সদস্য পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে ইউক্রেন ‘অপরিবর্তনীয় পথে’ রয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। গত বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত ন্যাটোর ৭৫তম বার্ষিকীর সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের সূত্রপাত কার্যত ইউক্রেনের ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়ার আগ্রহ থেকেই। এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে ইউক্রেনকে আগামী বছরের মধ্যে ৪৩.৩ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে ন্যাটো।
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো পুরোপুরি সম্পৃক্ত—এ মন্তব্য করে জোটটির হুমকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে রাশিয়া। গত বুধবারের শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের আনুষ্ঠানিক সময়সূচির বিষয়ে সম্মত হতে পারেননি জোটের নেতারা। তবে ৩২ সদস্যের এই জোট বলেছে, চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি তাদের অটল সমর্থন রয়েছে। জোটের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘কিয়েভের ন্যাটোর সদস্য পদ ও ইউরো-আটলান্টিক একীভূতকরণের অপরিবর্তনীয় পথকে সমর্থন দিয়ে যাব আমরা।
’
ন্যাটোর বিবৃতিতে আর যা আছে
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আরো বেশি একীভূত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে ন্যাটো বলেছে, আগামী বছরের মধ্যে ইউক্রেনকে ৪৩.৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হবে। এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এর আওতায় পড়বে।
ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ‘ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন কোনো দাতব্য কাজ নয়, বরং এর সঙ্গে নিজেদের স্বার্থ যুক্ত।’ ন্যাটোর এবারের শীর্ষ সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন।
বৈঠকে জোটের সব নেতা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, নিরাপত্তার জন্য ‘সবচেয়ে মারাত্মক ও সরাসরি হুমকি’ রাশিয়া। ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর সম্পর্ক মজবুত করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর জন্য সামরিক সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ সমন্বয়ের জন্য একটি নতুন ইউনিট গঠনে সম্মত হয়েছেন জোটের নেতারা।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ন্যাটোর পৃথক সদস্যদের সহায়তার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সম্মিলিত এসব পদক্ষেপ জোটে ইউক্রেনের সদস্য পদের পথকে প্রশস্ত করবে। এতে আরো বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংস্কারসংক্রান্ত বিষয়ে বাস্তব অগ্রগতি করেছে ইউক্রেন। তবে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ হলেই শুধু তাদের আনুষ্ঠানিক সদস্য পদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
অস্ত্র সরবরাহ শুরু
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস থেকে ইউক্রেনে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠানো শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো এই আধুনিক যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে ইউক্রেন। চলতি গ্রীষ্মেই এসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা যাবে।
চীনের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চীন ‘সহায়তাকারী নির্ধারকের’ ভূমিকা রাখছে বলে ন্যাটো যে অভিযোগ তুলেছে তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেইজিং মিশন। ন্যাটো কথিত চীনা হুমকির প্রচার এবং সংঘাত উসকে দেওয়া বন্ধ করার আহবান জানিয়েছে। জবাবে চীনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে ‘সংঘাত উসকে দেওয়ার’ বিরুদ্ধে ন্যাটোকে সতর্ক করেছে বেইজিং।
এ ছাড়া এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে ন্যাটোকে দূরে থাকার আহবান জানিয়ে চীন বলেছে, চীনের প্রতিবেশীদের সঙ্গে ন্যাটোর সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা দেশটির স্বার্থের পাশাপাশি এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন করেছে।
অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘ন্যাটোর হুমকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া। পশ্চিমাদের জোট ন্যাটো এখন ইউক্রেন যুদ্ধে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েছে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটো সদস্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘রাশিয়া ও ন্যাটোর সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা উদ্বেগজনক। সংঘাতের দিকে চালিত হওয়ার যেকোনো পদক্ষেপ সচেতনভাবে এড়ানো উচিত।’ আঞ্চলিক জোট সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) ন্যাটোর বিকল্প নয় বলেও মন্তব্য করেন এরদোয়ান।
মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে ক্ষুব্ধ রাশিয়া
ন্যাটোর সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে জার্মানিতে পর্যায়ক্রমে দূরপাল্লার মার্কিন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হবে। স্নায়ুযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো এমন পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, নতুন হুমকির বিষয়ে সামরিক পদক্ষেপ নেবে মস্কো।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন