সিলেটে গতকাল শনিবার এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। তবু নগরের জলাবদ্ধতা কমেনি। জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসী পড়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে। তবে নদ-নদীর পানি ধীরে ধীরে কমতে থাকায় বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
নগরের উপশহর, তের রতন, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, কাজিরবাজার এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জলাবদ্ধ নগরের সোবহানীঘাট এলাকার মাধবী রানী নাথ গতকাল বিকেলে বলেন, ‘পানির মাঝে ভাসতাছি। না আছে খাওয়ার পানি, না আছে নাওয়ার (গোসলের) পানি, না আছে ব্যবহারের পানি। আমরা কিভাবে চলমু।
সারা শরীরে চুলকাচ্ছে।’
বিশুদ্ধ পানি কিভাবে জোগাড় করছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন মাঝেমধ্যে ছাড়ে একটু পানি। তখন কোমর পানি ভেঙে গিয়ে খাওয়ার জন্য এক ফোঁটা পানি নিয়ে আসি। চার দিন ধরে এমন চলছে।
’
দূরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পানি সংগ্রহ করে বাসায় ফিরছিলেন এলাকার আরেক বাসিন্দা লায়েছ আহমদ। তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে পানি নাই। সাপ্লাইয়ের পানি আধাঘণ্টা দিয়ে এরপর বন্ধ করে দেয়। এখানে ৩০০ থেকে ৪০০ পরিবার আছে। সবাই খাবার পানির সংকটে।
গোসল করিনি তিন দিন হয়।’
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘সিসিকের পানির লাইন অনেক এলাকায় ডুবে থাকায় পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে আজকে (শনিবার) থেকে আমরা জলাবদ্ধ এলাকাগুলোর মানুষের মাঝে শুকনা খাবারের পাশাপাশি দুই লিটার করে পানি সরবরাহ শুরু করেছি।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে কমতে পারে। এতে ধীরগতিতে হলেও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকালে সিলেট জেলার দুটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে ছিল। সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯৪ সেন্টিমিটার ও বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ সময় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।
বিকেলে জেলার নদ-নদীর পানি আরো খানিকটা কমেছে। বিকেল ৩টায় কুশিয়ারার পানি অমলসীদে ১৮৯ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমা নদীর পানিও কমে বিকেলে কানাইঘাট পয়েন্টে ৮২ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ছয় সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।
জেলার গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি এখনো থাকলেও তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ সুরমা ও বিয়ানীবাজারে নদীর পানি নেমে গেছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজল কুমার রায় গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৭ থেকে ২৯ মে তিন দিন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। ৩০ মে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। এর পর থেকে বৃষ্টি অনেকটাই কমে এসেছে। তবে বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ায় নদ-নদীর পানি কিছুটা ধীরগতিতে কমছে। আশা করছি, বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকেই যাবে।’
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় সিলেট মহানগর, সদর উপজেলা, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন