খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরির

হিজবুল্লাহর নিহত নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হাশেম সাফিয়েদ্দিন শুক্রবার থেকে যোগাযোগহীন রয়েছেন। এক লেবানিজ নিরাপত্তা সূত্র শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলার পর থেকেই তার কোনো খবর নেই।

ইরান সমর্থিত এই লেবানিজ গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েল বৃহস্পতিবার রাতে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে বড় ধরনের হামলা চালায়।

তিনজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানায়, আন্ডারগ্রাউন্ড বাংকারে হাশেম সাফিয়েদ্দিনকে লক্ষ্য করেই এই হামলা করা হয়েছিল।

 

এ ছাড়া লেবানিজ নিরাপত্তা সূত্র ও আরো দুই নিরাপত্তাকর্মী জানিয়েছেন, শুক্রবার থেকে দাহিয়ে নামে পরিচিত বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। তাই উদ্ধারকর্মীরা হামলাস্থল পর্যন্ত পৌঁছতে পারছেন না।


 

তবে হিজবুল্লাহ এখন পর্যন্ত সাফিয়েদ্দিনকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

অন্যদিকে ইসরায়েলি লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদাভ শোশানি শুক্রবার জানান, বৃহস্পতিবার রাতের বিমান হামলার ফলাফল এখনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তার ভাষায়, এই হামলা হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা সদর দপ্তরকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল।

 

নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরিকে হারানোর ক্ষতি হিজবুল্লাহ ও তাদের সমর্থক ইরানের জন্য আরেকটি বড় আঘাত হবে। গত এক বছরে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলি হামলা হিজবুল্লাহর নেতৃত্বকে কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে।

 


 

আরো বিস্তৃত সংঘাত
এদিকে ইসরায়েল শনিবার লেবাননে তাদের সংঘাত আরো বিস্তৃত করেছে। তারা উত্তরাঞ্চলীয় শহর ত্রিপোলিতে প্রথম হামলা চালিয়েছে বলে এক লেবানিজ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এর আগে বৈরুতের উপকণ্ঠে ও দক্ষিণে ইসরায়েলি সেনারা হামলা চালায়।

কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইসরায়েল লেবাননের ওপর তীব্র বোমাবর্ষণ চালাচ্ছে এবং সেনা পাঠিয়েছে। তবে প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘর্ষ চলছে।

সেই সংঘাত সীমাবদ্ধ ছিল ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত এলাকায়, যা গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের সমান্তরালে ঘটছে। ইসরায়েল বলছে, তারা উত্তর ইসরায়েলে বোমাবর্ষণের শিকার হয়ে আশ্রয়হীন হওয়া হাজার হাজার নাগরিককে বাড়ি ফিরতে সহায়তা করার জন্য এই হামলা চালাচ্ছে। গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের এই অংশে হামলা চালিয়ে আসছে।

 


 

ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতৃত্বের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৭ সেপ্টেম্বর বিমান হামলায় গোষ্ঠীটির মহাসচিব নাসরাল্লাহও রয়েছেন। লেবাননের কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েলি হামলায় শত শত সাধারণ লেবানিজও নিহত হয়েছে, যার মধ্যে উদ্ধারকর্মীরাও আছেন। এ ছাড়া ১২ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে, যা দেশটির জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

লেবানিজ এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ত্রিপোলির একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে শনিবার ইসরায়েলি হামলায় হামাসের এক সদস্য, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমও জানিয়েছে, এই হামলায় তাদের সশস্ত্র শাখার এক নেতা নিহত হয়েছেন। তবে ত্রিপোলিতে হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। শহরটি ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের সময়ও ইসরায়েলি বিমান হামলার শিকার হয়েছিল। ত্রিপোলি মূলত সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি বন্দরনগরী।


 

এ ছাড়া ইসরায়েল প্রতি রাতে দাহিয়েতে বোমাবর্ষণ করছে, যা একসময় প্রাণবন্ত ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছিল এবং হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। দাহিয়ের আকাশে শনিবার ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। সেখানকার বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাসিন্দারা অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে উত্তর ইসরায়েলে রকেট হামলার সতর্কবার্তা শোনা গেলে মানুষজন শেল্টারে ছুটে যাচ্ছিল। কারণ লেবানন থেকে রকেট হামলা চালানো হচ্ছিল।

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবনা
এই সহিংসতা এমন এক সময় ঘটছে, যখন ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার বার্ষিকী আসন্ন। ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর সেই হামলায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং অঞ্চলটির প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই ঘরছাড়া হয়েছে।


 

হিজবুল্লাহ ও হামাসের সমর্থক ইরান, যারা এ বছর সিরিয়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডারদের হারিয়েছে। তেহরান মঙ্গলবার ইসরায়েলে একগুচ্ছ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তবে সেই হামলায় খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ইরানের সেই হামলার প্রতিক্রিয়া নিয়ে ইসরায়েলে এখন বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করছে।

এদিকে তেলের দাম বেড়ে চলেছে। কারণ ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েল ইরানের তেল স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে পারে। তাদের লক্ষ্য লেবাননে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের পিছু হটানো এবং গাজায় হামাসকে নির্মূল করা। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে ইরানের তেলক্ষেত্রে হামলার বিকল্প চিন্তা করতে বলেন এবং জানান, ইসরায়েল এখনো এ ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন