রোকসানা আক্তার ||
সহকারী শিক্ষক (জীববিজ্ঞান) দি ফ্লাওয়ার্স কে. জি এন্ড হাইস্কুল, মৌলভীবাজার।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন বিজ্ঞান শিক্ষক আমি।জীববিজ্ঞান পড়াই, তাই ব্যবহারিক ক্লাস গুরুত্ব দিতে হয় বেশি। সাধারণত বন্ধ ছাড়া সারাবছরই ব্যস্ততায় কাটে। বিজ্ঞান ক্লাস করাতে আমার বরাবরই ভালো লাগে। নির্দিষ্ট সময়ে সিলেবাস শেষ করেও হাতে সময় থাকে।সকল অধ্যায়ের যথাযথ মূল্যায়নও করতে পারি বিভিন্ন ভাবে। মার্চ মাসের ১৬ তারিখ আমাদের শেষ ক্লাস হয়।১৮ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে স্বাভাবিক ক্লাস। প্রথম দিকে মনে হতো কোনো কাজই নাই। সিলেবাস শেষ করা সহ নানা চিন্তা মনে আসত।
সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন এর ক্লাস সম্প্রচারের কথা শুনে মনে স্বস্তি আসল।সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে কত সুন্দর ভাবে পৌঁছে যাচ্ছে পাঠ্যবইয়ের নানান সমাধান। অন্যান্য বিদ্যালয়ের সাথে সাথে আমরাও আমাদের বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু করি।সকল শিক্ষক স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অনলাইনে ক্লাস করাতে শুরু করে দিলেন। অভিভাবকদের সাড়া ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা বার্ষিকের সিলেবাস অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শেষ করলাম ভালো ভাবেই। শিক্ষকতায় বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নতুন একটি দিক অর্থাৎ অনলাইন ক্লাসের সূচনা হল। এতদিন আমরা তথাকথিত উন্নত পশ্চিমা দেশগুলোতে অনলাইন ক্লাসের প্রচলন দেখেছিলাম। করোনা পরিস্থিতিতে আমরা এবং আমাদের শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে এই অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত হতে চলেছি।
আমরাও মনে শান্তি ও তৃপ্তি পেলাম ক্লাস করাতে পেরে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগলো শিক্ষকদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ দেখে।লক্ষ লক্ষ শিক্ষক অনলাইন ক্লাসে ব্যস্ত ছিলেন এতদিন। এখনও অনেকে আছেন। একটা স্বাভাবিক ক্লাসের চেয়ে অনলাইন ক্লাসে অনেক বেশি প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাস করাতে হয়। এতে নিজের ক্লাসের ঐ বিষয়ে যথেষ্ট ভালো অনুশীলন হয়েছে বলে আমি মনে করি। আন্তরিকভাবে একেকটা ক্লাস করেছেন সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ।নিজের সবটুকু জ্ঞান ঢেলে সাজানো ছিল প্রত্যেকটা ক্লাস। যথেষ্ট সময় থাকায় আমি অনেক ক্লাস দেখেছি সম্মানিত স্যার ও ম্যাডামদের। শ্রদ্ধা ও অভিবাদন জানাচ্ছি সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দকে। সবার মতো আমিও জীববিজ্ঞানের ক্লাস করেছি।একটা স্বাভাবিক ক্লাসের চেয়ে অনলাইন ক্লাসের বিভিন্ন পার্থক্য আমি অনুধাবন করলাম।
স্বাভাবিক ক্লাসে শিক্ষার্থীরা আমাদের সামনেই থাকে। তাই পাঠ বুঝানোর পরপরই আমরা তাদেরকে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে ঐ পাঠটা কতটুকু বুঝতে পারলো তা যাচাই করে নিতে পারি।এছাড়া তারা যাতে ক্লাসে মনযোগী থাকে,সে বিষয়েও বিশেষ সচেতন থাকি। অনলাইনে আমরা অধিকাংশই লাইভ ভিডিও বা রেকর্ডের মাধ্যমে ক্লাস করেছি। যাতে শিক্ষার্থীরা কতজন অংশগ্রহণ করেছে সে বিষয়ে আমাদের সাথে সাথে ধারণা করা সম্ভব ছিল না। আমার অনুধাবন মতে যারা সবসময় ক্লাসে মনযোগী, তারাই অনলাইন ক্লাসে বেশি মনযোগী ছিল। বাকীদের মধ্যে সচেতন পরিবারের শিক্ষার্থীরা ক্লাস দেখছে বেশি। অভিভাবকরা খেয়াল রেখে ক্লাস করিয়েছেন। কিন্তু যাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করার আর্থিক সামর্থ নেই, তারা ক্লাস করার সুযোগ পায়নি। স্বাভাবিক ক্লাসের সাথে সাথে অনলাইন ক্লাস ভবিষ্যতে চালিয়ে নিলে আমরাও উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে পারবো। এক্ষেত্রে ইন্টারনেটের খরচ কমাতে সরকারী উদ্যোগ বিশেষ প্রয়োজন।
সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন এর ক্লাস সম্প্রচারও স্বাভাবিক ক্লাসের সাথে সাথে চললে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে বলে আমি মনে করছি। সবচেয়ে স্বস্তির বিষয় হলো আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সময়মতো সকল নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে শিক্ষক শিক্ষার্থী উভয়েই বাড়তি উদ্বেগে থাকতে হয়নি। যেহেতু আমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের খবরাখবর জানা আমার জন্য সহজ।এই করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকরা আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকই এমপিও বিহীন অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান থেকে তাদেরকে বেতন দেওয়া হয়।যেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের বেতন দিতে পারেননি তাদের অবস্থা একবার ভেবে দেখুন। আমরা বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে দেখেছি শিক্ষকরা বেতন না পেয়ে অন্য পেশায় যেতে হয়েছে। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যেন আর্থিক সংকটে দিন কাটাতে না হয় এবং তাদেরকে যেন বেতনের অভাবে চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে না হয় সেই দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানাই। সবশেষে বলবো একজন শিক্ষক হিসেবে এই করোনা পরিস্থিতিতে আমার মিশ্র অনুভূতি হয়েছে। সকল সম্মানিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি।খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে যাক পুরো পৃথিবী - এই প্রার্থনা করি সবসময়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন