বড় হওয়া অন্যায় নয় বরং সৎগুণ তবে যারা বড় করেছে তাদের সামনে বড়ত্ব আর আমিত্ব, ভাব আর উগ্রতা দেখানোতে চরম বেয়াদবি
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।|
আপনি অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার কেন করবেন? কেবল নিজের সুনাম-সুখ্যাতি এবং ভালোমানুষি ফলাবার জন্য। অবশ্যই। এজন্যই ভালো ব্যবহার করবেন তবে এখানে আপনার আরও বৃহৎ উদ্দেশ্য থাকা উচিত। আপনার ভালো ব্যবহারে লোকে আপনার বাবার নাম নিয়ে, মায়ের পরিচয় দিয়ে বলুক, 'তাদের সন্তানটি মানুষ হয়েছে।' আপনার কোন ব্যবহারে আপনার পিতামাতার সুনাম বাড়লে সেই ব্যবহার পুনঃপুন করা উচিত। কারো সাথে হাসিমুখে কথা বলা, সচেতনভাবে অধিকার বহাল রাখা এবং যথাযথ সম্মান করার দ্বারাই আপনার শিক্ষা, আপনার ব্যক্তিত্ব এবং আপনার সভ্যতা প্রকাশ পায়। আপনি মানুষ হিসেবে কেমন তা আপনার চরিত্রের প্রকাশিত অংশে, আপনার কথার মাধুর্যে এবং আপনার ব্যবহারে ফুটে ওঠে। মানুষ আসলে আপনার থেকে ভালো ব্যবহার প্রত্যাশা করে।
প্রয়োজন কিংবা বিনা প্রয়োজনে কারো সাথে দু'দন্ডের কথায় কিংবা ক্ষণিকের দেখায় তারা যদি আপনার অহংকার-দম্ভের বার্তা পায় তবে সেই দোষ আপনার পিতামাতার আমলনামা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ভালো ব্যবহারের মত সম্মৃদ্ধ সাদকাহের চর্চার সুযোগ মানবজীবন খুব কম আসে। কাজেই মানুষকে যথাযথ সম্মান দেওয়া, তাদের দুঃখ-বেদনার ভাগীদার হওয়া এবং বিশ্বাস-ভরসার ছায়া হওয়া দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কোন উপকার করতে পারবো না জেনেও ধৈর্য নিয়ে মানুষকে বোঝানো, তাকে সান্ত্বনা দেওয়া এসব আচরণের অভিজাত রূপ। অহম ও আমিত্ব প্রকাশের মাধ্যমে মানুষকে দূরে ঠেলে দিলে সম্পর্কের মধুরতম দিকটি থেকে বঞ্চিত হতে হবে। মানুষে মানুষে যে বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্য বাড়ে তা চরিত্রের আকর্ষিত দিকগুলোই স্থায়ী করে। মানবীয় অলঙ্কারসমূহের মধ্যে ভালো ব্যবহার শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার। যা সর্বদাই অলঙ্ঘনীয় মর্যাদা ধরে রাখে।
মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে কেউ কোনদিন ঠকেছে সেটা সংখ্যায় কম। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার বিনিময়হীন যায় না। যার উপকার করলেন সে হয়তো কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুলে গেলো কিন্তু আপনার সৎকাজ ভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আপনার প্রাপ্তিতে পালক যুক্ত করবে। অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষেত্র থেকে আপনি তৃপ্ত হবেন। আপনার কাজে কেউ আপনার বাবা-মায়ের প্রশংসা করলো, বংশের আলো বড় করলো এবং আপনাকে মনে মনে দোয়া করলো- এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি্ মানবজীবনে আর কীসে আসে? সৌভাগ্য বলতে যা বুঝি তা এই ভালো ব্যবহার থেকে পাওয়া বিনিময়ের বর্ধিত রূপ।
ক্ষমতার ব্যবহার কিংবা অপব্যবহার করে কাউকে অযথা ব্যথা দিলেন, যার সাথে অন্যায় করা হলো সেও ছোট বলে আপনার মুখে কিংবা কাজে কোন বিনিময় দিতে পারলো না কিন্তু অন্তরের অভিশাপ কী থেমে থাকে? ভালোবেসে এবং আদেশ দিয়ে- এই দুই ভাবেই যে কাজ সমাধান করানো যায় সেই কাজে ভালোবাসার ব্যানার বড় করাতেই কৃতিত্ব। ক্ষমতা আছে এবং সেটা প্রয়োগ করাও যায়- এই ক্ষেত্রে ভালো আচরণ ও মোটিভেশানাল বক্তব্যের দ্বারা উদ্দেশ্যে পৌঁছানোটাই শ্রেয়তর। মানুষের সাথে আপত্তিকর আচরণে তাৎক্ষণিক ফলাফল না পেলেও দীর্ঘশ্বাসের ভার বইতে হয়। কারো দুঃখে চোখের পানি, মন খারাপে দিন খোওয়ানো কিংবা কাউকে ছোট করানোতে কৃতিত্ব নাই বরং অসভ্যতার অন্ধকার আছে। যেন একটু ভেবে তবেই মন্দে পা বাড়াই! ওখানে একটুকুও কল্যাণ নাই বরং ঘৃণার বিষবাষ্প আছে।
বড় হওয়া অন্যায় নয় বরং সৎগুণ তবে যারা বড় করেছে তাদের সামনে বড়ত্ব আর আমিত্ব, ভাব আর উগ্রতা দেখানোতে চরম বেয়াদবি। সে তত বড় যে তার বড়ত্বকে বিনয় দিয়ে প্রকাশ করতে পারে। অহমিকা সব অর্জন ম্লান করে দেয়। বাজে আচরণ বাবা-মায়ের কৃতিত্ব এবং অবস্থানকেও হেয় করে। খারাপ ব্যবহার শিক্ষার মর্যাদাকে খাটো করে। যারা অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার করে, হাসিমুখে কথা বলে এবং কোন না কোনভাবে উপকার করে তারা আজীবন উপকৃত মানুষের হৃদয়ে থাকে। এর বিপরীত হলে তখনো মনে থাকে তবে সেটা ঘৃণায়। একজন সেবাগ্রহীতাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আগে তার সমস্যা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। সব মানুষের টুকটাক সীমাবদ্ধতা আছে এবং সিস্টেমের দীনতা থাকে। কাজেই ব্যর্থতার কথাও হাসিমুখে বলে তাকে সন্তুষ্ট করা যায়! দায় ও দায়িত্বের দূরাতিক্রম্য সীমানা ভালো ব্যবহার দিয়ে অনেকটাই জয় করা যায়!
আমার ভালোত্বে যদি আমার বাবা-মায়ের সুনাম-প্রশংসা বাড়ে তবে সেই কাজ সারাদিন অবিশ্রান্ত করা দরকার। কারো সাথে চোখ লাল করায়, কথা না শুনে ফিরিয়ে দেওয়ায় এবং ধমকের সুরে আদেশ করায় মানবীয় কায়দা ও ফায়দা নাই। ভালোবাসা দিয়ে, ভালো আচরণ দিয়ে এবং সমব্যাথী হয়ে মানুষের দুঃখ-অভিযোগ শুনতে হবে। নেতা হওয়ার জন্য নয়, ফায়দা হাসিলের জন্য নয় এমনকি লোক দেখানোর জন্যও নয় বরং মানুষ হিসেবে মানুষের আচরণ সদর্থক থাকা উচিত। আজকাল ভালো ব্যবহার বংশের পরিচয় না হলে ব্যক্তির পরিচয়। সেই পরিচয় মর্যাদাবান করতে মানবীয় কায়দায় জীবনযাপন হোক। তবেই সুনাম বাড়বে এবং বাবা-মা ও সমাজ গৌরবান্বিত হবে। মনে রাখতে হবে, ভালো ব্যবহারের ফল সারাজীবন ভোগ করা যায়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন