দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে ডুবে ছিলেন আতিকুল ইসলাম

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে ঘিরে উঠে আসছে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ। দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। তার শাসনামলে সিটি কর্পোরেশনের নানান খাত থেকে অর্থ লুটপাট এবং আত্মীয়-স্বজনকে প্রভাবশালী পদে বসিয়ে ডিএনসিসিকে একটি পরিবারিক সিন্ডিকেটে পরিণত করার অভিযোগ উঠেছে। 

গতকাল ১৬ অক্টোবর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা থেকে আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা হত্যামামলায় তাকে আসামি করা হয়েছিল, পাশাপাশি আরও একাধিক মামলায় তার নাম রয়েছে।

 

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালে আতিকুল ইসলাম তার আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তিনি নগর ভবনে নিজের প্রভাব বিস্তার করেন। তার ভাতিজা এবং ভাগিনাদের বিভিন্ন প্রভাবশালী পদে বসিয়ে তারা সিটি কর্পোরেশনের ব্যবসা ও কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন।

 

 

এমনকি তার ভাগিনা তৌফিক ডিএনসিসির মধ্যে দ্বিতীয় মেয়র হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যার দাপটে অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চুপ থাকতে বাধ্য হতেন। এবং মেয়েকে ‘চিফ হিট অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। পারিবারিক সদস্যদের দিয়ে ডিএনসিসির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে নিয়ন্ত্রণ বসিয়ে সুবিধা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

ডিএনসিসিতে গাছ রোপণ এবং পরিবেশ উন্নয়নের নামে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যেখানে আতিকুল ইসলামের শ্যালিকার প্রতিষ্ঠান শক্তি ফাউন্ডেশনকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

কৃত্রিম বৃষ্টির নামে ঢাকার সড়কে পানি ছিটানোর একটি প্রকল্পেও লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় করার অভিযোগ রয়েছে। এসব প্রকল্পের পেছনে ছিল আতিকুলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা, যারা নগর কর্তৃপক্ষের সব কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতেন।

 

অন্যদিকে, সরকারি টাকায় মিটিং ও বোর্ড সভার নামে বিলাসবহুল রিসোর্টে আয়োজন এবং সেখানে অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে অর্থ লোপাট করার অভিযোগও ওঠে। ২০২৩ সালে ডিএনসিসির একটি বোর্ড সভার জন্য ৬৪ লাখ টাকার বেশি খরচ দেখানো হয়, যেখানে কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে নিয়ে বিলাসবহুল একটি রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হয় সভাটি।

সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম তার আত্মীয় চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে অনিয়ম এবং দুর্নীতির ঘটনা ঘটিয়ে ব্যাপক অর্থ লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জাতীয় শোক দিবস থেকে শুরু করে মেট্রোরেল উদ্বোধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে ভুয়া ভাউচার বানিয়ে বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এসব খাতে মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে কোটি কোটি টাকা, যা মূলত দুর্নীতির আড়ালে লোপাট করা হয়।

 

এরপর, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির ঘটনায় আতিকুল ইসলাম লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। তবে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতি লুটপাট হয়নি। সাবেক মেয়রের আত্মীয়রা দাপট দেখিয়ে জিম্মি করে রাখতেন কর্মকর্তাদের। সে সময় কেউ কোনো প্রতিবাদ বা কথা বলতে পারেননি। লুটপাটে সহযোগিতা না করলে বদলি ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

আতিকুল ইসলাম ২০১৯ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচনে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন। তবে মেয়র হিসেবে তার ভূমিকা নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিতর্ক এবং অভিযোগের প্রেক্ষিতে জনগণের আস্থা হারান।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন