কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় সোমবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, কোটা ইস্যুতে বাংলাদেশে কী ঘটছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ করছে। 

গতকাল রবিবার কোটা আন্দোলন ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ হামলা করে অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থীকে আহত করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।

 

 

বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান এবং বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগের পক্ষে এবং কোটা বাতিলের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেওয়ার পরই ক্ষমতাসীন দলের শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করেছে এবং এতে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এমনকি যেসব আহত শিক্ষার্থী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছিল, হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে তাদের ওপরও হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশে চলমান ব্যাপক এই বিক্ষোভ নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী?’

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবগত রয়েছে।

হামলায় শত শত মানুষ আহত হয়েছেন ও দুজন নিহত হয়েছেন। আমরা এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।

 

তিনি আরো বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ যেকোনো বিকাশমান গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সহিংসতার নিন্দা করি।

এ ছাড়া যারা এই সহিংসতার শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনাও প্রকাশ করেন ম্যাথিউ মিলার।

 

নিহতের তথ্য কোথায় পেল যুক্তরাষ্ট্র
কোটা সংস্কার আন্দোনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায দুইজন নিহত হওয়ার খবর যুক্তরাষ্ট্র কোথা থেকে পেয়েছে, সেই বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য দেননি। এ সময় ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থাকা কোনো সাংবাদিকই তার এই তথ্যের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করেননি। 

গত রবিবার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পরে রবিবার রাত থেকে প্রতিবাদী স্লোগান নিয়ে মিছিল করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রাতে প্রথমে রোকেয়া হলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসেন। তারা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন- ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিক্ষোভ শেষে হলে ফিরে যান তারা। একই সময়ে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

 

একই ইস্যুতে সোমবার ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুরের দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা নানা স্লোগান দেন। তবে তাদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলাদা অনুষ্ঠানে তাদের স্লোগানের ভাষার তীব্র সমালোচনা করেন।

এরপর দুপুর ২টার দিকে ছাত্রলীগ বিজয় ৭১ হলসহ বিভিন্ন হলে আন্দোলনকারীদের বাধা দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে ছুটে যান আন্দোলনকারীরা। এ সময় ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। উভয় পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এর পর থেকে গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিকেল ৪টার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এ সময় ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। এতে অন্তত ৫০০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর জানান আন্দোলনকারীরা।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন