সিলেট চেম্বারে পাটজাত পণ্য তৈরী বিষয়ক ৫ দিনব্যাপি প্রশিক্ষণ কর্মশালা সম্পন্ন

এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্টি’র সহযোগিতায় “বহুমুখী পাটজাত পণ্য তৈরী” বিষয়ক ৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী ও সনদপত্র বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় চেম্বার কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।

 

 

সিলেট চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুজিবুর রহমান মিন্টু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক, সিলেট শাখার নির্বাহী পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম খান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), সিলেট এর ডিজিএম ম. সুহেল হাওলাদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন। আমরা চাকুরীজীবীরা সারাজীবন কাজ করি, কিন্তু কাউকে চাকুরী দিতে পারি না। তাই উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

 

তিনি বলেন, সরকার এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশে উদ্যোক্তা তৈরীর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও ঋণের ব্যবস্থা করছে। তরুণ প্রজন্মকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তিনি কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য নারী উদ্যোক্তা ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাধুবাদ জানান।

তিনি বলেন, সরকারের অনুমোদিত ফান্ড থাকা সত্বেও অনেক ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করে। কারণ অতীতে নারী উদ্যোক্তাদের নামে অনেক পুরুষ ঋণ গ্রহণ করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে, যা ঐ নারী উদ্যোক্তা জানেনই না। তদুপরী সঠিক উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানের জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সকল ব্যাংককে নির্দেশনা প্রদান করেছি।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে এসএমই খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে তহবিল গঠনের জন্য ব্যাংক সমূহকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনকে সরকারের পক্ষ থেকে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

 

তিনি জানান, কোন ব্যাংক সকল কাগজপত্র ঠিক থাকার পরেও কোন উদ্যোক্তাকে এসএমই ঋণ প্রদান না করলে আমরা ঐ ব্যাংক শাখার বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিসিক, সিলেট এর ডিজিএম ম. সুহেল হাওলাদার বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে ৬ কোটি লোক কর্মক্ষম। কিন্তু এ তুলনায় উদ্যোক্তার সংখ্যা কম। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও একজন উদ্যোক্তা। তাঁর জীবন থেকে আমাদেরকে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিতে হবে। তিনি পাটজাত পণ্য তৈরী বিষয়ক ৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আয়োজনের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন ও সিলেট চেম্বার অব কমার্সকে ধন্যবাদ জানান।

সভাপতির বক্তব্যে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুজিবুর রহমান মিন্টু বলেন, পাটজাত পণ্যের প্রবল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে আমরা “বহুমুখী পাটজাত পণ্য তৈরী” বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আয়োজন করেছি। বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ টন কাঁচা পাট নিয়ে বিদেশে যেসব মূল্যবান পণ্য সামগ্রী উৎপাদিত হয় তা যদি আমরা দেশেই উৎপাদন করে রপ্তানী করতে পারি তাহলে দেশের বৈদেশিক মূদ্রা আহরণ আরো বেশী বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, পাটজাত পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ খাতে উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে। এজন্য ব্যাংকের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, এসএমই ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চুক্তি অনুযায়ী এসএমই উদ্যোক্তাদের বিনা জামানতে সর্বনি¤œ ৪% পর্যন্ত সুদে ঋণ প্রদানের কথা রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো প্রায়শই এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানে অনীহা দেখায়। ব্যাংকগুলো বড় বড় শিল্পে ঋণ প্রদানেই বেশী আগ্রহী।

 

তিনি এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আরো বলেন, আমদানিকারকগণ পণ্য আমদানির পূর্বে ব্যাংকে আংশিক অর্থ জমা দিয়ে এলসি খুলে থাকেন। কিন্তু রপ্তানীকারকের কোন সমস্যার কারণে বা ভারতীয় আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে উক্ত পণ্য আমদানি না হলে বা আংশিক আমদানি হলে আমদানিকারকদেরকে এলসি বাবদ জমাকৃত টাকা ব্যাংক হতে ফেরত পেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এতে আমদানিকারকগণ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হন। অনেক আমদানিকারকদের টাকা দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যাংকে আটকে আছে। এ টাকাগুলো যথাসময়ে ফেরত পেলে আমদানিকারকগণ সেই টাকা দিয়ে পুণরায় এলসি খুলতে বা অন্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারতেন। ব্যাংকে আটকে থাকা আমদানিকারকদের এসব টাকা ফেরত প্রাপ্তির ব্যাপারে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সিলেট চেম্বারের পরিচালক এবং সেমিনার, ওয়ার্কশপ সাব কমিটির ডাইরেক্টর ইনচার্জ ফাহিম আহমদ চৌধুরী, ওমেন ফর ওমেন রাইটস্ এর প্রেসিডেন্ট সামিয়া বেগম চৌধুরী, এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষক কাজী আশরাফুল হক সায়মন, প্রশিক্ষণার্থী ফরিদা আলম, আনোয়ার হোসেন, তাহমিদা ফাতেমা চৌধুরী নিভিতা। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন প্রশিক্ষণার্থী শিব্বির আহমেদ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট চেম্বারের পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, সিলেট চেম্বারের সচিব মোঃ গোলাম আক্তার ফারুক, উপ সচিব সানু উদ্দিন রুবেল, আজিজুর রহিম খান মিজান এবং প্রশিক্ষণার্থীবৃন্দ।

 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিলেট চেম্বারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মিনতি দেবী। অনুষ্ঠানে ৩৪ জন প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন