মৌলভীবাজারেও দুর্গা পূজায় চা-বাগান শ্রমিকরা পাচ্ছেন ‘উৎসাহ বোনাস’

gbn

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি \ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা শুংরু হচ্ছে বুধবার থেকে। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে দুর্গা পূজা উৎসবের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। দুর্গা পূজা উপলক্ষে চা বাগানের শ্রমিকদেরও চুক্তি মোতাবেক বিভিন্ন হারে বোনাস প্রদান করা হচ্ছে। তবে গেজেট ও শ্রম আইনে শ্রমিকরা সমান হারে উৎসব বোনাস পাওয়ার কথা থাকলেও চা শ্রমিকদের কর্মে উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে বোনাস প্রদান করা হচ্ছে। উৎসব বোনাস প্রদানে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন শ্রমিকরা। চা বাগানে শ্রমিকদের ভিন্ন ভিন্ন হারে বোনাস প্রদান করায় অনেকেই দুর্গা পূজার আনন্দ উৎসব পালন করতে পারবেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন। জানা যায়, চা- শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে দৈনিক ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মজুরি চুক্তি অনুযায়ী চা-শ্রমিকদের বার্ষিক বোনাস ৯ হাজার ২৮২ টাকা। এর মধ্যে দুর্গা পূজায় ৬০ শতাংশ হিসাবে ৫ হাজার ৫৬৯.২০ টাকা এবং অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ ৩ হাজার ৭১২.৮০ টাকা উৎসব বোনাস পাওয়া কথা থাকলেও সকল শ্রমিকরা সমান হারে উৎসব বোনাস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন। তারা কর্মে উপস্থিতির উপর ভিন্ন ভিন্ন হারে বোনাস পাচ্ছেন। ডানকার্স বাদ্রার্স এর শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক সতরাম রবিদাস বলেন, দুর্গা পূজায় ৫ হাজার ৫৬৯.২০ টাকার স্থলে তিনি বোনাস পেয়েছেন মাত্র ২ হাজার ৩০০ টাকা। চন্দন রবিদাস পেয়েছেন ১ হাজার ১১৩ টাকা, সবুজ বাউরী, সোহেল উরিয়া ও শংকর রবিদাস পেয়েছেন ১ হাজার ১০০ টাকা হারে। চা বাগান শ্রমিকরা জানান, দৈনিক মাত্র ১৭০ টাকা মজুরিতে বর্তমান বাজারদরে যেখানে দু’বেলা ডাল-ভাত জুটানো দায়, সেখানে এই টাকায় পূজার আনন্দ উৎসব করা তো দুরের কথা। তার উপর চা-বাগান কর্তৃপক্ষ দুর্গা পূজা উপলক্ষে উৎসব বোনাস প্রদানেও ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চা-সেক্টরে ২০১০ সালের ৩০ মার্চ নিম্নতম মজুরির গেজেট (এসআরও নং ৮৯) এর ৫ (ক) নম্বরে বলা হয়েছে, চা শ্রমিকদের প্রতি বছর যেকোন প্রধান দু’টি ধর্মীয় উৎসবে বোনাস পাবেন। বাংলাদেশ শ্রম আইনের শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এর ১১১(৫) বিধি অনুযায়ী শ্রমিক কর্মচারীদের উৎসব বোনাস প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে শ্রমিক ইউনিয়নের চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের উৎসব বোনাস দিলেও সেটি উৎসাহ বোনাসের পর্যায়েই রয়েছে। চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক রাজদেও কৈরী বলেন, যে কোন সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সকল স্থায়ী শ্রমিক উৎসব বোনাস পেয়ে থাকেন এবং তা সবার জন্য সমান হয়। উৎসব বোনাস সকল শ্রমিকের সমান হয় এবং এর সাথে কর্মে উপস্থিতি বা উৎপাদনের কোন সম্পর্ক নেই। দ্বিপাক্ষিক চুক্তির কারনে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ দুর্গা পুজা উপলক্ষে উৎসব বোনাসের পরিবর্তে উৎসাহ বোনাস প্রদান করে চা শ্রমিকদের ঠকাচ্ছে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রাক্তন সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, চা বাগানে উৎসব বোনাস আছে, তবে উৎসাহ বোনাস নেই। এটা আসলে দীর্ঘ দিনের একটি ট্রেডিশন। আগে একটা নিয়ম ছিল ১৯০ দিনের নিচে এক টাকাও দেয়া হতো না। তবে সেখান থেকে পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। এনটিসি কোম্পানীর বাগানের ডিজিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা বাগান মালিক পক্ষের চুক্তি অনুযায়ী তাদের বোনাস প্রদান করা হচ্ছে। এই রেওয়াজটি দীর্ঘদিনের বলে তিনি দাবি করেন। কোম্পানি তাদের বোনাস প্রদান করে দিয়েছে। শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তর এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বলেন, চা শ্রমিকদের বোনাসের বিষয়ে মালিক পক্ষের সাথে চা শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি মোতাবেক বোনাস প্রদান করা হচ্ছে। তাদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে উৎসব বোনাসে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতির বিষয়টি সম্পৃক্ত রয়েছে। চা বাগানে উৎসাহ বোনাসের নিয়ম নেই। ফলে শ্রমিকরা সে হারেই বোনাস পাচ্ছেন। তবে আইনের কোথাও এরকম নেই। ইউনিয়নের চুক্তি অনুযায়ী তাদের বোনাস প্রদান করা হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন