জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের টিল্লাবাড়ি এলাকার কাওছার আহমদ ছিলেন সৌদিআরব প্রবাসী। সেখানে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি। কিন্তু আক্রান্তের বিষয়টি টের না পাওয়ায় দেশে ফিরে বিয়ে করেন কাওছার। ভালোবাসার সম্পর্কে চাচাতো বোন সেজনা আক্তারকে বিয়ে করেন। শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকায় নানা পরীক্ষার পর কাওছার এইডসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। কিন্তু ততোদিনে সেজনার গর্ভেও এসেছে সন্তান। ২০১২ সালে মারা যান কাওছার। পরে সেজনা জন্ম দেন এক ছেলে সন্তানের।
স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলে আব্দুর রহমান ইয়াছিরকে নিয়ে জীবনের কঠিন পথ পাড়ি দিতে থাকেন সেজনা। সিলেটে ও ঢাকায় একাধিকবার পরীক্ষায় ছেলেসহ তিনিও এইডসে আক্রান্ত বলে ধরা পড়েন। সেজনার কঠিন পথ হয়ে পড়ে কঠিনতর। এর মধ্যে প্রয়াত স্বামীর পরিবারের বিরূপ মনোভাব নতুন বিপদ হিসেবে হাজির হয় সেজনার সামনে।
সেজনার অভিযোগ, তার শাশুড়ি, দেবর ও তার স্ত্রী মিলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তাকে (সেজনা) স্বামীর ভিটে থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এমন অভিযোগ নিয়ে সোমবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তিনি।
সেজনা বেগম বলেন, ‘দানশীল মানুষের সহযোগিতায় কোনোরকমে বেঁচে আছি আমরা। কিন্তু স্বামীর ভিটে ছাড়া অন্য কোনো অবলম্বন নেই আমাদের। এই ভিটে থেকে তাড়াতে আমাদের ওপর আঘাত করা হয়েছে। আমার স্বামীর মা, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী মিলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে ভিটেমাটি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন আমাদের। নিরূপায় হয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি আমি ও আমার ছেলে।’
এই গৃহবধুর অভিযোগ, চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি এই ঘটনার পর তিনি দক্ষিণ সুরমা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ সেই অভিযোগের সঠিক তদন্ত করছে না। তদন্ত কর্মকর্তা ‘নির্যাতনকারী ও দখলবাজ চক্রের’ সঙ্গে ‘হাত মিলিয়েছেন’ বলেও অভিযোগ করেন সেজনা।
তিনি বলেন, ‘আইনী সহযোগিতা নিয়ে জীবনের স্বাভাবিক নিরাপত্তাসহ ভিটেমাটি ফেরত পাওয়ার প্রত্যাশায় অভিযোগ দিয়েছিলাম পুলিশে। আইনের রক্ষকদের রহস্যজনক নিরবতায় অভিযোগ দেয়ায় হিতে বিপরীত হয়ে উঠছে আমাদের জীবন। আমাদের মতো অসহায়রা এখন কোথায় যাবে?’
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে সেজনা বেগমের দেবর ফয়ছল আহমদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
টিল্লাবাড়ি এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা পঞ্চায়েত মিলে সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সম্ভব হয়নি। প্রয়াত কাওছার আহমদের ছেলে আব্দুর রহমান ইয়াছির। সে পৈত্রিক সম্পত্তি ন্যায্য যতোটুকু পায়, ততোটুকু দিতে বলেছি আমরা। কিন্তু কাওছারের স্বজনরা এটা মানতে রাজি নয়।’
দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি আখতার হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। তবে খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন