রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের বৈঠক অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত

ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অনতিবিলম্বে দেশে একটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে বঙ্গভবনে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। রাতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

 

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের লক্ষ্যে সেনাপ্রধান, নৌপ্রধান ও বিমানবাহিনীর প্রধান এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে সবাইকে ধৈর্য ও সহনশীল আচরণ করার আহ্বান জানানো হয় এবং সেনাবাহিনীকে লুটতরাজ ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং তাদের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়। একই সঙ্গে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে সবাইকে ধৈর্য ও সহনশীল আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়।

 

রাষ্ট্রপতির উপপ্রেসসচিব মুহা. শিপলু জামান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সর্বসম্মতিক্রমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অনতিবিলম্বে মুক্তির সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এবং সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় আটককৃত সব বন্দিকে মুক্তি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি যেন কোনোভাবেই বিনষ্ট না হয়, সে ব্যাপারেও সভায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু ও কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, হেফাজত ইসলামের মামুনুল হক, মুফতি মনির কাসেমী ও মাহাবুবুর রহমান, জামায়াতে ইসলামের ড. শফিকুর রহমান, শেখ মো. মাসুদ ও মেজর জেনারেল ফজলে রাব্বি (অব.); জাকের পার্টির শামিম হায়দার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, জাকের পার্টির শামিম হায়দার, গণ অধিকার পরিষদের অ্যাডভোকেট গোলাম সারওয়ার জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, ফিরোজ আহমদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল হোসাইন, আরিফ তালুকদার, ওমর ফারুক ও মোবাশ্বেরা করিম মিমি এবং ইঞ্জিনিয়ার মো. আনিছুর রহমান।

এর আগে সকালে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।

এই সরকারের অধীনে দেশের সব কার্যক্রম চলবে।

 

সাফল্য যাতে অন্যদিকে প্রবাহিত না হয় : ফখরুল

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যে বড় বিজয় এসেছে, তার সাফল্য যাতে অন্যদিকে প্রবাহিত না হয়, সে জন্য দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে সংযমের পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ক্রোধ, ঘৃণা বা প্রতিশোধের বশবর্তী হয়ে আমরা যেন কাউকে আক্রমণ না করি, কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি না করি। বিশেষ করে, আমাদের যেসব বন্ধু-ভাইরা আমাদের সঙ্গে আছে, ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর যেন কোনো আক্রমণ না হয়। তাদের রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।

 

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি তিনি এই আহ্বান জানান।

সারা দেশে যে সহিংসতা ও হামলার ঘটনা ঘটছে, তার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে দলের সব নেতাকর্মীর প্রতি আবেদন জানাতে চাই, আপনারা সবাই নেমে পড়ে যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে, সে প্রবণতা থেকে দেশকে রক্ষা করুন। কাউকে সে সুযোগ নিতে দেবেন না, যে সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা অন্যের ওপর আঘাত হানবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন, আজকে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করব। একই সঙ্গে আমরা নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে রক্ষা করব। যে অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, এই ঐক্যকে দৃঢ় রেখে দেশকে আমরা দেশের শত্রুদের হাত থেকে, বাইরে শত্রুদের হাত থেকে অবশ্যই রক্ষা করব। এটাই হচ্ছে আজকে আমাদের বড় আবেদন।’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানিয়েছেন যে ধৈর্য ধরুন, শান্ত হোন এবং দেশকে রক্ষা করুন এবং যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে উদ্যোগকে সফল করুন।’

দেশ ভয়াবহ দানবের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে বলে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে। তারা আজকে উপযুক্ত সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছেন।’

সেনাবাহিনীর পদক্ষেপে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সব রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনের মূল ছাত্র নেতাদের আলোচনার জন্য গণভবনে আনা হয়েছে।

আলোচনায় কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এর প্রথমটি হচ্ছে সংসদ ভেঙে দিয়ে অতি দ্রুত একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে। এ ছাড়া দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে যে সব নেতাকর্মী এবং ছাত্রনেতা, যাঁদের অন্যায়ভাবে গত ১ জুলাই থেকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সরকার গঠন করার সম্ভাবনা আছে। এই সরকারটা হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর চরিত্র হবে নির্দলীয় সরকার। আমরা এটা প্রস্তাব দিয়েছি। তারা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।’

সরকারের প্রধান কবে নির্বাচন করা হবে, প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই নিয়ে আলোচনা হয়নি। মূল বিষয় হচ্ছে যে আলোচনা করা দরকার। আমরা তো দলের সঙ্গে বসতে পারিনি। আমরা দলের সঙ্গে বসে প্রস্তাব নিয়ে আসব। অন্য দলগুলোও প্রস্তাব নিয়ে আসবে। তখন নির্ধারণ করা হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব জানান, রাষ্ট্রপতি আজকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে সব কিছু জানাবেন।

সব শেষে মির্জা ফখরুল লন্ডনে নির্বাসিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘তাঁকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। তারেক রহমান প্রতি মুহূর্তে এই আন্দোলনে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁকেও অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, ইনশাআল্লাহ এ ব্যাপারেও আমরা সফল হব।’

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন