ক্ষমতায় এলে স্টার্মার কি ব্রিটেনকে ইইউতে ফেরাবেন

যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের জনমত জরিপ বলছে, ১৪ বছর পর ক্ষমতায় ফিরছে লেবার পার্টি। ঋষি সুনাকের পরিবর্তে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ স্টার্মারের ওপরই আস্থা রাখছেন দেশটির ভোটাররা। ৬১ বছর বয়সী স্টার্মার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। জিতলে ২০১৬ সালের গনভোটকে পুনর্বিবেচনা করবেন কি না, সে বিষয়ে অবশ্য নির্বাচনী প্রচারে তিনি কোনো কিছু খোলাসা করেননি।

 

স্টার্মার যুক্তরাজ্যেকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে টেনে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু ইইউর জোটের বাইরে থেকে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া তার জন্য কঠিন বলে মত অনেকের। নির্বাচনী প্রচারে নিজে ব্রেক্সিট ইস্যুটিকে সামনে এনে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করতে চাননি বলে মনে করেন ইউরোপিয়ান মুভমেন্ট ইউকে সংগঠনের প্রধান মাইক গ্যালসওর্থি। তবে তার বিশ্বাস, ক্ষমতায় এলে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিপক্ষে যারা ভোট দিয়েছিলেন, তাদের কাছ থেকে এই ইস্যু নিয়ে চাপের মুখে পড়বেন স্টার্মার।

 

ব্রেক্সিট পুনর্বিবেচনার জন্য কতটা চাপে পড়বেন স্টার্মার?
ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে কতটা ক্ষতি হয়েছে, তার নানা ধরনের হিসাব রয়েছে। তবে ব্রিটিশদের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কাগজপত্রের জটিলতা যে আগের চেয়ে বেড়েছে তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। সবচেয়ে বড় অংশীদারের সঙ্গে বাণিজ্য যে কমে গেছে তা তো পরিসংখ্যানেই আছে।

 

 

ব্রিটেনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের হিসাবে, ব্রেক্সিটের পর থেকে ব্রিটেনের অর্থনীতি দুই থেকে তিন শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে।

২০৩৫ সাল নাগাদ এর প্রভাব পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রেক্সিটের কারণে ২০৩৫ সাল নাগাদ যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ এক তৃতীয়াংশ কমে যাবে। এর ফলে ৩০ লাখ কম চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।

 

মেনজিস নামের একটি অ্যাকাউন্টেন্সি প্রতিষ্ঠান জরিপের মাধ্যমে জানিয়েছে, ব্রিটেনের প্রতি পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি আবারও ইইউর একক বাজারে ফিরতে চায়। ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স বলছে, তাদের ৪১ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, ব্রেক্সিটের কারণে ইইউ দেশগুলোর সঙ্গে পণ্য বেচাকেনায় জটিলতা তৈরি হয়েছে।

 

ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের মহাপরিচালক শেভাউন হাভিল্যান্ড তাদের বার্ষিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘ইই থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে চ্যানেলের মধ্য দিয়ে আমাদের পণ্য ও সেবার বিক্রির প্রক্রিয়া আরো ব্যয়বহুল ও আমলাতান্ত্রিক হয়েছে।’

স্টার্মার কী চান, কী পেতে পারেন?
লেবার পার্টি ২০২০ সালে বরিস জনসনের সময় ইই ও ব্রিটেনের মধ্যকার বাণিজ্য ও অংশিদার চুক্তিকে আরো উন্নত করতে চায়। এর মূল উদ্দেশ্য হবে কাগজপত্রগত জটিলতা ও সীমান্তে পরীক্ষা নিরীক্ষার ধাপগুলো কমানো। যুক্তরাজ্য-ইইউ প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারেও জোর দিচ্ছে দলটি। কিন্তু প্রশ্ন হলো লেবার পার্টির আগ্রহ সত্ত্বেও এসব বিষয়ে ইইউ কতটা সাড়া দেবে।

কিংস কলেজ লন্ডনের ইউরোপীয় রাজনীতির অধ্যাপক আনন্দ মেনন মনে করেন, প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে ইইউ সাড়া দেবে না বলেই তার বিশ্বাস। বিশেষ করে গত বছর টোরি সরকারের সঙ্গে ইয়ুথ মোবিলিটি বিষয়ক এক চুক্তি নিয়ে ব্রাসেলসের প্রবল মতবিরোধ তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ক্ষমতায় এলে এ ক্ষেত্রে ভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন লেবার পার্টির নেতারা।

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, তারা নতুন করে ইয়ুথ মোবিলিটি কর্মসূচি হাতে নেবেন। স্টার্মার বলেছেন, শিল্পীদের জন্য যুক্তরাজ্য ও ইইউর মধ্যে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে তিনি কাজ করবেন।

বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ আইনি কাঠামো ও ইইউর আইনি বাধাগুলো দূর করতে দুই পক্ষেরই সহযোগিতা করা উচিত বলে মনে করেন জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতি বিষয়ক প্রধান মেলানি ফোগেলবাখ। কিন্তু বড় ধরনের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ইইউ খুব বেশ কিছু দিতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি।

ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইইউর বাইরে থেকে যুক্তরাজ্যের পক্ষে এই একক বাজারের সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে না। আর তা ২৭ দেশের জোটের জন্য খারাপ উদাহরণ হতে পারে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন