কোন দিকে এগোচ্ছে ভারত-কানাডা সম্পর্ক

শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটছে। ভারতের পক্ষ থেকে সোমবার জানানো হয়েছিল, কানাডা থেকে ভারতীয় কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই তালিকায় ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় ভার্মাও রয়েছেন। একই সঙ্গে কানাডার ছয়জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে ভারত।

অন্যদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সে দেশের রাজধানী অটোয়ায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, তার সরকার কানাডা থেকে ছয়জন ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।

 

একই সঙ্গে হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহযোগিতা না করার জন্য ভারত সরকারকে দায়ী করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। ভারতের উদ্দেশ্যে কড়া সুরে বার্তাও দিয়েছেন তিনি। সেই বার্তায় ভারতকে ওই হত্যা মামলার তদন্তে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি ‘বিভ্রান্তিকর’ বক্তব্য বন্ধ করার কথা বলেছেন জাস্টিন ট্রুডো।

তিনি দাবি করেছেন, কানাডার মাটিতে ঘটা সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডে ভারত সরকারের এজেন্টদের জড়িত থাকার যে অভিযোগ রয়েছে, তার তদন্তে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেছে দিল্লি। তিনি বলেছেন, ‘কানাডার মাটিতে কানাডীয়দের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে—এই ভাবনা থেকেই ভারত একটা মৌলিক ভুল করেছে।’

 

ভারতের বিরুদ্ধে কানাডার রয়াল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) প্রধান মাইক ডুহমের তোলা অভিযোগের পরই একটা সাংবাদিক সম্মেলন করেন জাস্টিন ট্রুডো। আরসিএমপি প্রধান মাইক ডুহমে সোমবার অভিযোগ করেন, কানাডায় হত্যাসহ ‘বড় সড় সহিংসতার’ ঘটনায় ভারতের ভূমিকা রয়েছে।

যা সে দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর ঝুঁকির সামিল। গত বছর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেন, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার প্রমাণ আছে তাদের কাছে।

 

ভারতের পক্ষ থেকে কানাডার করা অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। কিন্তু সোমবার ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপরাধমূলক অভিযান চালানোর অভিযোগ তুলেছে কানাডা।

ভারতের সঙ্গে থাকা একটি ‘ডিপ্লোম্যাটিক কমিউনিকেশনের’ মাধ্যমে কানাডায় ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা ও অন্যান্য কূটনীতিকের বিরুদ্ধে ওই হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

 

এখন পর্যন্ত যা বলছে কানাডা
কানাডার মাটিতে সহিংসতার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো জানান, হত্যা, জোর জুলুম বা অন্য কোনো সহিংস কর্মকাণ্ড—যাই হোক না কেন, তা মেনে নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো দেশ, বিশেষত আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখা গণতন্ত্র তাদের সার্বভৌমত্বের এই মৌলিক লঙ্ঘন মেনে নিতে পারে না।’

সংবাদ সম্মেলনে জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘ভারতীয় কূটনীতিকদের কানাডার নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরসিএমপি।’ পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, এই তথ্য অপরাধী সংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছিল, যার ওপর ভিত্তি করে ‘মুক্তিপণ চাওয়া থেকে শুরু করে হত্যা পর্যন্ত একাধিক সহিংস কার্যকলাপ’ চালানো হয়েছে।

তবে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এই ঘটনায় কোনো কূটনীতিক বা হাইকমিশনের কর্মীর ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি। তার মতে, বিষয়টা বিচারাধীন। আইনি মামলা শেষ হলে এ বিষয়ে আরো তথ্য জানা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনের পাশাপাশি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার কার্যালয় থেকেও একটা বিবৃতি জারি করেছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আরসিএমপি এবং জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা ভারত সরকার ও ভারতীয় আইনি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার বহু চেষ্টা করলেও ভারত তা ক্রমাগত অস্বীকার করেছে। এই কারণেই কানাডা কর্তৃপক্ষ এমন নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা আরসিএমপির কাছে থাকা প্রমাণ ভাগ করে নেওয়ার জন্য ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই তালিকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ভারত সরকারের ছয়জন এজেন্টের জড়িত থাকার প্রমাণও সামিল রয়েছে।’

ভারতের হাইকমিশনসহ ছয়জন কূটনীতিককে বহিষ্কারের প্রসঙ্গে ট্রুডো বলেন, ‘কিন্তু ভারত সরকারকে বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও তারা সহযোগিতা না করার সিদ্ধান্ত নেয়। যেহেতু ভারত সরকার এখনো কোনোরকম সহযোগিতা করতে সম্মতি জানাচ্ছে না, তাই আমার সহকর্মী তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলির কাছে একটাই পথ খোলা ছিল।’ 

বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আজ (সোমবার) এই ছয়জনকে বহিষ্কারের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের কানাডা ছাড়তে হবে। তারা আর কানাডায় কূটনীতিক হিসেবে কাজ করতে পারবেন না এবং তা সে যে কারণেই হোক না কেন, কানাডায় পুনরায় প্রবেশও করতে পারবেন না। আমি এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই, আরসিএমপি যে প্রমাণ দিয়েছে তা কিন্তু কোনো মতেই উপেক্ষা করা যাবে না।’

পাশাপাশি কানাডার তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবারও আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। বিবৃতিতে তিনি দৃঢ় সুরে বলেছেন। ভারত সরকারের তদন্তে যোগ দেওয়া উচিৎ। শুধু তা-ই নয়, তদন্ত নিয়ে তাদের (ভারতের) ‘নিষ্ক্রিয়তা’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’ বক্তব্যও বন্ধ করা উচিৎ।

সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে অবস্থিত কানাডীয় মিশনের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক স্টুয়ার্ট হুইলারকে ভারতের পক্ষ থেকে তলব করা হয়েছিল। স্টুয়ার্ট হুইলার বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যা দাবি করে আসছিল ভারত, কানাডা তা পূরণ করেছে। কানাডার মাটিতে এক কানাডীয় নাগরিককে হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের সঙ্গে ভারতীয় এজেন্টের যোগসূত্রের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হস্তান্তর করেছে কানাডা। এখন ভারতের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পালা। এতে দুই দেশ ও জনগণের স্বার্থ জড়িত রয়েছে। কানাডা এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

ভারত কী বলছে?
এদিকে কানাডার অভিযোগ নস্যাৎ করে ভারত পাল্টা দাবি করেছে, কানাডা থেকে হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা ও অন্যান্য কূটনীতিকদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কানাডার ছয় কূটনীতিককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও নিয়েছে ভারত।

এই তালিকায় থাকা কূটনীতিক স্টুয়ার্ট রস হুইলার (ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার), প্যাট্রিক হেবার্ট (ডেপুটি হাইকমিশনার), মেরি ক্যাথরিন জলি (ফার্স্ট সেক্রেটারি), ইয়ান রস ডেভিড ট্রাইটস (ফার্স্ট সেক্রেটারি), অ্যাডাম জেমস চুইপকা (ফার্স্ট সেক্রেটারি), পলা অরজুয়েলাকে (ফার্স্ট সেক্রেটারি) ১৯ অক্টোবর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কানাডায় ভারতীয় হাইকমিশন ও অন্যান্য কূটনীতিকদেরকে ভিত্তিহীনভাবে নিশানা করা গ্রহণযোগ্য নয়। অভিযোগের স্বপক্ষে তেমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি কানাডা।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার সন্ধ্যায় বলেছে, ‘ট্রুডো সরকারের মনোভাবের কারণে ভারতীয় কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে। বর্তমান সরকারের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার কানাডা থেকে হাইকমিশনারসহ অন্যান্য কূটনীতিকদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা কানাডাকে জানিয়েছি, ট্রুডো সরকার যেভাবে ভারতবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদ ও চরমপন্থাকে সমর্থন করছে, তার জবাব দেওয়ার অধিকার ভারতের রয়েছে।’

নিজ্জর হত্যা মামলায় ভারতীয় হাইকমিশনারের নাম উল্লেখ করার প্রসঙ্গে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পুরো বিষয়টা এখন রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে, কারণ একাধিক ‘চ্যালেঞ্জের’ সঙ্গে জুঝছেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রবিবার আমরা কানাডার কাছ থেকে একটা কূটনৈতিক বার্তা পেয়েছি। সেখানে বলা হয়েছে, কানাডায় চলমান এক তদন্তে ভারতীয় হাইকমিশনার ও অন্যান্য কূটনীতিকদের জড়িত থাকার বিষয় উঠে এসেছে। ভারত সরকার বরাবরই এ জাতীয় ভিত্তিহীন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। কানাডার ট্রুডো সরকার ভোট পাওয়ার জন্য এসব করছে।’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কানাডায় ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মাকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, তিনি একজন কর্মরত জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক। ৩৬ বছরের ক্যারিয়ার তার। তিনি জাপান ও সুদানে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ভার্মা ইতালি, তুরস্ক, ভিয়েতনাম ও চীনেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে এই জাতীয় দোষারোপ ‘হাস্যকর’ এবং ‘অবমাননার’ সমান।

কোন দিকে এগোচ্ছে সম্পর্ক?
সোমবার রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কানাডার ছয়জন কূটনীতিককে বহিষ্কারের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে থেকে কিছু বলা হয়নি।

ভারত ও কানাডার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আর কোনো পশ্চিমা দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এতটা খারাপ হয়নি। কোল্ড ওয়ারের পর ভারত মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়েছে। ভারতের লক্ষ্য ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ বাজার অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার। জি৭ ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নেরও চেষ্টা করেছে ভারত। কানাডা এই উভয় গ্রুপের অংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশের অর্থনীতিও একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে খালিস্থানপন্থী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় ভারতীয় যোগ থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক এই ব্যক্তি এক সময় ‘শিখস ফর জাস্টিস’ নামে সংগঠনের মুখপাত্র ছিলেন। স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তান গঠনের প্রচারাভিযান চালানোর কারণে ভারত সরকার ওই সংগঠনকে ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে সেই সময় ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, পান্নুন ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছেন। ভারতের পক্ষ থেকে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের তদন্তের জন্য একটা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তৈরির ঘোষণা করা হয়। গত বছরই মার্কিন ফেডারেল আদালত নিখিল গুপ্তা নামের এক ভারতীয় নাগরিককে মার্কিন নাগরিক গুরপতবন্ত সিং পান্নুঙ্কে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখে এই মামলায় সতর্কতার সঙ্গে এগিয়েছে। অন্যদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে কানাডার তোলা অভিযোগকে কেন্দ্র করে ভারত ও সে দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুনভাবে অবনতি ঘটেছে।

পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আনন্দ সহাইয়ের মতে, ভারতীয় কর্মকর্তারা মনে করেন জাস্টিন ট্রুডো ২০২৫ সালের অক্টোবরে কানাডার সাধারণ নির্বাচনে হেরে যাবেন। এরপর নতুনভাবে সূচনা করার সুযোগ মিলবে। লেখক ও পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশ্লেষক ব্রহ্মা চেলানির মতে, বর্তমান সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, এক্সে তিনি লিখেছেন, কানাডা তার অতীত থেকে কিছুই শিখেনি বলে মনে হয়। এই প্রসঙ্গে তিনি ১৯৮৫ সালের এয়ার ইন্ডিয়া বোমা হামলার কথা উল্লেখ করেছেন, যে ঘটনায় ৩৩১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

কানাডার ওয়ার্ল্ড শিখ অর্গানাইজেশন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কানাডায় ভারতীয় হস্তক্ষেপের কথা বিশ্ব হয়তো আজ জানতে পেরেছে, কিন্তু তাদের কাছে এটা গত চার দশকের অভিজ্ঞতা।

কেন ভোটব্যাংকের রাজনীতির অভিযোগ?
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারি করা বয়ানে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সহিংস চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছেন, যারা কানাডায় ভারতীয় কূটনীতিক ও কমিউনিটি নেতাদের হুমকি দিচ্ছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নাম করে এসব হতে দিচ্ছে কানাডা সরকার। অবৈধভাবে কানাডায় প্রবেশ করা কিছু ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দিতে কোনোরকম বিলম্ব হয়নি। ভারতের পক্ষ থেকে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি কানাডা প্রত্যাখ্যান করেছিল, যাতে সন্ত্রাসীরা কানাডায় থাকতে পারে।’

কানাডার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ভারতের প্রতি বৈরিতার প্রমাণ মিলেছে। ২০১৮ সালে যখন তিনি ভারত সফরে এসেছিলেন, তখন তার লক্ষ্য ছিল নিজের ভোট ব্যাংক গড়ে তোলা। তার মন্ত্রিসভায় এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যারা প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী চরমপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী এজেন্ডার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ট্রুডোর সরকার এমন এক দলের ওপর নির্ভর করেছিল, যাদের নেতারা প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন করেছিলেন।’

প্রসঙ্গত, কানাডায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। কানাডার জনসংখ্যার ২.১ শতাংশ শিখ সম্প্রদায়ভুক্ত। গত ২০ বছরে কানাডায় শিখদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিক্ষা, ক্যারিয়ার, চাকরির মতো কারণে পাঞ্জাব থেকে কানাডায় পাড়ি দিয়েছেন। জাস্টিন ট্রুডো যখন তার প্রথম মেয়াদে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন, তখন সেখানে চারজন শিখ মন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ থেকেও ট্রুডো সরকারের কাছে শিখ সম্প্রদায়ের গুরুত্ব অনুমান করা যায়।

এদিকে গত ৪ সেপ্টেম্বর নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) নেতা জগমিত সিং জাস্টিন ট্রুডো সরকারের ওপর থেকে তার সমর্থন প্রত্যাহার করার ঘোষণা করেন। এনডিপির সমর্থন নিয়েই চলছিল ট্রুডোর সরকার। তবে এনডিপি থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেও সংসদে আস্থা প্রস্তাবে জয় লাভ করতে সক্ষম হন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো।

২০২৫ সালের অক্টোবরে কানাডায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। জাস্টিন ট্রুডো চান কানাডায় বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায় তাকে সমর্থন করুক। ২০১৫ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন তিনি। তবে ২০১৯ ও ২০২১ সালে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় অন্য দলের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে তার সরকার।

প্রসঙ্গত, জগমিত সিংয়ের দল এনডিপির সমর্থনে সরকার পরিচালনাকে ভালো চোখে দেখেনি ভারত। ভারতীয় বংশোদ্ভূত জগমিত সিংয়ের দল কানাডায় গত নির্বাচনে ২৪টি আসন জিতেছিল। কিংমেকারের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনডিপির নেতা হওয়ার আগে জগমিত সিং খালিস্তানের সমাবেশে যোগ দিতেন। একাধিকবার ভারতের সমালোচনা করেছেন তিনি।

ভারত-কানাডার সম্পর্কের অবনতি
হরদীপ সিং নিজ্জরকে ২০২৩ সালের ১৮ জুন একটি গুরুদ্বারের পার্কিং লটে গুলি করে হত্যা করা হয়। কানাডার ভ্যাংকুভারে গুরু নানক শিখ গুরুদ্বারের সভাপতিও ছিলেন তিনি।

ভারতের জলন্ধরের ভার সিং পুরা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন হরদীপ সিং নিজ্জর। ভারত সরকারের মতে, তিনি খালিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান ছিলেন। খালিস্তান টাইগার ফোর্সের সদস্যদের পরিচালনা, নেটওয়ার্কিং, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা করার বিষয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন হরদীপ সিং নিজ্জর।

নিজ্জর হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো কানাডার হাউজ অব কমন্সে বলেন, হরদীপ সং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ‘ভারত সরকারের সম্ভাব্য জড়িত থাকার অভিযোগ’ তদন্তাধীন। এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ভারত ৪০ জন কানাদীয় কূটনীতিকের কূটনৈতিক দায়মুক্তি বাতিল করে দেয়। এই কারণে কানাডীয় দূতাবাসের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কর্মীকে ভারত ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। সেই সময় ভারত জানিয়েছিল, কানাডা শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যে ‘ছাড়’ দেওয়া হয়েছে, তা শুধু ভারতের জন্যই নয়, কানাডার পক্ষেও হিতকর নয়।

২০২৪ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আরো একবার ওই হত্যা মামলায় ভারতীয় সংযোগের কথা উল্লেখ করেন। সেই সময়েও ভারত তীব্র আপত্তি জানিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন