যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এক মাস বাকি। এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার নির্বাচনী লড়াই জমে উঠেছে। জাতীয় পর্যায় ও ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য—উভয় ক্ষেত্রেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে। ফলে দুই প্রার্থীর লড়াইয়ের ক্ষেত্রে কার্যত অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
তবে নতুন ভোটারদের সম্পৃক্ততা ও সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের কারণে ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অল্প ভোটের ব্যবধানে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। দুই প্রার্থীর লড়াইয়ের চলমান অচলাবস্থা শিগগিরই কাটবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ডেভিড গ্রিনবার্গ বলেন, ‘যেকোনো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইয়ে ১ বা ২ শতাংশের পার্থক্য নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে।
’
গত এক বছর মার্কিন রাজনীতি নানা চড়াই-উতরাই দেখেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া, কমলার মনোনয়ন অর্জন এবং দুই দফা হত্যাচেষ্টা থেকে ট্রাম্পের বেঁচে যাওয়া এর মধ্যে অন্যতম। তাই চলতি অক্টোবরে নতুন করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে বা খারাপ কারণে কোনো প্রার্থী সংবাদের শিরোনাম হলে আগামী এক মাসের মধ্যে সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এমন সব ঘটনা ঘটেছে, যা আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে।
হারিকেন হ্যালেন
গত সপ্তাহে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনায় আঘাত হানে হারিকেন হ্যালেন। এরই মধ্যে সেখানে ১৩০ জনেরও বেশি মারা গেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে উভয় রাজ্যের প্রতি তীব্র মনোযোগের কারণে সেখানকার মানবিক বিপর্যয় একটি রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে উঠতে পারে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জর্জিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং ঝড়ে নর্থ ক্যারোলাইনার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এদিকে হোয়াইট হাউসে আসীন থেকে এ দুটি রাজ্যে ট্রাম্পকে অবশ্যই জিততে হবে।
জনমত জরিপে এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। জর্জিয়া সফরকালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, আমেরিকানরা জরুরি ত্রাণের অর্থ পাচ্ছে না, কারণ এই অর্থ অভিবাসীদের জন্য ব্যয় করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি ত্রাণ ও অভিবাসীদের জন্য আলাদা বাজেট রয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের অভিযোগ, দুর্যোগ মোকাবেলাসংক্রান্ত ত্রাণ নিয়ে মিথ্যাচার ছড়াচ্ছে রিপাবলিকানরা।
যখন দুর্যোগ আঘাত হানে, তখন সবাইকে খুশি রাখা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। যদি এ বিষয়ে ভোটাররা অসন্তুষ্ট হন, তাহলে এই দুই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফলাফল প্রভাবিত হতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা
মধ্যপ্রাচ্যে যে মানবসৃষ্ট সংকট চলছে, তা ক্রমাগত আমেরিকার রাজনীতিতে প্রবেশ করছে। দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াই এবং ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে গাজা যুদ্ধ একটি আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কমলা নিজেকে পরিবর্তনের প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করলেও যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল নীতির ক্ষেত্রে তিনি নিজের ও বাইডেনের প্রশাসনের মধ্যে কোনো দূরত্ব বজায় রাখতে পারেননি। এটি কমলার জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। মার্কিন নির্বাচনের আগে গাজায় যুদ্ধবিরতির আশা কার্যত শেষ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যে যাতে সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে হোয়াইট হাউস। এই যুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও ডেমোক্র্যাটদের জন্য খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছে। যদিও মার্কিন ভোটাররা ভোট দেওয়ার আগে পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে খুব একটা ভাবেন না।
ইসরায়েলকে কমলার অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ডেমোক্র্যাটদের দুটি শিবিরে সমস্যা বয়ে আনবে—মিশিগানের আরব-আমেরিকান ভোটার এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ভোটার। এর মধ্যে মিশিগানে ডেমোক্র্যাটদের জেতাই লাগবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবারও যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন শুরু হতে পারে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের কারণে গত বৃহস্পতিবার তেলের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ আমেরিকনরা বিশেষভাবে সংবেদনশীল।
অর্থনীতি ও অভিবাসন
আমেরিকান ভোটারদের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্থনীতি। আর এ বিষয়ে গত শুক্রবার কমলার শিবির ভালো একটি খবর পেয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত কয়েক মাসে বেকারত্বের হার কমেছে। তবে ইতিহাসবিদ ডেভিড গ্রিনবার্গ বলেন, ‘অর্থনীতি নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ সর্বশেষ চাকরির পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি।’
জনমত জরিপে দেখা গেছে, অর্থনীতির ক্ষেত্রে কমলার চেয়ে ট্রাম্পকে এগিয়ে রেখেছেন ভোটাররা। তবে কুক পলিটিক্যাল রিপোর্টের জরিপ বলছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে সমতায় রয়েছেন দুই প্রার্থী। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অনুপ্রবেশের সংখ্যা কভিড মহামারি-পূর্ববর্তী সময়ের পর্যায়ে চলে এসেছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন