ট্রাম্পের ওপর হামলা : সামনে এলো ইরানি ষড়যন্ত্রের কথা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর পেনসিলভানিয়ায় সমাবেশ চলাকালীন হামলার পর তার সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হামলার ঘটনার তদন্তে সামনে এসেছে এক উল্লেখযোগ্য তথ্য। জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে হত্যার এক ইরানি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানতে পারার পর মার্কিন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তার সুরক্ষা বাড়ানো হয়েছিল। তবে ট্রাম্পকে হত্যার কথিত ইরানি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে শনিবার পেনসিলভানিয়ায় হামলার ঘটনার কোনো যোগ নেই বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

 

এদিকে ইরানি ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ্যে আসার পর ট্রাম্পের নিরাপত্তাব্যবস্থা যে আরো মজবুত করা হয়েছিল, সে কথা প্রকাশ্যে আসার পর অন্য একটি প্রশ্নও উঠেছে।। সেটা হলো সুরক্ষা বাড়ানোর পরও বছর কুড়ির থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস কিভাবে সমাবেশের কাছে থাকা একটি ভবনের ছাদের ওপরে উঠতে পারলেন এবং ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর জন্য যথেষ্ট কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন।


 

সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস ও ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা দলকে এই ইরানি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানানোও হয়েছিল।

যার ফলস্বরূপ মজবুত করা হয়েছিল তার নিরাপত্তা বেষ্টনী। গোয়েন্দা সূত্রগুলো সিবিএসকে জানিয়েছে, ইরানি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জানার পর তার পাল্টাজবাব হিসেবে গত জুনেই নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস। ট্রাম্পের এই নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ছিল অতিরিক্ত কাউন্টার-অ্যাসল্ট (পাল্টাআক্রমণ আটকানো) এবং কাউন্টার-স্নাইপার (শত্রু স্নাইপারকে খুঁজে বের করে প্রতিরোধ করা) এজেন্ট, ড্রোন ও রোবোটিক কুকুর।

 

সিবিএস জানিয়েছে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ইরানি অভিযানের বিবরণ পাওয়া গিয়েছিল ‘মানব উৎস থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের’ মাধ্যমে।

একই সঙ্গে তার ওপর আক্রমণ নিয়ে ইরানিদের মধ্যকার কথোপকথন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও মার্কিন কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছিল।

 


 

প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওসহ কর্মকর্তারা তেহরানের কাছ থেকে এর আগে হুমকি পেয়েছেন। ২০২০ সালে ইরাকে ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করতে ড্রোন হামলার নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের কর্মকর্তরা এ জাতীয় হুমকি পেয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও জাতিসংঘে ইরানি মিশন এই খবরকে ‘অপ্রমাণসিদ্ধ ও বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। একই সঙ্গে তারা পাল্টা দাবি জানিয়ে বলেছে, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একজন অপরাধী, যার বিচার আদালতে হওয়া উচিত ও তার শাস্তি পাওয়া উচিত’।

 

যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের মুখপাত্র অ্যান্থনি গুগলিয়েলমি বলেছেন, ‘সিক্রেট সার্ভিস ও অন্যান্য সংস্থা প্রতিনিয়ত হুমকির নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপও নিচ্ছে।’

তার কথায়, ‘সিক্রেট সার্ভিস হুমকির বিষয়কে গুরুত্বসহকারে দেখে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়। এইটুকু বলা ছাড়া কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকির বিষয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারব না।’

অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রচার শিবির এ বিষয়ে কোনোও রকম মন্তব্য করতে নারাজ। তারা ‘নিরাপত্তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করে না’ জানিয়ে এসংক্রান্ত বিবিসির প্রশ্ন সিক্রেট সার্ভিসের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন জানিয়েছেন, ‘মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা কয়েক বছরই ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইরানের হুমকির বিষয়টির ওপর নজর রাখছিলেন। সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানের প্রতিশোধস্পৃহা থেকেই এ জাতীয় হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমরা এটিকে জাতীয় ও স্বদেশের নিরাপত্তা বিষয় বলে বিবেচনা করি ও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।’

তবে তিনি এ-ও বলেছেন, ডোলান্ড ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে সমাবেশের সময় যে ব্যক্তি গুলি চালিয়েছিলেন বলে শনাক্ত করা হয়েছে, অর্থাৎ থমাস ম্যাথিউ ক্রুকসের সঙ্গে ‘বিদেশি বা দেশীয় কোনো সহযোগী বা সহষড়যন্ত্রকারীর’ যোগসূত্রের কথা তদন্তে জানা যায়নি।

সর্বশেষ ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের এক সদস্যর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ তুলে জানিয়েছিল, ওই ব্যক্তি সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। প্রসিকিউটরদের মতে, ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার ‘প্রতিশোধ নিতেই ওই ষড়যন্ত্র’ করে।

পেনসিলভানিয়ার বাটলার কাউন্টি ফেয়ারগ্রাউন্ডে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা ও এজেন্টরা কিভাবে থমাস ম্যাথিউ ক্রুকসকে (ডোনাল্ড ট্রাম্পের) এত কাছে যেতে দিয়েছিলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও সিক্রেট সার্ভিসের পরিচালক এ কথা স্বীকার করেছেন, যে ভবনের ছাদ থেকে হামলাকারি ট্রাম্পকে ১৩০ মিটার বা ৪৩০ ফুট দূর থেকে নিশানা করছিলেন, সেই ভবনের ভেতরে স্থানীয় পুলিশ ছিল।

শুধু তা-ই নয়, সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, স্থানীয় তিনজন পুলিশ স্নাইপার ওই ভবনের ভেতরে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা থমাস ম্যাথিউ ক্রুকসকে ছাদে উঠতেও লক্ষ্য করেছিলেন।

স্থানীয় শেরিফ ডিপার্টমেন্ট বিবিসিকে রাজ্য পুলিশের কাছে বিবিসির প্রশ্ন পাঠিয়ে জানিয়েছে, যে এলাকায় ওই ইমারতটি রয়েছে সেটা তাদের আওয়াভুক্ত নয়। রাজ্য পুলিশের এক মুখপাত্র বলেছেন, সিক্রেট সার্ভিসের পক্ষ থেকে যে শক্তিবলের কথা জানানো হয়েছিল সেই অনুযায়ী সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ওই নির্দিষ্ট পরিধিটিতে ৩০ থেকে ৪০ জন সেনাও ছিলেন।

বন্দুকধারী কিভাবে ট্রাম্পের এত কাছাকাছি পৌঁছতে পারে তা নিয়ে স্বাধীন পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অন্যদিকে এই ঘটনায় সে দেশের সিক্রেট সার্ভিসও কংগ্রেসের তদন্তের মুখোমুখি হয়েছে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন