যে দুই প্রার্থীর উপজেলায় ভোটের হার দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বনিম্ন। এর মধ্যে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় ভোটের হার ২১.১৬ শতাংশ। ওই আসনে বিজয়ী প্রার্থী সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ। এ ছাড়া ১৯.৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায়। ওই উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের ছেলে সাইফুল আলম। যদিও এসব উপজেলায় প্রদত্ত ভোটের ৬০ শতাংশ পেয়েছেন তাঁরা।
পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলায় ভোটের হার ৩৩.৭৯ শতাংশ। এই উপজেলায় প্রদত্ত ভোটের ৯০ শতাংশ পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম হাসনাইন। ভোটের হার কম হলেও প্রদত্ত ভোটের ৬০ শতাংশ পেয়ে বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় আইনমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই সাইদুর রহমান এবং কুমিল্লার বরুড়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্যালক হামিদ লতিফ ভুইয়া।
গত মঙ্গলবার ১০টি নির্বাচনী অঞ্চলের অধীনে ১৩ হাজার ১৬ কেন্দ্রের ৯১ হাজার ৫৮৯ ভোটকক্ষে দ্বিতীয় ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন তিন কোটি ৫২ লাখ চার হাজার ৭৪৮ জন। ১৫৩টি উপজেলায় তিন কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২০ ভোটারের মধ্যে এক কোটি ২৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯৪৭ জন তাঁদের ভোটাধিকর প্রয়োগ করেছেন।
চেয়ারম্যান পদে পাঁচটি উপজেলায় একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই উপজেলায় তিনটি পদেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তিনটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ায় ওই তিনটির ফলাফল ইসি থেকে সমন্বয় করা হয়নি। এই ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এক হাজার ৮২৪ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন ৫২৮ জন।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন