ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মারক্রাম ও ভারতের রোহিত শর্মা বিশ্বকাপ, ক্রিকেটের মেগাটুর্নামেন্ট। এর শুরু আর শেষটা হয় ঢাকঢোল পিটিয়ে, অথচ এবার আসর শুরুর আগে ‘ক্যাপ্টেনস মিট’-এর মতো চিরাচরিত আয়োজন ছিল না।
ফাইনালের আগে দুই দলের অধিনায়ক ট্রফি নিয়ে ফটো সেশন করবেন কি না, বা করলেও কোথায় করবেন তা নিয়েও টুঁ শব্দটি করেনি আইসিসি। ১ জুন শুরু হওয়া এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্দা নামছে আজ।
অনেকটা নীরবে এসে নীরবে চলে যাওয়ার মতো।
টি-টোয়েন্টি মানে চাকচিক্য, ফ্লাডলাইটের আলোর নিচে দুই দলের দ্বৈরথ আর রাতের আকাশে আতশবাজির খেলা। অথচ ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচটি হবে দিনের আলোয়। সেটাও বার্বাডোজের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায়।
যদিও সময় পার্থক্যের কারণে বাংলাদেশে তখন রাত সাড়ে ৮টা। ভারতীয় উপমহাদেশে টিভিতে ‘প্রাইম টাইম’ ধরাই এই দূর ক্যারিবীয় দ্বীপে সকালে ফাইনাল আয়োজনের অন্যতম কারণ হয়ে থাকতে পারে।
আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও মাঠের লড়াইয়ে এর প্রভাব খুব বেশি পড়ার কথা নয়। দুই দল একই মঞ্চে লড়বে।
ট্রফি উঁচিয়ে ধরবে কারা? ভারত, নাকি দক্ষিণ আফ্রিকা? প্রশ্ন এখন সেটিই। ২০০৭ সালে কুড়ি-বিশের প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের সামনে যেখানে ট্রফি পুনরুদ্ধারের সুযোগ, সেখানে প্রোটিয়ারা সব সংস্করণ মিলিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্ব আসরের শিরোপার নাগাল পেতে চাইবে। এই ফাইনালের আগে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেছেন, ‘দল হিসেবে আমাদের শান্ত থাকতে হবে। মাথা ঠাণ্ডা থাকলে তবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।’ প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মারক্রামের ভাষ্য, ‘আমরা অনুভব করি এবং বিশ্বাস করি যে আমরা বিশ্বের যেকোনো দলের সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি, আমরা শিরোপা জিততে পারি।
’
দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে হু হু করে কেঁদেছেন রোহিত। ফাইনালে ওঠা অবশ্য নতুন কিছু নয় তাঁর কাছে। এখনো এক বছর হয়নি ঘরের মাঠে ভারতকে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন। তবে এবারের ফাইনাল একটু ব্যতিক্রম তাঁর কাছে। যে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছিল, এবার তাদের হারিয়েই ফাইনালে ভারত।
রোহিতের জন্য এই ফাইনাল যতটা আবেগী, তার চেয়ে বেশি হওয়ার কথা মারক্রামদের কাছে! সাতবার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে আইসিসির বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রোটিয়ারা। রোহিতরা যেমন ইংলিশদের নাস্তানাবুদ করে এখানে এসেছেন, একইভাবে আফগানিস্তানকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে শিরোপার লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এই ম্যাচের আগে ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেছেন, ‘ফাইনালে জিততে হলে ভালো ক্রিকেট খেলা ছাড়া উপায় নেই। আমরা শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছি। এভাবেই ফাইনালে আরো একবার খেলতে চাই।’ কেনসিংটন ওভালে অবশ্য পরিসংখ্যান ব্যাটারদের পক্ষে। এই আসরে সব মিলিয়ে আটটি ম্যাচ (একটি পরিত্যক্ত) হয়েছে এখানে, প্রায় সব কটিতেই স্কোরবোর্ডে রান উঠেছে। এর মধ্যে ভারত যে ম্যাচটি খেলেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে, আগে ব্যাট করে তোলে ১৮১ রান। ব্যাটারদের মতো স্পিনাররাও সুবিধা পান বার্বাডোজে। সব মিলিয়ে ভারতকেই এগিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা টুর্নামেন্টে খুব ভালো করছে। ভারতের জন্য প্রোটিয়াদের হারানোর কাজটা খুবই কঠিন হবে। তার ওপর ফাইনালের উইকেট কেমন হবে, সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে আমি ভারতকেই এগিয়ে রাখব।’
এদিকে আটবারের চেষ্টায় ফাইনালে উঠে এখানেই থামতে চান না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন প্রোটিয়া স্পিনার তাবরাইজ শামসি, ‘আমরা যখন বিশ্বকাপ খেলতে এসেছি, আমরা শুধু ফাইনালে যেতে আসিনি। অন্য দলগুলোর মতোই এখানে ফাইনাল জিততে এসেছি। আমাদের কাছে কিছুই অতিরঞ্জিত নয়।’ ফাইনালের মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকাকে কী করতে হবে সেই সবক দিয়ে রেখেছেন অস্ট্রেলিয়াকে দুইবার বিশ্বকাপ শিরোপা জেতানো অধিনায়ক রিকি পন্টিং, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা এখন পর্যন্ত অপরাজিত। তাদের কিছু পরিবর্তনের দরকার নেই। খেলোয়াড়দের শুধু জেগে উঠতে হবে এবং নিজেদের সেরাটা দিতে হবে। একটি দল হিসেবে খেলতে হবে। তা করতে পারলে প্রতিপক্ষের কাজ কঠিন হবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার মতো অপরাজিত থেকেই ফাইনালের মঞ্চে ভারত। লড়াইটা তাই সেয়ানে সেয়ানেই হওয়ার কথা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এই ট্রফি আরেকবার ছুঁয়ে দেখতে পারবে কি ভারত, নাকি ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রেখে অধরা শিরোপা উঁচিয়ে ধরবে দক্ষিণ আফ্রিকা?
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন