পাঁচ আগস্টের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনকারী ‘হাওয়া’ হয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এসব অস্ত্রধারী নেতাকর্মী অনেকের বাড়িতে হামলা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর থেকে তাদের অবস্থান নিয়ে ধুয়াশা তৈরি হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে তাদের দেশত্যাগের বিষয়টি আলোচনায় আসে। অস্ত্রধারী নেতাকর্মী ও ক্যাডারদের অনেকেই এখন ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছেন। কিন্তু অস্ত্রধারীরা পালালেও তাদের প্রদর্শিত অস্ত্রের খোঁজ পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী ও যৌথবাহিনী।
সূত্র জানায়, সিলেটে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন বলয়ে বিভক্ত ছিলেন। নিজেদের বলয়ের প্রভাব ও শক্তি বাড়াতে গেল দুইবছর ধরে তারা অস্ত্র মজুত শুরু করেন। ভারতীয় চিনি ও গরুর অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে ‘কাঁচা টাকা’ হাতে আসায় অস্ত্র কেনা তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। চিনি ও গরু চোরাকারবারীদের মাধ্যমে তারা বেশিরভাগ অস্ত্র ভারত সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসেন।
এছাড়া গত ১৫ বছরে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা লাইসেন্স নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র কিনেন। তবে অবৈধ অস্ত্রগুলো এতোদিন প্রকাশ্যে ব্যবহার হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই নগরের আখালিয়া এলাকায় পুলিশের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়েন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা।
পরবর্তীতে ৪ আগস্ট সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্র-জনতা অবস্থা নিলে তাদেরকে হটাতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডাররা অস্ত্রের মহড়া দেন। অস্ত্র হাতে তারা কোর্ট পয়েন্ট থেকে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
ওইদিন, সদ্য সাবেক সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্য প্রবাসী যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন ওরফে শিবলু আহমদের হাতে দেখা যায় অত্যাধুনিক একটি আগ্নেয়াস্ত্র। যেটি অত্যাধুনিক এম-১৬ রাইফেল বলে দাবি করছেন অনেকে। ৫ আগস্টের পর তিনি কৌশলে যুক্তরাজ্য ফিরে গেছেন। কিন্তু তার অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রটি এখনো উদ্ধার হয়নি।
এছাড়া ৪ আগস্ট যাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে তাদের মধ্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এডভোকেট রণজিৎ সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ হান্নানও বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সিনিয়র সহসভাপতি পিযুষ কান্তি দে, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।
সিলেটে গুঞ্জন রয়েছে অস্ত্রধারীদের দেশ থেকে যারা পালাতে সহায়তা করেছে তাদের জিম্মায়ই রয়ে গেছে অস্ত্রগুলো। হাত বদল হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অস্ত্রগুলোর অবস্থান সনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম কর্মকর্তা, অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ভিডিও ও ছবি দেখে অনেক অস্ত্রধারীদের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে। অস্ত্রধারীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি প্রদর্শিত অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন