হাকিকুল ইসলাম খোকন,,
বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব কানাডার উদ্যোগে একটা সুন্দর এবং সফল আয়োজন অনুষ্ঠিত হলো ৩১ মে ২০২৪, শুক্রবার টরন্টোর ২৬৭৯ ড্যানফোর্থ এভিনিউ (বিসিসিএস হল) এ। সৃজনশীল লেখকদের সাহিত্য সংগঠন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব কানাডার এই আয়োজনে শ্লোগান ছিল, ‘প্রজ্ঞা দিয়ে বিশ্ব দেখুন, শব্দ দিয়ে শান্তি বুনুন’। প্রথম পর্বের সঞ্চালক ছিলেন কবি সুলতানা শিরীন সাজি এবং অনুবাদক মম কাজী। এই পর্বে আনন্দলোকে মঙ্গল আলোকে গাইতে গাইতে বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব কানাডার সভাপতি মৌ মধুবন্তী এবং উপস্থিত সদস্যরা সবাই মোমবাতি জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন। এছাড়া এই পর্বে সমবেত কন্ঠে বাংলাদেশ এবং কানাডার জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। পরিচালনায় ছিলেন মানসী সাহা। ল্যান্ড একনলেজমেনট পাঠ করে, প্রজন্ম সদস্য সপ্তর্ষি রায় মজুমদার, বাংলাদেশ রাইটারর্স ক্লাব কানাডা।
সংগঠনের যাত্রারম্ভের ইতিহাস সংক্ষেপে বলেন, উপদেষ্টা আলী আজগর খোকন। প্রধান অতিথি বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা অনলাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত হন এবং তাঁর মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। কবি নুরুল হুদার কবিতা, যতদূর বাংলা ভাষা কতদূর এই বাংলাদেশ” কবিতাটি সমবেত কন্ঠে আবৃত্তি করেন মৌ মধুবন্তী, মম কাজী, ঋতুশ্রী, হোসনে আরা জেমী, মানসী সাহা এবং শিরীন সাজি।
বিশেষ অতিথি প্রাক্তন পরিচালক, জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ থেকে আগত কবি এবং ফোক গবেষক ড. শিহাব শাহরিয়ার বক্তব্য রাখেন। শিহাব শাহরিয়ারকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান সংগঠনের সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম খান মনসুর। সভাপতির বক্তব্য রাখেন কবি মৌ মধুবন্তী। তিনি রাইটার্স ক্লাবের অন্যান্য সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। দুজন ছোট্ট সদস্য কবিতা আবৃত্তি করে। সার্বভৌম রায় মজুমদার এবং সপ্তর্ষি রায় মজুমদার। কানাডার বিভিন্ন শহর থেকে আসা কবি, গবেষক ও লেখকদের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। কবিরা তাদের নিজের লেখা কবিতা পাঠ করেন। এবং লেখক এবং গবেষকরা বই নিয়ে কথা বলেন। এই পর্বের কবি, গবেষক,লেখকরা হলেন, জামিল বীন খলিল, ঋতুশ্রী ঘোষ্, মানসী সাহা, মৌ মধুবন্তী, পারভেজ এলাহী চৌধুরী, ম্যাক আজাদ, জান্নাতুল নাঈম, এলিনা মিতা, বনানী বাবলি, রুমা বসু, সৈয়দা রুখসানা বেগম, মুস্তাফা চৌধুরী, রেজা সাত্তার, ড. আবদুল হাই সুমন, তাজুল মোহাম্মদ, রেখা পাঠক, মম কাজী, সুলতানা শিরীন সাজী, আবিদ ফয়সাল।
এই পর্বটি পরিচালনা করেন জামিল বীন খলিল এবং মোয়াজ্জেম খান মনসুর। এরপর বাংলা একুশের পদক, একাডেমী ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কারপ্রাপ্ত কানাডায় বসবাসরত গুণী কবি, লেখক, গবেষকদের সম্মাননা দেওয়া হয় এবং অভিনন্দিত করা হয়। মোট ১২জনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গবেষক তাজুল মোহাম্মদ, কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কথা সাহিত্যিক সালমা বাণী এবং কথা সাহিত্যিক জসীম মল্লিক। যারা প্রয়াত কবি, লেখক, তাঁদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়।
যারা অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি তাঁদের জন্যও সম্মাননার ব্যবস্থা ছিল এবং তাদের নামোল্লেখ করে অভিনন্দন জানানো হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, পুরস্কারপ্রাপ্ত দের মধ্যে বিটিভির প্রথম মহাপরিচালক জামিল চৌধুরী আসবার জন্য প্রস্তুতি নিয়েও আসতে পারেন নি। তাকে তার সম্মাননা সিনিয়র হোমে পৌঁছে দেয়া হবে। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন মানসী সাহা। সমসাময়িক কবিদের কবিতা আবৃত্তি করেন টরন্তো থেকে আমন্ত্রিত বাচিকশিল্পীরা, রোজ সৈয়দা, ফ্লোরা নাসরিন ইভা, দিলারা নাহার বাবু, এলিনা মিতা, ফারহানা আহম্মদ এবং মৌ মধুবন্তী। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন ঋতুশ্রী ঘোষ। রাইটার্স ক্লাব কানাডা’র পক্ষ থেকে কেক কাটা হয়। এছাড়া কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এর জন্মদিন উপলক্ষেও কেক কেটে কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়। ভলানটিয়ারদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।গত চার বছর যে সকল সদস্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে সংগঠনকে এগিয়ে এনেছে এই অনুষ্ঠানে পর্যন্ত তাদেরকে ট্রফি দিয়ে এপ্রিশিয়েট করা হয়। অংশগ্রহণকারী লেখক ও আবৃত্তিশিল্পিদেরকে মেডেল দিয়ে অভিনন্দিত করা হয়।
সভাপতি মৌ মধুবন্তী’র ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান এর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। কানাডার যে কোন প্রান্ত থেকে কবি, মুক্ত চিন্তা, স্বাধীনতার ও বাংলাদেশের পক্ষের লেখকরা বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সদস্য হতে পারবে। যারা আগ্রহী তারা যোগাযোগ করতে পারবেন। এখানে উল্লেখ্য যে প্রায় ছয় ঘন্টার অনুষ্ঠানে হলভর্তি কবি, লেখক এবং সাহিত্যানুরাগীদের উপস্হিতি ছিল মনে রাখার মত। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে চা, সমুচা,রোল, ফল, বিস্কিট দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানকে সুশৃংখলভাবে এগিয়ে নেবার জন্য ভলান্টিয়ারদের অবদান ছিল মনে রাখার মত। ভলান্টিয়ার কোর্ডিনেটর ছিল নতুন ইসরাত। রেজিষ্ট্রেশন এ দায়িত্ব পালন করেছেন হোসনে আরা জেমি। ব্যানার, পোস্টার করেছেন মম কাজী, জীবক বড়ুয়া, ও জামিল বীন খলিল।অনুষ্ঠানের ছবি কৃতজ্ঞতা, বিদ্যুৎ সরকার। উক্ত অনুষ্ঠানের আহবায়ক আব্দুল হাই সুমনকে অনেক ধন্যবাদ। বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সভাপতি মৌ মধুবন্তী, এবং সকল সদস্যকে সাধুবাদ জানাই, এমন সুন্দর এবং সফল আয়োজনের জন্য।অনুষ্ঠানে উপস্হিত সুধীজনদের জন্য শুভকামনা। ২০২৫ সালের বাৎসরিক এই সমাবেশের পরিকল্পনা এখন থেকেই শুরু হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন