গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিসরের কায়রোতে আলোচনা করছেন মধ্যস্থতাকারীরা। তা সত্ত্বেও অবরুদ্ধ উপত্যাকাটিতে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, শনিবার কায়রোতে তারা প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেবে না তারা।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কয়েক মাস ধরে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চেষ্টা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি বেশ এগিয়েছে। যদিও গাজা ও মিসর সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের সম্ভাব্য স্থায়ী উপস্থিতি আলোচনার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর আগে হওয়া যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনা কার্যত ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।
হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা এর আগে বলেছেন, তাদের একটি প্রতিনিধিদল কায়রোতে যাচ্ছে। তবে দলটি যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেবে না। বরং আলোচনার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে দলটি মিসরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। পরে স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় কায়রোতে পৌঁছয় দলটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হামাসের ওই নেতা বলেন, প্রতিনিধিদলকে বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করা হবে। তার মানে এই নয়, তারা আলোচনায় অংশ নেবে। বরং ফিলাডেলফি নামে পরিচিত মিসরের সীমান্ত করিডরসহ গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারে জোর দেবে হামাসের প্রতিনিধিদল।
গত ৩১ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতির আলোচনার একটি রূপরেখা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এই রূপরেখা ইসরায়েলের প্রস্তাব।
হামাসের আরেক নেতা শনিবার জোর দিয়ে বলেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ারসহ হামাসের নেতারা এরই মধ্যে বাইডেনের পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন। আগের পরিকল্পনাটির কোনো ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই বাস্তবায়ন চায় হামাস। বাইডেন ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল অনুমোদিত তিন ধাপের ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়া হবে। ওই সময় বাইডেন বলেছিলেন, এটি একটি পূর্ণ ও সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, যা ছয় সপ্তাহ চলবে। তখন থেকেই সীমান্তে সেনা মোতায়েনে জোর দিয়ে আসছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার যুক্তি, মিসর থেকে অস্ত্র চোরাচালান করে হামাসের পুনর্গঠন প্রতিরোধে সীমান্তে ইসরায়েলি সেনা রাখতে হবে।
হোয়াইট হাউস বলছে, কায়রোতে গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান উইলিয়াম বার্নস। এ ছাড়া ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানরা আলোচনায় অংশ নেবেন।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা সম্পর্কে অবগত একটি মিসরীয় সূত্র বলেছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মতবিরোধ নিরসনে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্রটি বলছে, রবিবারের বর্ধিত আলোচনাটি হবে একটি চুক্তি প্রণয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আর ওয়াশিংটন নেতানিয়াহুকে চাপ দিতে পারলে এটি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা সত্ত্বেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজা সিটির জেইতুন এলাকায় গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সেখানে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক সংঘাত হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি হামলায় চার শিশুসহ অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে। আল নাসের হাসপাতালের এক চিকিৎসক বিষয়টি জানিয়েছেন। হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৬৯ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, রাফার তাল আল-সুলতান এলাকায় সংঘাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে।
এ ছাড়া ইসরায়েলের নির্দেশের পর দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিস থেকে হাজার হাজার মানুষ অন্যত্র সরে গেছে। নতুন করে বাস্তুচ্যুতির ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, ইসরায়েলের ইয়ারা এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি স্থাপনায় আত্মঘাতী ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন