মুহম্মদ আলতাফ হোসেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি নির্বাচিত

জিবি নিউজ ||

জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভাপতি মুহম্মদ আলতাফ হোসেন সংস্থার ২০২৪-২০২৮ মেয়াদের জন্য ২৫ মে/২০২৪ তারিখে সংস্থার বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি চলমান মেয়াদের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হিসেবে  নির্বাচিত হয়েছেন।

আজীবন সভাপতি হিসেবে তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে অবস্থান করলেও বর্ধিত সভায় সভাপতি পদে নির্বাচন করার আহবান করা হলে কোন প্রার্থী না থাকায় সংস্থার ২০২৪-২০২৮ সাল পর্যন্ত চলমান মেয়াদে জনাব মুহম্মদ আলতাফ হোসেন  সংস্থার কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভাপতি হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দেশের সাংবাদিকতা জগতের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব ও কলামিস্ট  মুহম্মদ আলতাফ  হোসেন ১৯৭০ সালে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। গত ৫৫ বছরে তিনি দৈনিক আজাদ, দৈনিক গণকন্ঠ, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক জনতা, দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। রেডিও বাংলাদেশের (বাংলাদেশ বেতার) বাংলা সংবাদ বিভাগেও তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেন। এ সময় বেতারে বিভিন্ন কথিকা ও সংবাদ পর্যালোচনা লিখেন। এক সময় তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাচিত নির্বাহী সদস্য ছিলেন। নজরুল একাডেমি‘র আজীবন সদস্য ছাড়াও তিনি বহু সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। তিনি দেশে সর্বস্তরের সাংবাদিকদের একক প্রতিষ্ঠান জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮২ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি মূলতঃ তার উদ্যোগেই গঠিত হয় এই সংগঠন। জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত  থেকে তিনি সারা দেশে এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি বাংলাদেশ নিউজ সিন্ডিকেটের (বিএনএস) চেয়ারম্যান ও এফএনএস’র প্রধান সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন ।  ১৯৪৭ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর তিনি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের ঢালমারা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার কর্মস্থল ঢাকা শহরে মুহম্মদ আলতাফ হোসেনের শিক্ষা জীবন অতিবাহিত হয়। তিনি কমলাপুর প্রাইমারী স্কুল, সিদ্ধেশ্বরী হাই স্কুল, কায়েদে আজম কলেজ (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী কলেজ) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৭০ সালে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারের বাংলা সংবাদ বিভাগেও কাজ করেন। তাছাড়া বেতারে বিভিন্ন কথিকা ও সংবাদ পর্যালোচনা লিখেছেন দীর্ঘদিন। তিনি অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য ছিলেন। তিনি নজরুল একাডেমীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে এখনও সম্পৃক্ত রয়েছেন। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে তার বহু  প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি দেশের অন্যতম আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়ে নিয়মিত পর্যালোচনামূলক লেখা লিখে আসছেন।
মুহম্মদ আলতাফ হোসেন ১৯৭০ সালে সদ্য প্রকাশিত দৈনিক সংগ্রামে সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি দৈনিক গণকন্ঠে যোগদান করেন। পরবর্তী পর্যায়ে সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, দৈনিক সমাজ, দৈনিক আজাদ ও দৈনিক জনতায় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে দৈনিক ইনকিলাব প্রকাশিত হলে তিনি সহকারী বার্তা সম্পাদক পদে যোগ  দেন এবং ’৯৫ সালের ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। বিশিষ্ট বেতার ব্যক্তিত্ব মুহম্মদ আলতাফ  হোসেন ১৯৭০ সালের ১৬ই অক্টোবর তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে প্রথম কথিকা উপস্থাপনের মাধ্যমে কথক হিসেবে  যোগ  দেন। তিনি ঢাকা  বেতারে প্রায় সব ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন কথিকা ও সংবাদ পর্যালোচনা লিখে তিনি সুনাম অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় ভিত্তিক বার্তা প্রতিষ্ঠান এফএনএস ( ফেয়ার নিউজ সার্ভিস)’র প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২৪বাংলাদেশনিউজডটক’র তিনি সম্পাদক। তার সম্পাদনায় বিগত ৩৭ বছর ধরে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে একটি সম্পূর্ণ জাতীয় সংবাদপত্র সমতল।
মুহম্মদ আলতাফ  হোসেন ছাত্র জীবন  থেকেই বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার মধ্যে কবি জসীম উদ্দীনের সাহিত্য সাধনা সংঘ, অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমদের পূর্ণিমা বাসর,  মোহাম্মদ নাসির উদ্দীনের সাওগাত সাহিত্য পরিষদ অন্যতম। মুহম্মদ আলতাফ  হোসেন আলাপন সাহিত্য  গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ যুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, জাতীয় কৃষ্টি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলা সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ  লেখক সমিতির অন্যতম উপদেষ্টা। তার সম্পাদনায় ‘আলাপন’ নামের সাহিত্য সাময়িকীর বেশ কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।  দেশের বহু বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিকের সংস্পর্শে তিনি এসেছেন। তাদের মধ্যে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, ডঃ কাজী দীন মুহম্মদ, কবি তালিম হোসনে,  মোহাম্মদ মোদাব্বের, কবি জসিমউদ্দীন, আকবর হোসেন, মুজিবুর রহমান খাঁ, আখতার-উল আলম, ডঃ আশরাফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমদ, এ.কে.এম মহিউদ্দিন, অধ্যাপক আবদুল গফুর অন্যতম।
মুহম্মদ আলতাফ হোসেনের ছাত্র জীবন থেকেই লেখালেখির অভ্যাস। তার  প্রবন্ধ, কবিতা ও গল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে এক সময় তিনি আজাদ, পূর্বদেশ, বাংলার বাণী, দৈনিক জনপদ ও ঢাকা ডাইজেস্ট পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে মুহম্মদ আলতাফ হোসেন একটি পরিচিত নাম। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একজন সংগ্রামী সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)’র নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৮০ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি সম্মেলনে তিনি নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু দেশের  গ্রামীণ সাংবাদিকদের প্রতি রাজধানীতে কর্মরত তথাকথিত বনেদি সাংবাদিকদের অবহেলার প্রতিবাদে তিনি ১৯৮২ সালে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা গঠন করেন।
মুহম্মদ আলতাফ হোসেনের উদ্যোগে ১৯৮২ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সাংবাদিক সংস্থাকে তিনি নেপথ্যে থেকে গড়ে তোলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে ১৯৮৯ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এখনও এই পদে বহাল রয়েছেন। তাঁর বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে দেশের সকল জেলা ও অধিকাংশ উপজেলায় জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা পরিচিত লাভ করেছে। এখন টেকনাফ  থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সর্বস্তরের সাংবাদিকদের একক সংগঠন হিসেবে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা (জেএসএস) বিকাশ লাভ করেছে। সর্বস্তরের সাংবাদিক সমাজের পরিচয়-পতাকা, আস্থার প্রতীক হিসেবে মাথা উঁচু করে আছে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা (জেএসএস)।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার বিকাশ ও উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন মুহম্মদ আলতাফ হোসেন । বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুহম্মদ আলতাফ হোসেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের আয়োজিত সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মশিবিরে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মুহম্মদ আলতাফ  হোসেন ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজ অব জার্ণালিজম’র প্রিন্সিপাল ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।  বেসরকারী উদ্যোগে সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সৈয়দ তাজ-ঊস-শফী। কিন্তু প্রায় ১০ বছর পর নানা কারণে ২০০১ সালের পর কলেজটি আর চালানো যায়নি।
দেশের সাংবাদিক সমাজ বিশেষ করে  গ্রামীণ সাংবাদিক সমাজের কল্যাণে মুহম্মদ আলতাফ হোসেন আজীবন নিবেদিক প্রাণ।  দেশের সংবাদপত্র জগতকে একটি শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা এবং সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মুহম্মদ আলতাফ হোসেনের প্রয়াস নিরন্তর। দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে একটি সুষ্ঠু ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করা এবং সর্বস্তরের সাংবাদিক ভাইদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনি প্রণয়ন করেছেন ২১ দফা দাবীনামা। এসব দাবী বাস্তবায়িত হলে দেশের গ্রামীণ ও শহুরে সব ধরণের সাংবাদিকদের রুটি-রুজি ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত হবে। তার নেতৃত্বে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা এই ২১ (একুশ) দফা  বাস্তবায়নে সারাদেশে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন