রোহিত শর্মা খুঁড়িয়ে আসার ভঙ্গিতে আইসিসির চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলের হাত থেকে কাঙ্ক্ষিত ট্রফি নিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উৎসবে মাতলেন। যে বিরাট কোহলি এর আগে কোনো দিন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ছুঁতে পারেননি, তাঁর হাতে ট্রফি পৌঁছাতে কাউকে খুঁজতে থাকলেন। পাওয়া গেল রাহুল দ্রাবিড়কে। প্রধান কোচের হাতে সেই ট্রফি তুলে দিলেন শিষ্য।
পাগলাটে উদযাপন রাহুলের। চিৎকার করে যেন বলছিলেন, ‘এই ট্রফি আমাদের, এই ট্রফি আমার।’ রোহিত এর আগেও দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন, কোহলি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছেন। কিন্তু রাহুল? অধিনায়ক হয়ে, খেলোয়াড় হয়েও পারেননি।
ভারতের ড্রেসিংরুমে কোচ হিসেবে নিজের শেষ ম্যাচে সেই আক্ষেপ ঘোচালেন এই কিংবদন্তি। বিশ্বকাপ ট্রফিও কি নিজের পূর্ণতা পেয়ে গেল?
গতকাল বার্বাডোজ রূপ নিল নীল উৎসবে, ক্রিকেটের উৎসবের রং হলো নীল। ১৩ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের খেতাব জিতল ভারত। সর্বশেষ ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল দলটি।
আর টি-টোয়েন্টি? ২০০৭ সালের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা ১৭ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার করল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে। অথচ ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছিল প্রোটিয়ারা প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে শিরোপাটাও জিততে চলেছে। তবে পরিস্থিতি বদলে যায় ১৭৭ রান তাড়ায় নামা দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ১৭তম ওভারে। হেনরিক ক্লাসেন আউট হতেই উৎসবের ঢেউ ভারতীয় শিবিরে। বার্বাডোজের নীল গ্যালারিতে তখন সমর্থকদের বাঁধ ভাঙা উল্লাস।
হবেই বা না কেন, আউট হওয়ার আগে যে তাণ্ডব চালান দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটার। অক্ষর প্যাটেলের করা ইনিংসের ১৫তম ওভারে দুটি করে চার ও ছয়ের সাহায্যে তোলেন ২৪ রান! এই ওভারের পর ১৭৭ রান তাড়া করা প্রোটিয়াদের সমীকরণ নেমে আসে ৩০ বলে ৩০ রানে। ইনিংসের ১৭তম ওভারে ক্লাসেন যখন আউট হন, তখন ২৩ বলে প্রয়োজন ২৬ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে তখনো ৫ উইকেট। অথচ এই ম্যাচও কিনা ঘুরিয়ে দিলেন ভারতের বোলাররা। শেষ ওভারে ১৬ রান আটকাতে নেমে মাত্র ৮ রান দেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। এতে উৎসবে মাতোয়ারা বার্বাডোজ থেকে দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা।
কেনসিংটন ওভালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু ভারতের। মার্কো ইয়ানসেনের অফ স্টাম্পের বাইরের হাফভলিতে চার মেরে শুরু করেন কোহলি। ওই ওভারে ১৫ রান তোলে ভারত। পেসের বিপক্ষে ভারতীয় ব্যাটারদের আগ্রাসন দেখে দ্বিতীয় ওভারে স্পিনার নিয়ে আসেন এইডেন মারক্রাম। অধিনায়ককে হতাশ করেননি কেশব মহারাজ। চতুর্থ বলে পা বাড়িয়ে সুইপ করেছিলেন রোহিত শর্মা, কিন্তু সরাসরি ক্যাচ যায় স্কয়ার লেগে, ক্লাসেনের হাতে। এক বল পর শূন্য রানে ফেরেন ঋষভ পান্ত।
দুই উইকেট হারিয়ে রানের গতি কমে আসে ভারতের। উল্টো চাপ বাড়াতে গিয়ে রাবাদার বলে ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দেন সূর্যকুমার যাদব। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। সেখান থেকে এক প্রান্ত ধরে খেলে বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় ধীরগতির ফিফটি করেন কোহলি, ৪৮ বলে। পরে হাত খুলতে গিয়ে ৭৬ রানে ফেরেন ফাইনালসেরা ক্রিকেটার। ৫৯ বলের ইনিংসে ছয়টি চার ও দুটি ছয়। ম্যাচের পর কোহলি জানিয়ে দেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি তাঁর শেষ ম্যাচ। কোহলির এই ইনিংসের সঙ্গে অক্ষরের ৩১ বলে ৪৭ এবং শিবম দুবের ১৬ বলে ২৭ রানের সুবাদে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে ভারত, যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রেকর্ড। আগেরটি ছিল ১৭৩ রানের।
রেকর্ড টপকাতে নেমে ভারতের মতো শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। ১২ রানে হারায় ২ উইকেট। দ্বিতীয় ওভারে ‘ড্রিম’ ডেলিভারিতে রিজা হেনড্রিকসকে ফেরান জসপ্রীত বুমরাহ। টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার জেতা এই পেসার ১৮তম ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে নেন মার্কো ইয়েনসেনের উইকেট। তাতেই কাজ সহজ হয়ে যায় ভারতের।
যদিও শুরু আর শেষের ধাক্কার মাঝে পুরো সময়টা ভারতীয় বোলারদেরে শাসন করেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা। ওপেনার কুইন্টন ডি ককের ৩৯ এবং ক্রিস্টান স্টাবসের ৩১ রানের সঙ্গে ক্লাসেনের ২৭ বলে ৫২ রানের ঝড়ও বাঁচাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। শেষ ওভারে ১৬ রানের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে সূর্যকুমারের দারুণ এক ক্যাচে ফেরেন ডেভিড মিলার (২১)। প্রোটিয়াদের শেষ আশাও শেষ ওখানে। শিরোপা ছোঁয়ার খুব কাছে গিয়েও ‘চোকার্স’ তকমা ঘোচাতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ভারত। তাতেই উৎসবের রং নীল, ক্রিকেটের রং হলো নীল!
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন