পাপ করে দুনিয়ায় ধরা পড়েননি বলে ভাবছেন বেঁচে যাচ্ছেন? রহস্যে ঘেরা সময়ের আরেকটা পার্ট আছে।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক। |
সাকলায়েনের পরীর বেডরুমের ঘুমানোর সংবাদের বাদে, মতিউরের বয়স্কপোলার ছাগলকান্ডসহ দ্বিতীয় বউ আবিস্কারের খবরে প্রত্যেক পুরুষের বউ ভাবতে শুরু করেছে তাদের স্বামীরাও আড়ালে-আবডালে এসব করে বেড়ায়! মহতি কর্মকান্ডে কতিপয় অশুভ ছায়ায় মহৎ পুরুষদের পুরুষালি স্বভাব হুমকির মুখে। স্বামীর সম্পত্তির দৌড় আর সক্ষমতার মুরোদ জানার পরেও কেবল নারীই তার স্বামীকে সন্দেহ করতে পারে! অথচ তারা মানতে চায় না যে, শতাব্দীতে সাকলায়েন-মতিউরদের মত সৌভাগ্যবান দু'চারজন আসে! বাকিদের ভাবনা দুর্ভাবনা পর্যন্তই!
ধরুন, আইন-আদালত সাকলায়েন, মতিউর কিংবা বেনজিরদের কিছুই করতে পারলো না কিংবা করলো না! তবুও সমাজ সংসারে এই গ্যাংদের সম্পর্কে জনতার পার্সেপশান কেমন হবে? কেউ কোনদিন এদের নাম সম্মানের সাথে মুখে নেবে! পরের কথা ভুলে যান! যে স্ত্রী'সন্তানের সম্মৃদ্ধির জন্য এতো আয়োজন তারাই এদের আর কোনদিন ভালোবেসে বুকে টেনে নেবে? তাদের পরবর্তী প্রজন্মের অন্তত দুই পুরুষকে মানুষ গালি-ঘৃণায় পুষে রাখবে! নতুন ইস্যু এসে পুরোনোকে তলে ফেলবে তবুও মানুষ বড় অপরাধীদেরকে ভোলে না। ইতিহাসের পাতায় পাতায় তাদের ছাপ ছেপে থাকে।
কোন পাপ আসলে তার বাপকেও ছাড়ে না! ছোট ছোট পাপ করছেন কিংবা বড় বড় পাপের মধ্যে ডুবছেন তা কাউকে প্রায়শ্চিত্ত ছাড়া ছেড়ে যাবে না! এমনি এমনি পাপের মাফ হয় না! পাপের অবয়ব যখন হৃষ্টপুষ্ট হয় তখন ভোগান্তি বাড়তে শুরু করে! কর্মজীবন রাজার হালে কাটিয়ে অবসর জীবনে যদি আত্মীয় স্বজন রেখে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়, মামলা-গ্রেপ্তারের ভয় মাথায় নিয়ে ঘুরতে হয় তবে সে জীবনের চেয়ে অবমাননাকর জীবন আর আছে? কেবল চেয়ার আর পদ-পদবীতেই মানুষের পরিচয় এবং জীবন সীমাবদ্ধ নয়! তার একটা বাহিরের দুনিয়া আছে। সেখানে পাপী পাপের হালেচালে অপাংক্তেয় হতে শুরু করে।
পাপ করে দুনিয়ায় ধরা পড়েননি বলে ভাবছেন বেঁচে যাচ্ছেন? রহস্যে ঘেরা সময়ের আরেকটা পার্ট আছে। যেখানে সরিষা পরিমানের ভালো-মন্দ কর্ম পুরস্কার ও শাস্তি ছাড়া যাবে না। যে পাপের গোড়ায় রাষ্ট্র কিংবা ব্যক্তির অধিকার হরণের ইতিবৃত্ত থাকে, সে পাপ মাফ করে রব এসিরুমে রাখবেন সে আশা অবান্তর। পরকালে কথা পরে হবে! দুনিয়াতেও পাপের মাফ হয় না! পাপী যদি দামী পোশাক পরিধান করে, চাকচিক্যময় আবাসনে থাকে আর আকর্ষণীয় খাদ্য ভোগ করে তবুও মানসিক প্রশান্তি পায় না! পাপের প্রথম শাস্তি মানসিক অত্যাচার।
যে যতটুকু ঠকাবে, সে ততটুকু ঠকবে- এই মূলনীতিতেই সৃষ্টি আবর্তিত। ক্ষতির খতিয়ান পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে তবেই জীবনের আয়ু বায়ুর সাথে মিশবে। যে অন্যায়ের অনুশোচনা ঘুম কেড়ে নেয়, প্রিয়জন যারে ছেড়ে যায় কিংবা সমাজের মানুষের যারে দীর্ঘশ্বাসের অভিশাপে পোষে তার ব্যাংক-ব্যালেন্স হৃষ্টপুষ্ট হতে পারে তবে সেখানে সুখ নাই! অর্থ আর সুখ সমান্তরালে চলে না! বাহির থেকে কারো সুখ দেখা যায় না বরং ভালো থাকার অভিনয় দেখা যায়। যা কিছু সুখ তা সততায়। কোন ভালোকাজ বিনিময় ছাড়া যায় না। অনুরূপ ভালোকাজ ও ভালোকথা-ভালোবাসার উল্টোটাও তার দাম চুকিয়ে চলে!
সময় পাল্টায়, ক্ষমতা বদলায়! পাপের সম্রাজের দরবেশরা ভালোর সম্রাজ্যে ঘৃণ্য কীটে পরিনত হয়! অপরাধের দন্ড ভোগ করে। দুনিয়ার আইন-আদালত কিংবা লোকাচার থেকে মুক্তি মিললেও প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিতে একচুলও ভুল করে না। আবার কিরীটের কেউ কেউ আস্কারা পেয়ে পেয়ে মন্দ পথে হাঁটে। যে লোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, চরিত্রের সাধুত্ব বজায় রাখতে পারেনি এবং দম্ভ-অহংকার ছেড়ে সৎভাবে দায়িত্ব করেনি তার মোটা আয়ের সাথে সাথে শরীর ও মনে মোটা মোটা অসুখ আছে! মানসিক অস্থিরতা-অস্বস্তি এবং সমাজের ঘৃণা - এসব মন্দ মানুষের জীবন তছনছ করে দেয়। অন্যায়ের বিনিময়ে কেবল অন্যায়ের ঝড় ফিরে আসে না। কখনো কখনো অন্যায়ের ভূমিকম্প-সুনামীও পাপীর ঠিকানায় আঘাত করে। পাপকে ঘৃণা করো, পাপীপে নয়!- এই বাক্যে গলদ আছে। পাপীকে আরও বেশি ঘৃণা করতে হবে। তাকে জীবন ও সমাজের সব রাস্তায় বয়কট করতে হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন