সিলেটের ভারতীয় চিনিকাণ্ডে আটক দুই বিএনপি নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে দল। তারা হলেন- সিলেট মহানগরের ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান ও ২৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সোলেমান হোসেন সুমন।
দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করে চিনি চোরাচালানিতে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে স্থায়ী বহিস্কারাদেশ প্রদান করা হয়।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে ওসমানীনগর উপজেলাধীন সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সাদিপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে জনতার সহযোগিতায় ভারতীয় চোরাই চিনির ট্রাক ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে ৬ জনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে এই দুই বিএনপি নেতা ছিলেন।
আটকরা হলেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ সুরমার ভার্তখলা সোনালী-২২ বাসার মৃত দিলু মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নান (৪৩), সিসিকের ২৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ভার্থখলা রুপালি আবাসিক এলাকার ৪৫ নং বাসার মৃত ছানা মিয়ার ছেলে মো. সুলেমান হোসেন সুমন (৪২), সিলেটের শাহপরাণ থানার বটেশ্বর মলাইটিলা এলাকার মৃত করম আলীর ছেলে মনির আহাম্মেদ (৩২), জৈন্তাপুর বাঘেরখাল এলাকার মো. মনতাজ আলীর ছেলে তোফায়েল আহাম্মেদ (২৬), একই এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহাম্মেদ (২৫) এবং গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ৩য় খন্ডের মো. মঈন উদ্দিনের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৪২)।
অভিযানকালে পুলিশ চিনির চালান ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ২টি মোটরসাইকেল, একটি বক্সি গাড়ি, একটি নোহা মাইক্রোবাস ও চোরাই চিনি ভর্তি ট্রাক জব্দ করে।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, সিলেট সীমান্ত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ভারতীয় চোরাই চিনির ট্রাকটি সিলেট থেকে পিছু ধাওয়া করেন আটক বিএনপির দুই নেতাসহ অজ্ঞাত কয়েকজন। তারা শেরপুর এলাকায় পৌঁছার পর ট্রাকটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। জনতা বুঝতে পেরে তাদের আটক করে পুলিশকে খবর দেন। তখন আটক দু’জন নিজেদের বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা চিনির ট্রাকটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশে সিলেট নগর থেকে ধাওয়া করেন। পথিমধ্যে শেরপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে ট্রাকটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে শুরু হয় হট্টগোল। এমন সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে দুই বিএনপি নেতাকে আটক করতে সক্ষম হলেও অন্যরা গাড়ি রেখে পালিয়ে যান। তখন জনতা পুলিশকে খবর দিলে তাদের আটক করে জব্দকৃত গাড়িসহ থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক- তদন্ত) আরাফাত জাহান চৌধুরী সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটভিউ-কে বলেন- আটকদের বিরুদ্ধে এখনো মামলা দায়ের করা হয়নি, প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে, ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে আবদুল মান্নান ও মো. সোলেমান হোসেনকে সাময়ীক বহিষ্কার করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়- দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপ, দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা ও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে ২৫ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ সব পদ থেকে আব্দুল মান্নান ও সুলেমান হোসেন সুমনকে বহিষ্কার (সাময়ীকভাবে) করা হয়েছে।
অপরদিকে, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের নবগঠিত কমিটির সদস্য ছিলেন আব্দুল মান্নান ও সোলাইমান হোসেন সুমন। চিনিকাণ্ডের পর তাদের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব থেকেও অব্যাহতি প্রদান হয়েছে। সোমবার বিকালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক সোহেল আহমদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন