সিলেটে তাজা হচ্ছে বাইশের বন্যার ভয়াবহতা!

সিলেটের নয় উপজেলার বন্যাকবলিত হয়ে পানিবন্দি অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এরমধ্যে সিলেট নগরেও বেশীরভাগ এলাকায় জলমগ্ন।  অনেকের বাসা-বাড়ি, ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দির ডুবেছে। এমন পরিস্থিতে সিলেটে তাজা হচ্ছে বাইশের বন্যার ভয়াবহতা!

 

 

 

রোববার (২ মে) মধ্যরাতের  বৃষ্টিতে জলমগ্ন নগরীতে ইতোমধ্যেই তৈরী হয়েছে বিদ্যুৎ, পানি ও খাবারের সংকট। বৃষ্টির পানিতে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের আঙিনায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, সুরমার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টির সাথে হু হু করে বাড়ছে ছড়া-খালের পানি।গেল তিনদিন বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেটের মানুষের মনে যে স্বস্তি নেমেছিল, গত রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়ায় বৃষ্টিতে তা উড়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ২০২২ সালের মতো সিলেট নগরীর অর্ধেক এলাকাজুড়ে বন্যার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। 

 

 

রোববার রাত ১২টা থেকে নগরীর উপশহর, যতরপুর, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, মেন্দিবাগ, তেররতন, সাদারপাড়া, কুশিঘাট, তালতলা, তেলিহাওর, জামতলা, জল্লারপাড়, মির্জাজাঙ্গাল, জামতলা, জিন্দাবাজার, দরগাহ মহল্লা, মুন্সিপাড়া, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘীরপাড়, হাওয়াপাড়া, কানিশাইল, কাজলশাহ, বাঘবাড়ি, নাইওরপু, মাছুদিঘীরপাড়, ভাতালিয়া, লামাবাজার, বিলপাড়, জেলরোড, সওদাগরটুলা, দাঁড়িয়াপাড়া, শিবগঞ্জ, সোনারপাড়া, শেখঘাট, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া, খাসদবীর, চৌকিদেখি, লালদিঘীরপাড়, আগপাড়াসহ নগরীর দক্ষিণ অংশের বেশিরভাগ এলাকায় পানি ওঠতে থাকে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে এসব এলাকার বেশিরভাগ বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি ওঠে। তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। সকালের মধ্যে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি জমে। ফলে রাতেই ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।

 

 

নগরীর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে সিলেটের অনেক এলাকায় পানি উঠেছিলো। আবার কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সে পানি নেমে গেছে। কিন্তু আজ (রোববার) রাতের যে পরিমান বৃষ্টি হয়েছে এতে করে বেশীরভাগ এলাকায় কারো বাসায় কোমর কারো বাসায় হাটু সমান পানি উঠেছে। দেখে মনে হচ্ছে এই পানি অতি দ্রুত নামবে না।

 

 

সিলেট নগরীর তালতলার বাসিন্দা জমির মিয়া জানান, রাত ১টার দিকে তার বাসায় পানি ওঠতে শুরু করে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে বাসার ভেতর হাঁটু পানি জমে। বাধ্য হয়ে রাতেই এক আত্মীয়ের বাসায় পরিবার নিয়ে ওঠেছেন। পানিতে বাসার সকল আসবাবপত্র ভিজে গেছে।

 

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর  বলেন, মধ্যরাত থেকে ভারি বর্ষনের কারণে নগরীর নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যে কারণে ছড়া-খাল দিয়ে পানি নদীতে যেতে পারছে না। কোন কোন স্থানে উল্টো নদীর পানি ছড়া-খাল দিয়ে নগরে ঢুকছে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নগরবাসীর দুর্ভোগ বিবেচনায় যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

 

এদিকে, গতকাল সোমবার গতকাল সিলেটের সকল নদীর পানি আগের দিনের চেয়ে কমেছে। রাত থেকে বৃষ্টির পানি সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বাড়তে থাকলেও দুপুর থেকে কমতে শুরু করেছে। সুরমা ও কুশিয়ারার পানি রবিবার থেকে গতকাল সোমবার কমলেও এখনো দুই নদীর চারটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

 

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেটের বন্যাকবলিত ৯টি উপজেলার সবকটিতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন বন্যার্তরা। এখনো ১৩৮৪ জন বন্যার্ত আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

 

 

২০২২ সালের জুনে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিলো সিলেট অঞ্চল। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষকে উদ্ধারে প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে নামে নেমেছেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও। পানির তীব্র স্রোতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি, প্রধান সড়কসহ গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তখন আশ্রয়ের খোঁজে শেষ সম্বল হাতে নিয়ে নিজ ঘর ছাড়েন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা হন বানভাসিরা।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন