ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং ইসরায়েলের পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল সোমবার। গতকালই গাজা উপত্যকাজুড়ে কমপক্ষে ৭৭ জনকে ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৭ জন নিহত এবং ১৩৭ জন আহত হয়েছে।
এর মধ্যে দিয়ে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজার ৯০৯ জন এবং আহতের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৩০৩ জনে পৌঁছালো। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ বহু মানুষ বিভন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের তলায় চাপা পড়েছে। তাদেরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
’
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। কয়েক শ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসে হামাসের যোদ্ধারা।
হামাসের ওই হামলাকে ইসরায়েল নিজের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছিল।
তাই গাজায় ব্যাপক পরিসরে অভিযান চালায় ইসরায়েল। এতে গত এক বছরে প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার বড় একটি অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে ফিলিস্তিন। এরপর জল আরো দূর গড়িয়েছে।
গাজা যুদ্ধের এক বছর পর মধ্যপ্রাচ্য কার্যত একটি ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে আছে।
গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ
গত বছরের ডিসেম্বরে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। ওই সময় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানায়, গাজায় হামাসের ৮০০টি সুড়ঙ্গের মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করা হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হামাসের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে প্রায় ১০ হাজারের মতো বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাবে কার্যত মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এই অবরুদ্ধ উপত্যকায়। এ কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইসরায়েলকে।
হামাস ও হিজবুল্লাহ নেতা নিহত
ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় গত জুলাইয়ে নিহত হন হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেশটিতে গিয়েছিলেন হানিয়া। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর যে বাসস্থানে হানিয়া অবস্থান করছিলেন, সেখানেই তাঁকে হত্যা করা হয়।
এদিকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর লেবাননের বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। ১৯৯২ সাল থেকে হিজবুল্লাহর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
ইসরায়েলে সরাসরি হামলা ইরানের
সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে গত এপ্রিলে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলে তিন শতাধিক ড্রোন হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে এটিই ছিল ইরানের প্রথম সরাসরি হামলা।
যদিও প্রায় সব ড্রোনই ভূপাতিত করার দাবি করে ইসরায়েল। তবে ওই হামলায় ইসরায়েলের একটি বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জবাবে ইরানের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায় ইসরায়েল।
সর্বশেষ চলতি মাসেই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। মূলত হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ হত্যার প্রতিশোধ নিতে এই হামলা চালানো হয়। এতে ইসরায়েলের একটি বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, প্রায় ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ভূপাতিত করা হয়েছে। ইরানকে এই হামলার পরিণাম ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেয় ইসরায়েল।
লেবাননে ব্যাপক হামলা
সম্প্রতি লেবাননে হিজবুল্লাহর স্থাপনা লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বৈরুত শহরের তিনটি এলাকা থেকে স্থানীয়দের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় তেল আবিব। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই হামলার কারণে অন্তত ১০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে। হিজবুল্লাহর ডেপুটি কমান্ডার নাইম কাসেম বলেছেন, ইসরায়েলের স্থল অভিযান মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত এবং এই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
ফিলিস্তিনকে তিন ইউরোপীয় দেশের স্বীকৃতি
গত মে মাসে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন