রোগীপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা কমিশন নিতেন ডা. মামুন

 জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //

২০১৯ সালের জুলাইয়ে রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই অবৈধ এই হাসপাতালের সঙ্গে কমিশন নিয়ে কাজ করতেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন। সর্বশেষ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমসহ কমপক্ষে ২৫ জন রোগীকে ওই হাসপাতালে পাঠিয়েছেন ডা. মামুন। প্রতি রোগী থেকে গড়ে কমিশন বাবদ ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি। দুই দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনে তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার এএসপি আনিসুল করিম শিপনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেদিনই তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

 

তেজগাঁও বিভাগ পুলিশ সূত্র বলছে, মাইন্ড এইড হাসপাতালে কখনও রোগী সংকট থাকতো না। একটু উচ্চবিত্ত শ্রেণির রোগী আসলেই মাইন্ড এইডে পাঠিয়ে দিতেন ডা. মামুন। বিনিময়ে কমিশন পেতেন আবার রোগী চিকিৎসা করতে গিয়ে মোটা অঙ্কের ভিজিট নিতেন। মামুন মাইন্ড এইড হাসপাতাল ছাড়াও আদাবরের মাইন্ড ওয়েল হাসপাতাল এবং টাঙ্গাইলে ঢাকা ক্লিনিক নামের একটি হাসপাতালে রোগী দেখতেন।

তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বলেন, ‘মাইন্ড এইডের অন্যতম পরিচালক মামলার ১১ নম্বর আসামি মুহাম্মদ নিয়াজ মোর্শেদের সঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের ভালো সখ্য ছিল। নিয়াজের মাধ্যমেই মামুন অবৈধ এই হাসপাতালের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, মঙ্গলবার সকালে শেরেবাংলা নগর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের বাসা থেকে মামুনকে গ্রেফতার করা হয়। আনিসুলের ঘটনায় করা মামলায় আদালতে যারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আনিসুলকে তার কর্মস্থল থেকে ঢাকায় এনে স্বজনরা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে একজন চিকিৎসক পান তারা। তিনি রোগীকে না দেখেই দুটি ইনজেকশন লিখে দেন। হাসপাতালের এক কর্মচারী নিজেই পুলিশ কর্মকর্তাকে ইনজেকশন পুশ করেন। পরে আনিসুলের স্বজনরা হাসপাতালটির রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে যান। মামুন তাদের পরামর্শ দেন, তার হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর খুব ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। দ্রুত রোগীকে মাইন্ড এইডে ভর্তি করলে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, ‘এর পরই মাইন্ড এইডের ম্যানেজার আরিফকে ফোন করে মামুন জানান, একজন রোগী পাঠাচ্ছেন তিনি। যেন দ্রুত ভর্তি করানো হয়। ওই চিকিৎসকের কথায় আস্থায় নিয়ে স্বজনরা মাইন্ড এইডের দিকে আনিসুলকে নিয়ে যান। আনিসুলকে হত্যার পর আবার মাইন্ড এইড হাসপাতাল থেকে ডা. মামুনকে ফোন করা হয়। মামুন গিয়ে আনিসুল মারা গেছে জেনেও তাকে ওই হাসপাতাল থেকে বের করে অন্য হাসপাতালে ভর্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ চালান। যেন কোনোভাবেই তার দায়িত্বে অবহেলা না বোঝা যায়।

প্রসঙ্গত, গত ৯ নভেম্বর বেলা ১১টায় আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতালটির কর্মচারীদের মারধরের পর আনিসুল করিম শিপন নিহত হন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তিনি ৩১তম বিসিএস পুলিশে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। এই ঘটনায় নিহতের বাবা ফয়েজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন