বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি জাপানের টোকিওভিত্তিক নিউজ আউটলেট এনএইচকে ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ড. ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফরের সময় গৃহীত এই সাক্ষাৎকারভিত্তিক রিপোর্ট গত রবিবার সংবাদমাধ্যমটি প্রকাশ করেছে।
টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন।
সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করা এবং সরকার প্রস্তুত হলেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। তিনি বলেন, ‘ব্যর্থতা এমন কিছু নয়, যা আমরা মেনে নিতে পারি।’
হাসিনা সরকারের পতনে প্রধান ভূমিকা পালনকারী ছাত্রদের কথা উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, তরুণরা তাদের জীবন দিয়েছে। তিনি নীতি নির্ধারণে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে তাঁর অবস্থানের ইঙ্গিত দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সংকটময় সময়ে’ বাংলাদেশ তার সবচেয়ে বড় দাতা জাপানের কাছ থেকে সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাঁর দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে দৃঢ়মূল করতে সহায়তার জন্য জাপানের সহযোগিতা অপরিহার্য।
নতুন দেশ নির্মাণ শুরু করতে হবে
মার্কিন পাবলিক ব্রডকাস্টিং সংস্থা এনপিআর গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দেওয়ার পর এনপিআরের মিশেল মার্টিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় বসেছিলেন।
আলাপচারিতায় ড. ইউনূসকে মার্টিন বলেন, ‘সময়ের কথা বলছি। সেনাবাহিনী আপনার পেছনে রয়েছে। সামরিক নেতারা বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ১৮ মাস শাসন করতে হবে। বিরোধী দলগুলো তা চায় না। তারা নভেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল।
আপনার যা করতে হবে তা করার জন্য কি ১৮ মাস যথেষ্ট সময় আছে?’
জবাবে ইউনূস বলেন, ‘জনগণ এই সংখ্যাগুলো বিবেচনা করছে না; কত মাস, কত বছর তাদের প্রয়োজন মনে হয়। কেউ কেউ বলে যে এটি দ্রুত করা উচিত, কারণ আপনি যদি দীর্ঘায়িত করেন আপনি অজনপ্রিয় হবেন এবং সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন যে না, আপনাকে সংস্কার শেষ করতে হবে। সুতরাং আপনি দীর্ঘ সময় ধরে থাকুন। কারণ আমরা সব কিছু ঠিক না করে বাংলাদেশ ২.০-এ যেতে চাই না। তাই এ নিয়ে বিতর্ক চলছে।’
এ সময় মার্টিন বলেন, ‘আপনি জানেন, আপনি প্রায় সুধীসমাজের মতো করে সম্পূর্ণ পুনর্গঠনের কথা বলছেন।’ তখন ইউনূস বলেন, ‘সংস্করণ ২-এর অর্থ ঠিক এটাই। আমরা পুরনো স্টাইলে ফিরে যেতে চাই না। তাহলে এত জীবন দেওয়ার মানে কী? এর কোনো মানে নেই, কারণ আমরা যা করেছি, সব কিছু ধ্বংস করেছি। তাই একটি নতুন দেশ নির্মাণ আমাদের শুরু করতে হবে।’
মার্টিন বলেন, এটি চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু উত্তেজনাপূর্ণ, তাই না? ইউনূস বলেন, ‘এটি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। আপনি নেতিবাচক দিক দেখছেন। আমি এটাকে খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। মানুষ, দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ : আমাদের পরিবর্তন দরকার।’
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন