বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। গত শনিবার দেশ ছেড়ে ভারতে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (৫ আগস্ট) ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, আমার মা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। সেই সময় তিনি পাননি।
একটি বিবৃতি দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু এরপর আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে অগ্রসর হতে লাগল এবং তখন আর সময় ছিল না। এমনকি আমার মা গোছানোর সময়টুকুও পায়নি। সংবিধান অনুযায়ী, তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
জয় জানান, প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়াকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকারের মেয়াদ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আগামী তিন মাসের ভেতর বাংলাদেশে নির্বাচন দেখতে চাইছেন জয়।
যেখানে অংশ নেবে আওয়ামী লীগও।
‘আমি আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। না হলে, আমরা বিরোধী দল হব। যেটাই হোক ভালো হবে। আমি খালেদা জিয়ার ভাষণ শুনে খুশি হয়েছি।
আসুন আমরা অতীতকে ভুলে যাই। আমরা যেন প্রতিহিংসার রাজনীতি না করি। ঐক্যবদ্ধ সরকার হোক বা না হোক, আমাদের একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন করতে আমি বিএনপিকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তাদের সঙ্গে কাজ করে নিশ্চিত করতে হবে যে, আমাদের শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতিতে আলাপ-আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তর্ক করতে পারি, অসম্মতিতে একমত হতে পারি এবং সবসময় একটি সমঝোতা পথ খুঁজে পেতে পারি।’
আওয়ামী লীগ চাইলে আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ভাববেন জয়, ‘এই মেয়াদ শেষে এমনিতেই আমার মা রাজনীতি থেকে অবসরে যেতেন। যদি দল আমাকে চায়, আমি অবশ্যই বিবেচনা করব।’
রয়টার্সের দেওয়া তথ্যমতে, আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩০০ জনের মতো। সেজন্য শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ছাত্ররা। জয় বলেন, ‘গ্রেপ্তারের হুমকিতে আমার মা আগেও কখনো ভয় পাননি। আমার মা ভুল কিছু করেননি। শুধু তার সরকারের লোকেরা বেআইনি কাজ করেছেন, এর মানে এই নয় যে, আমার মায়ের নির্দেশেই কাজগুলো করেছেন তারা। এর মানে এই নয় যে, আমার মা এসবের জন্য দায়ী। যারা এর জন্য দায়ী, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা করার জন্য আমার মা কাউকে আদেশ দেননি। পুলিশ সহিংসতা ঠেকানোর চেষ্টা করে গেছে কিন্তু কিছু পুলিশ অফিসার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছেন।’
‘আমাদের সরকার অবিলম্বে চেয়েছে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং আমি সেই আলাপের অংশ ছিলাম। আমি আমার মাকে বলেছি, ছাত্রলীগকে অবিলম্বে বলা উচিত আক্রমণ না করতে। আমরা সেই পুলিশ অফিসারকে বরখাস্ত করেছি, যে ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছে। আমাদের যা যা করা সম্ভব, আমরা করেছি।’
দেশে ফেরা প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘আমি বেআইনি কিছু করিনি, তাহলে (দেশে আসার জন্য) কেউ আমাকে আটকাবে কী করে? আওয়ামী লীগ কোথাও যাচ্ছে না। কেউ আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। আমাদের সাহায্য ও সমর্থকদের ছাড়া বাংলাদেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি আসবে না।’
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন