সাম্প্রতিককালে সিলেট মেট্রোপলিটন ও মহানগর গোয়েন্দাপুলিশের অভিযানে প্রায় প্রতিদিনই ভারতীয় চোরাই চিনির চালান ধরা পড়ছে। এর মধ্যে পৌনে দুই কোটি টাকার চালান পর্যন্ত রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একপ্রকার নীরব ছিলো জেলা পুলিশের আওতাধীন থানাগুলো। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর থানাপুলিশও এ বিষয়ে ছিলো তৎপরহীন।
তবে নতুন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নান যোগদানের পর শুরু হয়েছে অ্যাকশন, বেড়েছে থানাগুলোর তৎপরতা। ফলে কয়েকদিন ধরে জেলার গোয়েন্দা ও থানাপুলিশের জালেও ধরা পড়ছে ভারতীয় চোরাই চিনির বড় বড় চালান। গত ১০ জুলাই নতুন এসপি সিলেটে যোগদান করেন।
সর্বশেষ রবিবার দিবাগত রাত ও সোমবার ভোরে দুটি অভিযানে ৪৪৫ বস্তা ভারতীয় চোরাই চিনি জব্দ করে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জ থানাপুলিশ। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ২৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অভিযানে আটক করা হয় চার চোরাকারবারিকে।
জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল জানায়, জকিগঞ্জ থানাপুলিশের একটি টিম সোমবার (১৫ জুলাই) ভোরে উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের নিজগ্রাম গেইট নামক স্থানে একটি ডিআই পিকআপ আটক করে। পরে তল্লাশি চালিয়ে সে পিকআপ থেকে ৫৮ বস্তা ভারতীয় চোরাই চিনি জব্দ করে পুলিশ।
এসময় তিনজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন- মুসলিম উদ্দিন (২২), জসীম উদ্দিন (৩৮) ও আক্তার উদ্দিন (২৪)।
এর আগে রবিবার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোয়াইনঘাট থানাপুলিশের একটি টিম উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের দক্ষিণ প্রতাপপুর গ্রামের আমান উল্লাহের বসতঘর থেকে ৯৮ বস্তা ও গণি মিয়ার বসতঘর থেকে ২৮৯ বস্তা ভারতীয় চোরাই চিনি জব্দ করে। এসময় আমান উল্লাহকে আটক করে পুলিশ।
তার আগে শনিবার (১৩ জুলাই) জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি অভিযানে জৈন্তাপুর থানাধীন চিকনাগুল এলাকায় পৃথক অভিযানে ভারতীয় চিনিভর্তি দুটি ট্রাক আটক করা হয়। পরে ট্রাক দুটি তল্লাশি করে ৪৮০ বস্তা চিনি জব্দ করে পুলিশ। এ সময় চিনি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত দুটি ট্রাক ও দুজন চালককে আটক করা হয়।
উল্লেখ্য, সিলেটে যোগদানের পরদিন বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সিলেটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নতুন এসপি আব্দুল মান্নান।
এসময় তিনি বলেন- ‘কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে যোগ্যতার পরিচয় পাবেন। আমি কেমন মানুষ বা কেমন ব্যক্তি তা বিচার বিশ্লেষণ করবেন আপনারা। আগে কোনো আশ্বাস দিতে চাই না- আমি কী করবো বা করতে পারবো। কাজের মাধ্যমে আমি আমার যোগ্যতার পরিচয় দিতে চাই।’
সিলেটে আসার আগে আব্দুল মান্নান কুমিল্লার পুলিশ সুপার ছিলেন। তার আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগে কাজ করেছেন তিনি।
সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান (বিপিএম-বার) সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘সিলেটে আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। আগে এখানে কী হয়েছে সেটি আমার দেখার বিষয় নয়। সিলেটে যোগদান করে আমি আমার দায়িত্ব পালন শুরু করেছি। পুলিশের প্রতি অনেক জনপ্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা পূরণে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। রাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত দায়িত্বকে আমি পবিত্রই মনে করি সবসময়।’
এক প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন- ‘আসলে এটি সত্যি যে, অধিকাংশ সময় চোরাচালানের বাহক আটক হন। তবে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে বা তদন্তে যে কারো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন