ছাত্র-জনতার দেশ কাঁপানো ২৩ দিনের ঘটনাবহুল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। তবে নানা ঘটনায় আন্দোলনের রেশ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। প্রশাসন, পুলিশসহ নানা প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো সেভাবে দৃশ্যমান নয়।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশব্যাপী লুট, চাঁদাবাজি ও দখলদারদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়। এসব অরাজকতা কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিকে জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনা এখনো অব্যাহত আছে। নির্যাতন, দখল ও লুটপাটের ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায় বিক্ষুব্ধ।
দাবি আদায়ে আনসার বাহিনী সচিবালয় ঘেরাও করে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে ছাত্ররা তাদের প্রতিহত করে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন তিনি। দেশ ছাড়ার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।
বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনা আর ঘটেনি। এত প্রাণহানিও হয়নি অতীতের কোনো অভ্যুত্থানে। সরকারিভাবে নিহতের সঠিক কোনো হিসাব দেওয়া না হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন, এই সংখ্যা হাজারের বেশি। অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করবে। এরই মধ্যে সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা ও পুলিশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়নি। ওই দিন প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কা থাকলেও ছাত্র-জনতা তা রুখে দেয়। এখনো বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। তবে গত এক মাসে গোপালগঞ্জ ছাড়া দেশের অন্য কোথাও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের কোনো আন্দোলন চোখে পড়েনি।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে ক্ষমতায় বসেছিলেন তিনি। এরপর নিজের শাসনামলে আর কোনো গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন দিতে পারেননি তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এতে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েই ছিল। সেটির বহিঃপ্রকাশের জন্য শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। উপলক্ষ তৈরি করে দেয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।
বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম যে বাংলাদেশ চায় সবাইকে সেই বাংলাদেশকে স্বাগত জানাতে হবে। আমরা একটি আইনের শাসনের দেশ চাই। যাঁরাই জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর মানবাধিকার লঙ্ঘন, ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থপাচার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা, ঋণের নামে ব্যাংক লুটের সুযোগ দেওয়া, আয়বৈষম্য চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াসহ বিগত সরকারের বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সংস্কারমূলক কাজ শুরু করেছে। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকও করেছেন।
সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ‘৬ সেপ্টেম্বর থেকে সবাইকে সংগঠিত করার জন্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে সফর শুরু করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আমরা জনগণের সঙ্গে কথা বলব, তারা কী চায় সেটা জানব, আমরাও কিছু পরামর্শ দেব। এরপর মানুষ যা চায় আমরা তা বাস্তবায়ন করব।’
বাকের মজুমদার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সারা দেশে সিন্ডিকেট তৈরি করেছিল। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক জায়গায় এখনো এসব সিন্ডিকেট চলছে। অনেক জায়গায় শুধু মাথা পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সিস্টেম একই রয়ে গেছে। আমরা সব ধরনের চাঁদাবাজি, দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখেছি।’
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন