সম্পর্কের রসকষ!  

কেউ যদি চাঁদের সাথে কথা বলা শিখে যায়, চোখের পানি নিজের হাতে মুছে নেয় .......

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক। |

প্রিয়জনের যত্ন না নিলে, তাকে প্রায়োরিটি না দিলে সম্পর্কের রূপ বদলায়। তখন সম্পর্ক আর পাঁচটা সাদামাটা অভ্যাসের মত অতীব সাধারণত্ব পায়। সবার মাঝে থেকেও কেউ যখন একা হয়ে যায় তখন কারো উপেক্ষা কিংবা অবমাননায় মন পোড়ে না। অভিমানে অভিমানে যে মন পরিনাম মেনে নেয় সে আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি দিয়ে নিজেকে মাপে না। সে একা জাগে, একা ভাবে। একা একাই শখের-স্বপ্নের কথা বলে। যে মানুষ আঘাতে আঘাতে আত্মকেন্দ্রিক হয় সে আসলে নিজেকে সবার থেকে সরিয়ে নেয়। 

 

কেউ যদি চাঁদের সাথে কথা বলা শিখে যায়, চোখের পানি নিজের হাতে মুছে নেয় এবং উৎসবের মাঝে বিরহের বিষন্নতার ছবি আঁকে- সে ভয়ঙ্কর রকমের শক্ত মনের মানুষ। কেউ তারে সময় না দিলেও সে নিজের জন্য বাঁচে, বাঁচতে শিখে। রাতের সাথে মিতালি পাতিয়ে দিনের আলোক থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। যে মানুষের অস্তিত্ব, ভালো থাকা কিংবা সুখে থাকা আপনার সাথে জড়িয়ে আছে তাকে সময় দিতেই হবে। তবেই আপনার সুখের গ্যারান্টি হবে। নয়তে ওধারে অসুখ। 

 

ব্যস্ততার বাহানায় এড়িয়ে গেলেও উৎসবের আবহ থাকতে পারে তবে মনের সুখ ফুরিয়ে যাবে। প্রিয়জনের মনের কোনে যদি অভিমানের কালো মেঘ জমে তবে এতো আয়োজন  কিংবা সম্পদের পাহাড় নিরর্থক।  সম্পর্কের সৌন্দর্যের জন্য ক্ষণগুলোকে স্মরণীয় রাখতে হবে। একসাথে জ্যোছনা দেখা, পূর্ণিমায়  হাতে হাত রেখে বেড়িয়ে পড়া, অবসরে সমুদ্রে স্নানে যাওয়া,  চিনাবাদামে  কিংবা চায়ের কাপে মুখোমুখি বসার মাঝে সুন্দরেে শোভা জড়িয়ে থাকে। পাহাড় আপনাদের ডাকলে একসাথে সাড়া দিয়েন। 

 

যান্ত্রিক জীবনে রোবটিক বন্ধনেও সময় পার হয়ে যাবে তবে সেখানে ভালোলাগা কিংবা ভালোবাসার অনুভূতি পাখনা মেলতে পারে না। সম্পর্কে যদি বিস্ময় না থাকে, পাগলামি ভর না করে কিংবা রাতদুপুরে গল্পগুজব না চলে তবে সময় জমে গেছে! জাগুন এবং সময়কে জাগিয়ে দিন। প্রিয়জনের মতামত মূল্যায়ণ করতে হয়, ভালোলাগা-মন্দলাগায় মূল্য দিতে হয় এবং খুশির শিহরণ জাগায় এমন ভাষায় ডাকতে হয়। সম্পর্কে যদি রস না থাকে তবে শুধু শরীরের কষ দিয়ে দীর্ঘদিন মিশে থাকা যায় না। 

 

সম্পর্কে সময় দিতে হয়। মানুষ আসলে সঙ্গ হয়। আপন মানুষ যখন দূরে যায় তখন দূরের মানুষ  শূন্যস্থানে এন্ট্রি নেয়। মনের মানুষ মন হারালে সে আসলে মানসিকভাবে মরে যায়। একজন অর্ধমৃত মানুষের মত ঘুরতে থাকে। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য ছাড়াই সবকিছুতে অভিনয় করে যায়। লোকে ভাবে মানিয়ে গেছে অথচ সে নিজেকে বারেবারে পোড়ায়। নিজেই নিজের মন পোড়ানোর গন্ধ শুঁকে আনন্দ পায়। মানুষ আসলে বিশ্বাসের জায়গা হারালে, ভরসা করা ঠিকানা খোয়ালে তখন ঠিকানা বিহীন ভাসমান বাঁচে। সে ঘাটে ঘাটে ভেড়ে কিন্তু তরী নোঙর করে না। 

 

সম্পর্ক যে পর্যায়ে আছে সেখান থেকেই যত্ন নিতে শুরু করুন। যেখানে মনের সাথে মনের লেনদেন সেখানে পছন্দ চাপিয়ে দেওয়া সমীচীন নয় এবং জোর করে কিছু আদায় করাও সম্ভব নয়। সঙ্গীর সঙ্গ এবং মনের রঙ্গ সমান্তরাল হলেই অঙ্গ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে যাবে। শত ব্যস্ততার মাঝেও খোঁজ-খবর রাখতে হবে, মন খারাপে সান্ত্বনা জানাতে হবে এবং সব বেদনার বিপরীতে দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে হবে। দ্বন্দ্ব হবে কিংবা দাঙ্গা হবে, সেসব ভুলেও সঙ্গ হবে এবং সঙ্গী হবে। মনের বোঝা চাপিয়ে দিতে ভরসাস্থল প্রয়োজন হয়। সঙ্গীর চেয়ে আপন আর কেউ নাই ভবে! তবে দূরত্ব বাড়িয়ে মনের বন্ধ্যাত্ব জন্ম দিয়ে লাভ কী? মন মনের সাথে থাকুক। মন মনকে জানুক। প্রিয়জন প্রিয় মানুষকে বুঝুক। তবেই তো সম্পর্ক সুন্দরের উচ্চতর মাত্রা পাবে।.

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন