চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ও প্রিমিয়ার লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে আজ বুধবার আলাদা বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুটি বৈঠকই হবে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হলে। এসব বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং আগামী দিনগুলোতে সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে।
২০১৬ সালের শি চিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কৌশলগত মাত্রায় উন্নীত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।
পারস্পরিক স্বার্থে সেই সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে এবার আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ ও চীন একটি যৌথ বিবৃতি দেবে। এতে আলোচনা ও সিদ্ধান্তগুলোর প্রতিফলন থাকবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ চীনের সহায়তা কামনা করবে।
একই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চীনকে সমর্থন দিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর সফল ও ফলপ্রসূ হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
সফরসূচি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর চলতি চীন সফরের তৃতীয় দিন সকালে ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপলে’ চীনের প্রিমিয়ার লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের প্রিমিয়ার দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলসহ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এরপর দুই দেশের সরকারপ্রধানদের উপস্থিতিতে ২০টির মতো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত এবং কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
চীন সফরের প্রাক্কালে গত রবিবার ঢাকায় সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা আছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত ব্যাংকুয়েটের (ভোজের) মাধ্যমে গ্রেট হলে প্রিমিয়ারের সঙ্গে বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।
সফরসূচি অনুযায়ী, আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল স্বাধীনতারও আগে ১৯৫২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক চীন সফরের মধ্য দিয়ে। ওই সফরে চীনের তৎকালীন নেতা মাও জেদংয়ের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বঙ্গবন্ধু রচনা করেন ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি। চীন ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এর ধারাবাহিকতায় দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উন্নয়নের পথে অগ্রসরমান আছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ২০১৬ সালে শি চিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ‘কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিতে’ উন্নীত হয়। গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে চীনের পক্ষ থেকে সরকারি সফরের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়। চীন বাংলাদেশের অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
প্রিমিয়ার লি ছিয়াংয়ের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে গেছেন।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন