বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর সেটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এটা ছিল বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের পঞ্চম বৈঠক।
বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, গণভবন জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি এবং বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে যত অন্যায়, অবিচার হয়েছে তার সব কিছু সংরক্ষণ করার জন্য এটাকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
দ্রুতই এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, গণভবন যে অবস্থায় আছে, জনগণ যেভাবে রেখেছে, সেই অবস্থায় রাখা হবে। এর মধ্যে ভেতরে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে, যাতে অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের যে গণভবন, এটি আসলে কখনো গণভবন হয়ে উঠতে পারেনি।
এই গণভবনকে যেহেতু ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জয় করেছে, এটিকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
একই সঙ্গে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, দলের বিচারের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিচারের যে বিষয়টা, সেটা আইন মন্ত্রণালয় দেখছে। আইন মন্ত্রণালয় খুব দ্রুতই একটা সুস্পষ্ট রূপরেখা দেবে যে বিচারটা কিভাবে হবে, সেটা সবার সামনে উত্থাপন করবে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ প্রশ্নটা দেশের জনগণ ডিসাইড করবে।
যেহেতু একটা গণহত্যা আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে এ দেশে। সেই গণহত্যার দায় নিয়ে তারা কিভাবে ফিরবে বা তাদের ফিরতে দেওয়া হবে কি না এটা জনগণ ডিসাইড করবে, এটা জনগণের সিদ্ধান্ত।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এই আন্দোলন দমনে তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার আগ্নেয়াস্ত্রের বাড়াবাড়ি রকমের ব্যবহার করে বলে অভিযোগ ওঠে। জুলাইয়ের মাঝমাঝিতে কয়েক শ ছাত্র-জনতার প্রাণ ঝরে। পরে সেই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আন্দোলন দমনে হাসিনার সরকার আরো কঠোর হয়।
নির্বিচারে হত্যা করে ছাত্র-জনতাকে। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ওই সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে চলে যান। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেদিন গণভবনে ঢুকে উল্লাস করে হাজার হাজার জনতা। সেই সঙ্গে তাদের গণভবন থেকে বিভিন্ন আসবাবপত্রও নিয়ে যেতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন ছিল গণভবন। এর আগে কোনো প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলানগরের এই বাসভবনে থাকেননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে শেরেবাংলানগরে গণভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে তিনি সেখানে অফিস শুরু করেন। তবে তিনি বাস করতেন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন