সিলেটে বালিকা পুনর্বাসন কেন্দ্র ঘিরে রহস্য

  কামরুল ইসলাম মাহি,,

শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। সিলেট মহানগরের শিবগঞ্জ লামাপাড়ায় এটি অবস্থিত। সমাজসেবা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর দ্বারা পরিচালিত এই পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালিকা) শাখাটি ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। গত দুইদিনে পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে ৪ কিশোরী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন নির্যাতন ও নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তাদের। কিন্তু বিষয়গুলো নিয়ে লুকোচুরি করছেন প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বরত উপ-প্রকল্প পরিচালক বাসুদেব দেবনাথ।

 

 

 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাতে ১০টার দিকে কেন্দ্রের তিন কিশোরী নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। স্থানীয়দের তৎপরতায় আত্মহত্যা থেকে বাঁচেন তারা। পুলিশ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা বলছে- এটি কোনো আত্মহত্যার ঘটনা নয়। ওই তিন কিশোরী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো।

 


এদিকে বুধবার (২৬ জুন) রাতেও ওই কেন্দ্রের আরও এক কিশোরী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় কেন্দ্রটির ৫ জন স্টাফকে শোকজ করেছে বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়।

 

 


এ কার্যালয় সূত্র জানায়,  সিলেট মহানগরে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র দুটি রয়েছে। এরমধ্যে একটি বালক ও একটি বালিকা শাখা। ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো। এরমধ্যে শিবগঞ্জ লামাপাড়ায় অবস্থিত বালিকা শাখায় বর্তমানে ৩৮ জন শিশু ও কিশোরী রয়েছে। ৫ জন স্টাফ ও একজন উপ-প্রকল্প পরিচালক কেন্দ্রটির পরিচালনা এবং দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। মূলতঃ যাদের পরিবারে বাবা-মার বিচ্ছেদ ঘটেছে, ভবঘুরে ও অনাথ এবং বিভিন্ন সময় নির্যাতন ও পারিবারিক সমস্যার শিকার শিশু-কিশোরীরা পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসে। এছাড়া পুলিশের মাধ্যমেও শিশু-কিশোরীরা আসেন পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

 

 


কেন্দ্রে থাকা কিশোরীদের অভিযোগ, পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন। অনেক সময় তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন ও অশ্লীল কথাবার্তা বলেন। অধিকাংশ সময় জামা কাপড়, খাবার, গোসলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যায় না। পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে দেওয়া হয় না। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মা-বাবা তুলে গালিগালাজ করেন স্টাফরা।

 

 

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,  শিবগঞ্জ লামাপাড়ায় নূর মঞ্জিল, ৪৯ মোহনীর এই পুনর্বাসন কেন্দ্রটি চারতলা বিশিষ্ট। বেশিরভাগ শিশু-কিশোরীর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। নির্যাতনের কারণে তিন কিশোরী আত্মহত্যার চেষ্টার খবরের পরে অভিযুক্ত রিফা বেগম, কণিকা দে এবং রাবেয়া বেগমের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রকাশ্যে অভিযোগ উঠেলেও এখন বিষয়টি নিয়ে আর কথা বলতে রাজি হচ্ছে না কিশোরীরা।

 

 

 

পরে এসব বিষয়ে কেন্দ্রের উপ-প্রকল্প পরিচালক বাসুদেব দেবনাথের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে গেলে তিনি অফিস ত্যাগ করতে চান। তবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেও মুখ খুলেননি তিনি। এমনকিট সাধারণ কোনো তথ্য দেননি বাসুদেব। তার এমন আচরণে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।


 

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ- প্রায় সময় এই প্রতিষ্ঠান থেকে মেয়েদের চিৎকারের শব্দ আসে। মেয়েরা কান্নাকাটি করেন সেটিও দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা লুকোচুরি করেন। এটি একটি গোপন আস্তানার মতো। কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না সেখানে। 

 

 

সিলেট বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নিবাস রঞ্জন দাশ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকালে সিলেটভিউ-কে বলেন, মঙ্গলবার ও বুধবার রাতের ঘটনার পর আমরা এই পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। ইতোমধ্যে ৫ জন স্টাফকে শোকজ করা হয়েছে।

 

 

তিনি আরও বলেন, যে তিনজন কিশোরী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ এসেছে তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। বিষয়টি আসলে এভাবে না। মূলতঃ তারা এখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলো না। তারা এখান থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছিলো। তাদের বাড়ি ঢাকা, কুমিল্লা ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে। এই তিন কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি এখন থেকে আর কোনো সমস্যা হবে না। তারপরও অভিযোগগুলোর সত্যতা পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন