কোটার নিপাত যাক : বিক্ষোভ সমাবেশে জেএসএফ বাংলাদেশ ও জাগপা যুক্তরাষ্ট্র

হাকিকুল  ইসলাম খোকন,,

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা কোটাবিরোধী যে আন্দোলন করছে, তা মেধার বিকাশ ও দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই করছে। রাষ্ট্রযন্ত্রে যাতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মেধা যুক্ত হয় এটাই তাদের চাওয়া; এতে তো দোষের কিছু নেই।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।  তার প্রেক্ষিতে জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম (জেএসএফ )বাংলাদেশ ও জাগপা   যুক্তরাষ্ট্র সহ সুস্থ  প্রবাসীরা এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

নিউয়র্কের চার্চ ম্যাকডোনাল্ডে  গত ১৩ জুলাই  ২০২৪,রবিবারের এই  বিক্ষোভ সমাবেশে   জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম (জেএসএফ )বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন হাজি আনোয়ার হোসেন লিটন ,   জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) যুক্তরাষ্ট্র সভাপতি এ এস এম রহমত উল্লাহ ভূঁইয়া ,   জাগপা সেক্রেটারি নোমান সিদ্দিকী , আশরাফুল হাসান , নুরুল হুদা , আসিফ জারিফ  সহ অনেক নেতৃবৃন্দও প্রবাসীরা।

মেধাবীদের সাথে প্রতিযোগিতা না করে কোটার মাধ্যমে চাকুরী রাস্তায় ভিক্ষে করার চেয়ে ও নিন্দনীয় , মেধার মূল্যায়ন চাই , কোটার নিপাত যাক স্লোগানে প্রবাসীরা কোটার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন , বক্তারা বলেন -  কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি বাস্তবায়নে সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে। যতই বাধা আসুক, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক থেকে ক্লাসে ফিরে যাবে না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সরকারও শুরুতে তাদের প্রতি নমনীয়তা পোষণ করেছে। তবে এখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে কিংবা দমাতে বলপ্রয়োগের পথে হাঁটছে।

গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে রাজধানীর কিছু এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ বাধা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা এ বাধা উপেক্ষা করেই তাদের কর্মসূচি পালন করেছে এবং করে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার  ও দলীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পরামর্শের সঙ্গে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে’। সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ বলেছে, রাস্তায় কর্মসূচি অব্যাহত রাখলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্র লীগও মাঠে নেমেছে।

সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে। রোববার অফিস খোলার পর সড়ক দখল করে আন্দোলন করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তি প্রয়োগের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বোঝা যাচ্ছে, সরকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিক সমাধান সরকারের হাতেই নিহিত। সরকারই পারে এর দ্রুত সমাধান করতে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে কেউ ৪০ বছর , কেউ ৫০ বছর ধরে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে , এমন অনেক নেতা আছে যারা কবে কোথায় ঝড়ে বক মরে অন্যের কেরামতি বাড়ে এমন অবস্থায় কিছু একটা করেছিল সেই ছবি বিক্রি করে শুন্য থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ মালিক , তারা জীবনে কোন চাকুরী করে নাই তার পর ও হাজার কোটির মালিক , এসব দুর্নীতি, লাঠিয়াল বাহিনী ছাড়া কেউ করতে পারে না।

 আওয়ামী সরকার উন্নয়নের যিকির তুলে এদেশের মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করেছে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে। আজ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম ও নৈতিকতাকে সরিয়ে দিয়ে এদেশের ছাত্র সমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করা হচ্ছে। শিক্ষিত তরুণ যুবকেরা শহরে ঘুরে ঘুরে চাকরী না পেয়ে বেকারত্বের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। অথচ কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের মাধ্যমে মেধাবীদের বঞ্চিত করে দলীয় কর্মীদের নিয়োগ চূড়ান্ত করার চক্রান্ত করছে। বেকারত্ব দূর করতে না পারা ও মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে না পারার ব্যর্থতা সরকারের।

 দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশের ক্ষমতার মসনদে বসে থেকে উন্নয়নের জিকির তোলা আওয়ামী লীগ সরকারকে এর জবাব দিতে হবে। বর্তমান সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে দেশকে রাহুগ্রাসে পরিণত করতে চাচ্ছে এবং দলীয় লোকদের দ্বারা লাগামহীন দুনীর্তি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে অচল করে দিচ্ছে।

যে দেশে এখনো সঠিক কোন তালিকা নেই , প্রতিদিন দেখা যায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার খবর সেই  কথিত লোকেরাই দেশের কোটা ভোগের জন্য রাজনীতির পাচাটা গোলামীতে ব্যস্ত।

বক্তারা জাতির উদ্দেশ্যে বলেন - ৭১ সালে কি দেশ স্বাধীন হয়েছিল খয়রাতি সুবিধা একটি চক্র ভোগ করবে এই নীতিতে ?
 ধিক্কার দিয়ে তারা আরো বলেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্দারা আজ রিক্সা চালায় আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এমপি মন্ত্রী সচিব।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন ‘আন্দোলন করে আদালতের রায় পরিবর্তন করা যায় না’। প্রধান বিচারপতিও সঠিক কথা বলেননি। আন্দোলন করে আদালতের রায় পরিবর্তন তথা নতুন আইন প্রণয়ন করে করা যায় সেটা ২০১৩ সালে প্রমাণ হয়েছে। ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের চাপে নতুন করে আইন প্রণয়ন করে জামায়াতের সহকারী সম্পাদক আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়া হয়েছিল।

দেশের এই সংকটজনক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেয়া এবং ভবিষ্যত সংকট মোকাবেলায় প্রশাসনে মেধাবীদের যুক্ত করার বিকল্প নেই। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যে দাবিতে আন্দোলন করছে, তার মধ্যেই দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি নিহিত। তারা যথাযথভাবেই বিষয়টি সরকারের কাছে তুলে ধরেছে। এক্ষেত্রে সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসবে বলে আমরা আশা করি। মনে রাখতে হবে, যারা আন্দোলন করছে, তারা আমাদেরই সন্তান। তাদের কাছে হেরে গেলে বা তাদের দাবি মেনে নিলে সরকারের কোনো লজ্জা নেই।

সন্তান যদি ভুল করে, তাতে বাবা-মা ছাড় দেয়। যৌক্তিক দাবি করলে তা মেনে নেয়। সরকারকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে সন্তানের দৃষ্টিতেই দেখতে হবে। তাদের উপর বলপ্রয়োগ করা বা দমানোর পদক্ষেপ কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এর নেতিবাচক প্রভাব সর্বত্র পড়বে। কোটা মোটেও আদালতের বিষয় নয়, সরকারের নীতিগত বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। নির্বাহী আদেশে কিংবা সংসদে আইন পাস করে এ দাবি দ্রুত চুকিয়ে দিতে পারে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী নয়। তারা লেখাপাড় শেষে মেধার ভিত্তিতে চাকরি চায়; এটা কোনো অনৈতিক চাওয়া নয়। সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকায় দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েরা চাকরি না পেয়ে বিদেশ চলে যাচ্ছেন। দেশে চাকরি না পেয়ে বিদেশে গিয়ে লেখাপাড়া করে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) চাকরি করে মেধার স্বাক্ষর রাখছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বের সেরা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (ক্যালটেক), লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ,  যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ইউনিভার্সিটিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। প্রচণ্ড মেধাবী ওই ছেলেমেয়েদের সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন