শত কোটি টাকার লোভে প্রেমিককে বিষ খাইয়ে হত্যা, পরে দেখলেন কিছু নেই

যুবক বিশ্বাস করতেন, তিনি তিন কোটি মার্কিন ডলারের (৩৫২ কোটি টাকা প্রায়) মালিক। একই কথা বিশ্বাস করতেন তার প্রেমিকাও। এ অবস্থায় সম্পর্কের ইতি টানতে যাচ্ছিলেন প্রেমিক। ফলে প্রেমিকা ভাবেন, যেহেতু দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, তাই প্রেমিককে মেরে ফেললে তার বিপুল সম্পদের ভাগ পাওয়া যাবে। সেই লোভে যুবককে বিষ খাইয়ে হত্যাও করেন তিনি। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়েবালি!

তদন্তে বেরিয়ে আসে, নিহত যুবকের এ ধরনের কোনো সম্পদই ছিল না। আর থাকলেও তার ভাগ পেতেন না ওই নারী। কারণ, দেশের আইন তাকে যুবকের স্ত্রী বলে স্বীকৃতি দেয় না। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটায় ঘটেছে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা।

​​​​​​​

পিপল ম্যাগাজিনের খবর অনুসারে, চল্লিশোর্ধ্ব ওই নারীর নাম ইনা থিয়া কেনোয়ার। প্রেমিককে হত্যার জন্য গত বুধবার (২৯ মে) দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। গত বছরের অক্টোবরে কেনোয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।

 

গ্রেফতারি নথি থেকে জানা যায়, ৫১ বছর বয়সী স্টিভেন এডওয়ার্ড রাইলি তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা কেনোয়ারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

গত সেপ্টেম্বরে তিনি বন্ধুদের নিয়ে একজন আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে যান। রাইলি বিশ্বাস করতেন, তিনি সম্প্রতি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ নিয়েই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু পথিমধ্যে হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। তার বন্ধুদের মতে, ওই সময় রাইলিকে মদ্যপ দেখাচ্ছিল। কিন্তু তার রক্ত পরীক্ষায় মদের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

 

ওই সময় কেনোয়ার বলেন, রাইলির হিট স্ট্রোক হয়েছে। বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিলেই তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। কেনোয়ার দাবি করতেন, তার মেডিকেল প্রশিক্ষণ রয়েছে।

পরে তদন্ত করতে গিয়ে কর্মকর্তারা রাইলির বাড়িতে একটি বিয়ারের বোতল ও প্লাস্টিকের মগে সবুজ রঙের তরল খুঁজে পান। তাদের শোবার ঘরে একটি গ্লাস ক্লিনারের বোতলেও একই ধরনের তরল খুঁজে পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তাদের বিশ্বাস, ওই তরল ছিল অ্যান্টিফ্রিজ, যা গাড়ির ইঞ্জিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর মূল উপাদান হলো ইথিলিন গ্লাইকল, যা পানির হিমাঙ্ক কমায় এবং স্ফুটনাঙ্ক বাড়িয়ে দেয়।

 

পরে রাইলির মরদেহ পরীক্ষা করা হয় এবং তার রক্তে বিষাক্ত মাত্রায় ইথিলিন গ্লাইকলের উপস্থিতি শনাক্ত হয়।

কিন্তু কেনোয়ার তখনো দাবি করছিলেন, তার প্রেমিক সারাদিন মদ্যপান করেছিলেন এবং হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলোর জন্য বেশ কিছু ব্যাখ্যাও দাঁড় করান এ নারী। যেমন- রাইলি হয়তো গ্যারেজে গিয়েছিলেন এবং অ্যান্টিফ্রিজের মধ্যে তার সিগারেট পড়ে গিয়েছিল। পরে সেই সিগারেটটি তুলে ধূমপান করেছিলেন তিনি।

শুধু তা-ই নয়, কেনোয়ার নিজেকে রাইলির কমন-ল (অনানুষ্ঠানিক বিয়ে) স্ত্রী দাবি করেন এবং জানান, রাইলির ছেলের সঙ্গে প্রাপ্ত সম্পত্তি ভাগ করে নিতে চান তিনি।

 

কিন্তু তদন্তকারীরা যখন জানান, তিনি রাইলির কমন-ল স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন না, তখন স্পষ্টতই মুষড়ে পড়েন এ নারী। তাছাড়া ওই যুবকের বিশাল কোনো সম্পত্তি থাকারও প্রমাণ পায়নি কর্তৃপক্ষ।

শেষপর্যন্ত কেনোয়ার স্বীকার করে নেন, আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে প্রেমিকের চায়ের মধ্যে অ্যান্টিফ্রিজ মিশিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

 

আগামী ১৪ আগস্ট কেনোয়ারের সাজা ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তার আগে তাকে আরেকটি মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন