বাংলাদেশকে চার ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধা দেবে চীন

গ্রান্ট বা সহায়তা, সুদমুক্ত ঋণ, কনসেশনাল বা ছাড়যুক্ত ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ—বাংলাদেশকে এই চার ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধার প্যাকেজ দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। গতকাল বুধবার বিকেলে বেইজিংয়ের গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সেই সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট নিজে থেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেন। তিনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে এবং প্রয়োজনে আরাকান সেনা দলের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

 

এদিকে চীনের প্রিমিয়ার লি ছিয়াং বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন চীনা মুদ্রা আরএমবি (প্রায় এক হাজার ৬১৫ কোটি টাকা) সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল বেইজিংয়ের সেন্ট রেজিস হোটেলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি ও প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

চীনের প্রিমিয়ার লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে গতকাল সকালে এবং প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়।

এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের অসুস্থতার কারণে শেখ হাসিনা সফরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকালই ঢাকায় ফেরেন।

 

বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই চীন সফর শতভাগ সফল হয়েছে।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট বৈঠকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নকে অভূতপূর্ব বর্ণনা করেন এবং চীনা সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান। শি চিনপিং বলেন, ২০২৫ সালে চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে সম্পর্ককে দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত করে এ উদযাপনকে অর্থবহ করতে তাঁরা প্রস্তুত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট ‘গুড গভর্ন্যান্স নিডস গুড পার্টি’ বা ‘সুশাসনের জন্য ভালো দল প্রয়োজন’ মন্তব্য করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যোগাযোগ বৃদ্ধি ও বন্ধনের ওপর জোর দেন। শি চিনপিং বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ, কারিগরি, কৃষি ও উৎপাদন খাতে সহায়তা এবং ছাত্রবৃত্তি বৃদ্ধির আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনের জন্য একক বরাদ্দ ৮০০ একর জমিসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আইটি ভিলেজগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ থেকে পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিক, আম, অন্যান্য ফলসহ পণ্য আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার আহ্বান জানালে চীনের প্রেসিডেন্ট ইতিবাচক সাড়া দেন।

 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বেইজিংয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশকে ১০০ কোটি আরএমবি অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন চীনের প্রিমিয়ার লি ছিয়াং। চীনা প্রিমিয়ার বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

চীনা প্রিমিয়ার লি ছিয়াংকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে জাতির পিতার চীন সফর এবং এরপর শেখ হাসিনার ছয়বার চীন সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। চীনের প্রিমিয়ার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে চীন অনেক গুরুত্ব দেয়। পৃথিবীর যে কয়েকটি দেশে চীন সবচেয়ে বেশি প্রকৌশল খাতে সহায়তা দেয় তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, আগামী বছর বাংলাদেশ ও চীনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রিমিয়ারসহ অন্যদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁরা যে বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করতে যাচ্ছেন সেটি বলেছেন। কাঁঠাল ও পেয়ারা এ দুটি ফলও আমদানির বিষয়ে তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, ওষুধ, সিরামিকসহ অন্যান্য পণ্যও যাতে আমদানি হয়, তার ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বারোপ করেছেন। তাঁরাও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা ও চীনের প্রিমিয়ারের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং মানবতার কল্যাণে দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।

ব্রিকসে যোগদান বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেকোনো ফরম্যাটে অর্থাৎ ব্রিকস যেভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়, সেভাবেই বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছেন। চীন এ ক্ষেত্রে সমর্থন করবে বলে জানিয়েছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন যেসব সুবিধা পাচ্ছে, সেগুলো যাতে ২০৩২, অন্তত ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে, সে ক্ষেত্রে চীনের সহায়তা কামনা করেছেন। এ বিষয়ে চীনের প্রিমিয়ার ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রিমিয়ার লি ছিয়াংয়ের আমন্ত্রণে গত সোমবার সরকারি সফরে বেইজিংয়ে যান। গত জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার এটিই প্রথম চীন সফর।

এর আগে গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ে সঙ্গে বৈঠক করেন। ২০১৬ সালে শি চিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের সম্পর্ক ‘সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল। এবার তা ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশদারিত্বে’ উন্নীত করার লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন