মন্ত্রিসভার বৈঠক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রতি কোনো সহানুভূতি নয়

দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রতি সরকার কোনো সহানুভূতি দেখাবে না এবং দেখানো হচ্ছেও না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেছেন, সরকারের পুরো ব্যবস্থাপনা মিলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক-পরবর্তী ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে কোনো সহানুভূতি দেখানো হবে না। দুর্নীতি তো সবাই করে না। যারা দুর্নীতি করছে তারা সরকারের নজরে এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

 

সরকারের পুরো ব্যবস্থাপনা মিলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কারো দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরে সরকার কাউকে ছেড়ে দিয়েছে এমন নজির নেই। দুর্নীতি তো সবাই করে না। প্রশাসনের হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তা দুর্নীতি করে, আর বাকি সবাই বিব্রত হয়।

সরকারের তরফ থেকে অবস্থানটি পরিষ্কার করা হয়েছে।’

 

এদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সে যে-ই হোক, দুর্নীতি করলে কারো রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গত শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের এমন অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

 

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় একজন কর্মকর্তার পুরো কার্যক্রম তদারকি করা যায়। সরকার সেভাবেই কাজ করছে। গত ১৫ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সামনে আরো পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন,

রূপকল্প ২০৪১-এর মূল লক্ষ্য হলো—দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ জন্য সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। নির্বাচনী ইশতেহারেও স্বচ্ছ ও জবাদিহিতার কথা বলা হয়েছে।  

সাবেক  আইজিপি বেনজীর আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্যঃসাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির নানা অভিযোগ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সরকারপ্রধান এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদসচিবের কাছ থেকে এমন বক্তব্য এসেছে।

মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘দুর্নীতিতে জড়িতদের ব্যাপারে কোনো রকম সহানুভূতি দেখানো হবে না; দেখানো হচ্ছেও না। সেটি আমরা সিরিয়াসলিই ফলো করছি। তার পরও ফাঁকে ফাঁকে এই অপরাধ হচ্ছে। এটা এত কাঠামোর মধ্যে থাকার পরও হচ্ছে। এটি সব সমাজের সব জায়গায়ই হয় এবং সব কাঠামোর মধ্যেও যারা খুবই দুষ্টচিন্তার মানসিকতার, দুষ্টবুদ্ধির মানসিকতার, তারা এই কাজগুলো করতে চায়। যখনই এসব বিষয় নজরে আসে সরকারের তরফ থেকে কোনো প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান সম্প্রতি বলেছেন, মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির দেরাজ খুলে বসেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ বিষয়ে ইঙ্গিত করলে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সচিবরা এ বিষয়ে ভালো জবাব দিতে পারবেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে নানাভাবে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিংস আছে। কেবল দুর্নীতি না, এর বাইরেরও অনেক বিষয়ের বিচার আমরা সেখানে করি। শৃঙ্খলাজনিত থাকে, নৈতিক স্খলনের বিষয় থাকে। দুর্নীতি তার একটি অংশ। আমার কাছে এই তথ্য নেই যে, কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ রকম আমার নজরে এলে আমি আবার তদন্তের ব্যবস্থা করব। এর মধ্যে কিছু বিষয় হয়তোবা গণমাধ্যমে আসছে। তবে গণমাধ্যমের বাইরেও অনেক বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে এবং তদন্ত অনুযায়ী শাস্তিও হচ্ছে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘দুর্নীতির বাকি অংশগুলোর জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে। আলাদা এজেন্সি আছে। প্রত্যেকেই কাজ করছে। তাদের কাছে প্রমাণযোগ্য তথ্য এলে সিরিয়াসলি সেটা নিয়ে নামে। কাজের চাপ, লোকবলের অভাব ও রিসোর্সের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হয় যে কোন কাজটা আমি আগে করব। কারণ, দশটা অভিযোগ থাকলে আমাদের আগে নির্ধারণ করতে হয়, কোন কাজটা আমি আগে করব। দশটি কাজই তো আমরা একসঙ্গে করতে পারছি না।’

মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে তদন্তে যখন দুর্নীতি হিসেবে সাব্যস্ত হয়, আমাকে তখন একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া মানতে হচ্ছে। আমি তো তাকে জেলে পাঠাই না। তাকে বরখাস্ত কিংবা চাকরিতে রেখে তার বিরুদ্ধে ডিপি (বিভাগীয় মামলা) চালু করি। ডিপি চালু আছে। প্রশ্ন ওঠে, সে এখনো চাকরি করছে? এটার জবাব আমি কিভাবে দেব? আমার বিধানই এমন। তাকে চাকরিতে রেখেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

সরকারি কর্মচারীদের পাঁচ বছর পর পর সম্পদের হিসাব দেওয়ায় বিধান থাকা ১৯৬৯ সালে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা এখনো কার্যকর আছে কি না? জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অ্যাকশন তারা নিয়েছে কি না? কোনো সার্কুলার দিয়েছে কি না, সেটি আমি জেনে নিই।’

জানতে চাইলে সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, কাগজে-কলমে সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগ আছে। কিন্তু কার্যকর না হওয়ায় দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হলে সরকারের উচিত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করা। তদন্তের ভিত্তিতে জবাবদিহির আওতায় আনা। এরপর একসময় তারা শাস্তি পাবে।

স্বচ্ছতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সংসদে পাস হাওয়া বাজেট স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান।

গত রবিবার সংসদ অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পাস হয়েছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে এ বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন