প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্বপালনের সক্ষমতা নিয়ে জো বাইডেনের খোদ ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বেশ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নিজ দলের সদস্য, সমর্থক এবং দাতাদের অনেকেই ইতোমধ্যে বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন। এ বিষয়ে উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে গতকাল শুক্রবার এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, একমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি করাতে পারেন।
এবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় আরো এক মেয়াদে দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে বাইডেন কতটা সক্ষম, এজন্য মনঃসংযোগ ধরে রাখার একটি পরীক্ষা (কগনিটিভ টেস্ট) এবং ভোটারদের আশ্বস্ত করতে সেই ফল প্রকাশে অস্বীকৃতি জানান বাইডেন।
বাইডেনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জর্জ স্টেফানোপোলোস। তিনি স্টেফানোপোলোসকে বলেন, ‘আমার প্রতিদিনই মনঃসংযোগ ধরে রাখার পরীক্ষা দিতে হয়। প্রতিদিনই আমার ওই পরীক্ষা হয়। আমি যা যা করি তার সব পরীক্ষা হয়।
’
গত ২৮ জুন নিজের পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বিতর্কে বিপর্যয়কর ফলাফলের পর থেকে নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য চাপ আসছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর। তবে বাইডেন জানিয়েছেন, এসব চাপকে তিনি গ্রাহ্য করছেন না।
এদিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কয়েকজন দাতা দলের প্রার্থী হিসেবে বাইডেনকে সরে দাঁড়াতে চাপ দিচ্ছেন। তারা প্রকাশ্যেই সতর্ক করে বলেছেন প্রার্থী পরিবর্তন না হলে তারা তহবিল প্রত্যাহার করে নেবেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কংগ্রেসের চার ডেমোক্র্যাট সদস্যও তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন। তারা হলেন, টেক্সাসের লয়েড ডগেট, অ্যারিজোনার রাউল গ্রিজালভা, ম্যাসাচুসেটস এর সেথ বোল্টন ও ইলিনয় রাজ্যের মাইক কুইগলি।
বোল্টন এক রেডিও সাক্ষাতকারে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন দেশকে যথেষ্ট সেবা দিয়েছেন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়তে নতুন প্রার্থীকে সুযোগ দিতে এখন তার আমাদের প্রতিষ্ঠাতা পিতা জর্জ ওয়াশিংটনের পদাঙ্ক অনুসরণের সময় এসেছে।’ তবে ডেমোক্র্যাট পার্টির কোন সিনিয়র নেতা তাকে সরে দাঁড়াতে বলেননি বলে জানিয়েছে তার প্রচার দল।
পুরো সাক্ষাত্কারজুড়ে স্টিফানোপোলোস প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালনের সক্ষমতা ও তার স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করে গেছেন। ২২ মিনিটের সাক্ষাত্কারে বাইডেন আরো বলেছেন, ‘এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে আমার চেয়ে যোগ্য কোনো প্রার্থী আছে বলে মনে হয় না।’
গত সপ্তাহে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম নির্বাচনী বিতর্কের বিপর্যয়কর ফলাফলের জন্য ক্লান্তি ও ঠান্ডা লাগাকে দায়ী করেছেন তিনি। বিপর্যয়কর এই বিতর্কের পর থেকে তিনি ডেমোক্র্যাটিকদের ভয় কমানোর চেষ্টা করেছেন।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা ঘটবে না।’ তিনি বলেন, ‘যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নেমে আসেন এবং বলেন, জো, নির্বাচনী দৌড় থেকে বেরিয়ে যাও। তখন আমি বেরিয়ে আসতাম। কিন্তু সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তো নিচে নেমে আসবে না।’
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট করে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বাইডেন। কিন্তু এদিনও তার গলার স্বর দুর্বল এবং মাঝে মাঝে কর্কশ শুনিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার উইসকনসিনের ম্যাডিসনে একটি নির্বাচনী সমাবেশেও অংশ নিয়েছিলেন বাইডেন। সেখানে তিনি বেশ উজ্জীবিত ছিলেন। বিতর্কে ভালো না করার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তখন থেকে অনেকেই বলছেন, জো কী করতে চলেছেন? আমার উত্তর, হ্যাঁ আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি এবং পুনরায় জিততে যাচ্ছি।’
বাইডেন সেদিন সমাবেশের মঞ্চে ওঠার সময় একজন ভোটারের পাশ কাটিয়ে যান, যার হাতে একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘পাস দ্যা টর্চ, জো’ অর্থাৎ ‘টর্চটা আরেকজনকে দাও, জো’। আরেকজন ভোট ভেন্যুর বাইরে বহন করছিলেন একটি লেখা ‘নিজের সুনাম রক্ষা করো, বিদায় নাও’।
তখন তিনি বলেন, ‘আমি এসব গল্প দেখছি যাতে বলা হচ্ছে আমি খুবই বয়স্ক।’ এরপর তিনি হোয়াইট হাউজে তার অর্জনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘দেড় কোটি চাকরির সুযোগ তৈরির জন্য আমি কী খুব বয়স্ক ছিলাম? আমি কী ৫০ লাখ আমেরিকানের জন্য শিক্ষার্থী ঋণ মওকুফের জন্য খুবই বয়স্ক ছিলাম? আপনার কী মনে করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারাতে আমি খুবই বয়স্ক?’ এ সময় সমবেত জনতা ‘না’ বলে জবাব দেয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়া এবং অন্য মামলাগুলোতে তিনি যেসব অভিযোগ মোকাবেলা করছেন সেগুলোর প্রসঙ্গ টেনে বাইডেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে বলেন ‘এক-ব্যক্তির অপরাধ তরঙ্গ’। প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের পর বাইডেনের ওপর সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ বাড়ছে। অনেকগুলো ঘটনার কথা বলা হচ্ছে যেখানে তিনি চিন্তার খেই হারিয়েছিলেন। যা তার বয়স ও মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন