সিলেটে সড়কে ভোগান্তি, যা বললো সওজ বিভাগ

সিলেটের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ ) আওতাধীন সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে আছে। খানাখন্দে ভর্তি এসব সড়কে চলাচলকারীরা প্রতিদিন পোহান সীমাহীন ভোগান্তি। বিশেষ রোগীবাহী গাড়িরা পড়ে বেশি বিপাকে। রোগীদের হয় চরম কষ্ট।

 

 

 


এ অবস্থায় এসব সড়ক দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়েছেন সিলেটবাসী।


তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে- ভোগান্তি কমাতে সড়কের খারাপ হওয়া স্থানগুলোতে ইট ফেলে প্রাথমিক মেরামত করা হচ্ছে। পুরোপুরি সংস্কার করতে সময় লাগবে। 

 

 

সিলেটের বিভিন্ন স্থানে সড়কে দেখা গেছে- এখানে-সেখানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। একটু বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে জমে কাদাপানি। অনেক স্থানে পিচ উঠে গেছে, পিচ গলে হয়েছে বিপজ্জনক এবড়ো-খেবড়ো। বিশেষ করে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার থেকে রশিদপুর পর্যন্ত মহাসড়কে অন্তত ৫ ও চন্ডিপুল থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বরের মাঝামাঝি বাইপাসে আরও ৫-৬ কিলোমিটারের অবস্থা চরম পর্যায়ের খারাপ। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে লাখো মানুষ যান নিয়ে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে রয়েছেন অনেক রোগীও। তাদের পোহাতে সীমাহীন ভোগান্তি। ওই সড়ক দিয়েই ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু সড়কটি দিয়ে যান চলাচল করতে হচ্ছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা।


আবুল কালাম নামের এক অ্যাম্বলেন্সচালক  বলেন- গত সপ্তাহে ওসমানীনগর থেকে এক রোগী নিয়ে মহানগরের সোবহানীঘাট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আসছিলেন। পথিমধ্যে লালাবাজার ও বাইপাস সড়কে আসার পর ওই রোগীর চিৎকার বেড়ে যায় কষ্টে। 


দ্রুত এই রাস্তাগুলো মেরামতের দাবি জানান তিনি। 

 


স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণ সুরমার বাইপাস সড়কটি ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর এবারের কয়েক দফা বন্যায় এ সড়ক অনেকটা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 


অপরদিকে, সিলেট মহানগরের আওতাধীন লাউয়াই, গোয়াইপাড়া, তালতলা, কাজিরবাজার ও জিতু মিয়ার পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকায়ও সড়কের  বেহাল দশা। ওই সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে উঠে গেছে কার্পেটিং। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে বিশাল গর্তের। 


মহানরগরের পাঠানটুলা সড়কের আরসিসি ঢালাইয়ের কিছু অংশ ছাড়া বাকি অধিকাংশ সড়কজুড়ে খানাখন্দ। কোথাও ঢালাই উঠে গেছে। কোথাও সড়কের নিচ থেকে ভেঙে উঠে এসেছে কাঁচা মাটি।

 


পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাদির জানান, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যেতে গেলে গাড়ির অনেক ক্ষতি হয়। কয়েক দিন আগে তাঁর প্রাইভেট কার গর্তে পড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

মহানগরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মধ্যে একটি কালীঘাট। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মহাজনপট্টি-বন্দরবাজার লালদীঘি হয়ে কালীঘাট পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। একবার এ সড়ক দিয়ে গেলে কেউ দ্বিতীয়বার যেতে চান না।

 

 

কালীঘাটের পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী নির্মল পাল জানান, প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি এই সড়ক ব্যবহার করে। বিশেষ করে পাইকারি বাজার হওয়ায় বড় বড় ট্রাক আসে বাজারে। মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের সময়ে সড়ক মেরামতের দাবি তুলেছিলেন ব্যবসায়ীরা, কিন্তু কাজ হয়নি। এখন তো আরও খারাপ অবস্থা।

 

 

মিরাবাজার থেকে শিবগঞ্জ পর্যন্ত সড়কটির বেশকিছু অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোর্ট পয়েন্ট থেকে জিতু মিয়ার পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের অনেক স্থানেও কার্পেটিং উঠে গেছে। আবার কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্তের। বিশেষ করে তালতলা বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।


ধোপাদীঘির পাড়স্থ ওসমানী শিশুপার্কের সামনেও সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে গেছে। আম্বরখানা থেকে ইলেকট্রিক সাপ্লাই হয়ে টিলাগড় পর্যন্ত অন্তত দুই কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেশ বেহাল। সোবহানীঘাট থেকে উপশহর, জেলরোড, জিন্দাবাজার সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। 


একইভাবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোর অবস্থা আরও বেহাল। দীর্ঘদিন ধরে সড়কের সংস্কার না করায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ লোকজনকে।  

 

 

মহানগরের ভেতরের সড়কগুলোর সংস্কারের বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান- এসব সড়কে টেকসই উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৪৮৮ কোটি টাকা। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি  অনুমোদন পায়নি, পেলে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু হবে। 

 

 

সওজ বিভাগের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন সোমবার (১৪ অক্টোবর)  বলেন- পট পরিবর্তনসহ বিভিন্ন জটিলতায় আরও আগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোতে মেরামত কাজ শুরু করা যায়নি। দুই-আড়াই মাস আগে আমরা জরিপ করে এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য ২৮ কোটি টাকার বাজেট চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এখনো এর অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন হলে রয়েছে টেন্ডার প্রক্রিয়া। সব মিলিয়ে পুরোপুরি সংস্কার কাজ শুরু করতে কয়েক মাস লেগে যাবে। তবে মানুষের ভোগান্তি কমাতে আমরা গর্তে ভরা জায়গাগুলোতে ইট বিছিয়ে প্রাথমিক মেরামত করছি। মেশিন দিয়ে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবড়ো-খেবড়ো জায়গা। এই কাজ চলমান থাকবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন