ভারতের টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটা মারা গেছেন। বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মানে দাহ করা হবে বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
টাটা গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে রতন টাটার মৃতুর খবর নিশ্চিত করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রতন টাটা সত্যিই একজন অনন্য নেতা ছিলেন। তিনি শুধু টাটা গ্রুপই নয়, পুরো জাতি গঠনেও অবদান রেখেছেন।’
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেও কিংবদন্তি শিল্পপতি এবং সমাজসেবীকে সম্মান জানাতে বৃহস্পতিবার শোক ঘোষণা করেছেন।
রতন টাটার মৃত্যুতে মহারাষ্ট্রের সরকারি অফিসজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। বৃহস্পতিবারে নির্ধারিত অনেক অনুষ্ঠানই বাতিল করা হয়েছে।
রতন টাটার মরদেহ আজ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মুম্বাইয়ের নরিমান পয়েন্টের ন্যাশনাল সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টসে (এনসিপিএ) রাখা হবে। সেখানে লোকেরা শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।
পরদিন ওয়ারলি এলাকায় তার শেষকৃত্য করা হবে। ইতোমধ্যেই শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মুম্বাইয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টস-এনসিপিএতে নেয়া হয়েছে তার মরদেহ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসিয়ান-ভারত এবং পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে লাওসের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শেষকৃত্যে যোগ দেবেন।
রতন টাটার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক্স হ্যান্ডেলে রতন টাটার সঙ্গে একটি পুরোনো ছবি পোস্ট করে মোদী লিখেছেন,‘রতন টাটা ছিলেন একজন দূরদর্শী ব্যবসায়ী কর্ণধার, তার মন মমতায় পরিপূর্ণ ছিল এবং তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ।
ভারতের অন্যতম পুরোনো এবং অন্যতম সেরা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।’
রতন টাটা ছিলেন ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান টাটা গ্রুপের ইমেরিটাস চেয়ারম্যান। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ২১ বছর ধরে তিনি এ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। লবণ থেকে শুরু করে সফটওয়্যার, কী নেই টাটা গ্রুপের। বর্তমানে এই শিল্পগোষ্ঠীর শতাধিক কম্পানি আছে। সেসব কম্পানিতে প্রায় ছয় লক্ষ ৬০ হাজার কর্মী কাজ করেন। আর ১৫৫ বছর পুরনো টাটা গ্রুপের বার্ষিক আয় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।
রতন টাটা এতটাই নিয়মতান্ত্রিক ছিলেন যে সারাদিন তিনি কী কী করবেন, দিনের শুরুতেই হাতে লিখে সেই তালিকা তৈরি করতেন। তিনি নিজেকে ‘আশাবাদী’ মানুষ মনে করতেন। ২০০৯ সালে রতন টাটা একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে দেশ নিয়ে তার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন, ‘যেখানে প্রত্যেক ভারতীয়ের মেধার ভিত্তিতে বিকশিত হওয়ার সমান সুযোগ রয়েছে।’
এদিকে দ্রুতগামী গাড়ি এবং প্লেনের প্রতি রতন টাটার যেমন ভালোবাসা ছিল, ঠিক তেমন তিনি স্কুবা ড্রাইভিং-এও উৎসাহী ছিলেন। যদিও একটা বয়সের পর শারীরিক কারণে তিনি এটি করতে পারতেন না। তিনি একজন কুকুর প্রেমিকও ছিলেন। অনেক পোষা প্রাণীর কথা তার মনে ছিল, যারা তাকে কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে সঙ্গ দিয়েছে।
২০২১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে প্রয়াত এই শিল্পপতি বলেছিলেন, ‘পোষা প্রাণী হিসাবে কুকুরের প্রতি আমার ভালবাসা সবচেয়ে বেশি এবং যতদিন আমি বেঁচে থাকব ততদিন তা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবারই আমার পোষা প্রাণীর মধ্যে কোনও একটি মারা গেলে অবর্ণনীয় দুঃখ হয় এবং আমার মনে হয় যে আমি আর কোনও বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যেতে পারব না।’ ২০০৮ সালে ভারত সরকার দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ প্রদান করে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাটার মৃত্যু ভারতীয় ব্যবসায় একটি যুগের সমাপ্তি। যেখানে একজন ব্যক্তি দেশের শিল্পকে নতুন আকার দিয়েছিলেন। তিনি ছয়টি মহাদেশের ১০০ টিরও বেশি দেশে পরিচালিত ৩০টিরও বেশি কম্পানি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, তবুও টাটা নিরবচ্ছিন্ন জীবনযাপন করতেন। তার বিশাল প্রভাব এবং সাফল্য সত্ত্বেও, তিনি কখনোই বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় উপস্থিত হননি। ব্যক্তিত্বে প্রকাশ পেত শান্ত, সততা এবং শালীনতা।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন